তাপদাহের মধ্যে দাবানল নেভাতে লড়ছে ফ্রান্স, স্পেন ও পর্তুগাল

তীব্র তাপদাহে পুড়ছে ইউরোপ। তারমধ্যেই স্পেন, গ্রিস ও ফ্রান্সসহ দক্ষিণ ইউরোপজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে দাবানল। ওইসব অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে।

>>রয়টার্স
Published : 17 July 2022, 05:11 PM
Updated : 17 July 2022, 05:11 PM

স্পেনে হেলিকপ্টার থেকে আগুনে পানি ছিটানো হচ্ছে। পাহাড়ি অঞ্চলগুলোতে ফায়ারফাইটারদের জন্য আগুন নেভানোর কাজ কঠিন হয়ে পড়ছে।

দেশটির আবহাওয়া অধিদপ্তর রোববার দেশজুড়ে তীব্র তাপদাহের সতর্কতা জারি করেছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, দেশের উত্তরের আরাগন, নাভারা এবং লা রিওজা অঞ্চলে তাপমাত্র সর্বোচ্চ ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত পৌঁছে যেতে পারে।

সোমবারের পর তাপদাহের তীব্রতা কিছুটা কমে আসলেও ‘তা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি’ থাকবে।

গত এক সপ্তাহ ধরে স্পেনে তাপদাহ বিরাজ করছে। ওই সময়ে তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ৪৫ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত রেকর্ড করা হয়েছে।

শনিবার রাতে দাবানল মালাগা প্রদেশে ছড়িয়ে পড়ে। যার প্রভাব পড়েছে কাছের শহর মিজাসে। উত্তর ইউরোপের পর্যটক প্রিয় শহরগুলোর একটি মিজাস।

আগুন যুক্তরাজ্যেও ছড়িয়েছে। দেশটির অবসরভোগী উইলিয়াম এবং এলেন ম্যাককার্ডি দম্পতিকে শনিবার প্রাণ বাঁচাতে দ্রুত নিজেদের বাড়ি ছাড়তে হয়। তাদের স্থানীয় স্পোর্টস সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে দাবানল থেকে উদ্ধার করা আরো মানুষকে রাখা হয়েছে।

৬৮ বছলের উইলিয়াম বলেন, ‘‘আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছিল...তারপরও আমি বিষয়টি অতটা গুরুত্বের সঙ্গে নেইনি। আমি ভেবেছিলাম তারা আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। তাই সেটি যখন সরাসরি আমাদের বাড়ির দিকে এগিয়ে আসতে শুরু করে আমি কিছুটা অবাকই হয়েছিলাম। তারপর আমাদের সরে যেতে বলা হয়। পেছনে অনেক জিনিস ফেলে আমাদের বাড়ি থেকে চলে আসতে হয়েছে।”

এলেন বলেন, ‘‘আমরা শুধুমাত্র কয়েকটি প্রয়োজনীয় জিনিস সঙ্গে নিতে পেরেছি এবং বলতে গেলে দৌড়ে পালিয়ে এসেছি। ওই সময় রাস্তায় যারা ছিল সবাই দাবানল থেকে বাঁচতেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছিল।”

তীব্র তাপদাহের কারণে যুক্তরাজ্যর ইতিহাসে প্রথমবারের মত ‘রেড অ্যালার্ট’ জারি করা হয়েছে।

ফ্রান্সে এখন দাবানল দক্ষিণপশ্চিমের জিহোঁদ অঞ্চলে ১১ হাজার কিলোমিটারের বেশি এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে ১৪ হাজার বেশি মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে রোববার বিকালে জানান স্থানীয় কর্মকর্তারা।

১২শ’র বেশি ফায়ারফাইটার আগুন নিয়ন্ত্রণে দিনরাত এক করে কাজ করে যাচ্ছেন।

পর্তুগালে ফায়ারফাইটাররা দেশের মধ্য ও উত্তরাঞ্চলে পাঁচটি বন এবং গ্রামাঞ্চলে দাবানল নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। সবচেয়ে বড় আগুনটি জ্বলছে উত্তরের নগরী শ্যাভেজের কাছে।

দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, শনিবার রাত পর্যন্ত শেষ সাত দিনে সেখানে তাপদাহ জনিত কারণে ৬৫৯ জন মারা গেছেন। তাদের বেশিরভাগই বয়স্ক মানুষ।

পর্তুগালে বেশ কয়েকটি অঞ্চলে তাপমাত্র ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গেছে। দেশের মধ্যাঞ্চলে ভিজেউ জেলার একটি আবহাওয়া স্টেশনে তাপমাত্রা ৪৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস দেখিয়েছে।

দাবানল ছাড়াও এবং চলমান তাপদাহের আগে পর্তুগালে মারাত্মক খরা দেখা দেয়। জুনের শেষ দিক থেকে পর্তুগালের ৯৬ শতাংশ অঞ্চল ভয়াবহ বা মারাত্মক খরার কবলে পড়েছে।

শনিবার গ্রিসের অগ্নিনির্বাপক বাহিনী জানায়, ২৪ ঘণ্টায় সেখানে ৭১টি জায়গায় আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। বনে এবং ক্ষেতে ছড়িয়ে পড়া ওই আগুন নিয়ন্ত্রণে দেড়শতাধিক ফায়ারফাইটার কাজ করছেন। ঝড়ো বাতাসে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে।