কে হচ্ছেন জনসনের উত্তরসূরি?

দলের ভেতর নানা টানাপড়েন সামাল দিতে ব্যর্থ বরিস জনসন যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির প্রধানের পদ থেকে সরে গেছেন। নিয়মরক্ষার সময়টুকু পার হলে তিনি আর প্রধানমন্ত্রীও থাকবেন না।

>>রয়টার্স
Published : 7 July 2022, 05:20 PM
Updated : 7 July 2022, 05:23 PM

জনসনের স্থলাভিষিক্ত কে হচ্ছেন এখন তা নিয়ে চলছে আলোচনা। আন্তর্জাতিক সংবাদমধ্যমগুলোতে কয়েকটি নাম এলেও কেউই স্পষ্টত এগিয়ে নেই। তাহলে সম্ভাবনাময় প্রার্থী কারা?

কনজারভেটিভ এমপি এবং মন্ত্রীদের বেশিরভাগই এখনও বলেননি যে, তারা দলের নেতা এবং দেশের প্রধানমন্ত্রী হতে চান কিনা। কিন্তু তাদের মধ্যেই আছেন কিছু সম্ভাবনাময় প্রার্থী। তবে এই প্রার্থীরা ছাড়া অন্যরাও প্রতিদ্বন্দ্বিতায় উপরে উঠে আসতে পারেন।

সম্ভাবনাময় প্রার্থী যারা

লিজ ট্রাস

যুক্তরাজ্যের বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রাস। দলের তৃণমূল পর্যায়ে যিনি ব্যাপক জনপ্রিয়। কনজারভেটিভ হোম ওয়েবসাইটে দলের সদস্যদের মধ্যে হওয়া জনমত জরিপে ট্রাস নিয়মিত সবার উপরে থাকেন বলে জানায় বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

৪৬ বছরের এ নেতা গত বছর সেপ্টেম্বর থেকে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। ব্রেক্সিটের পর ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে যুক্তরাজ্যের সম্পর্ক পুনর্গঠনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। যদিও শুরুতে তিনি ব্রেক্সিটের বিপক্ষে ছিলেন। কিন্তু গণভোটের রায়ের পর নিজের মন পরিবর্তন করেছেন বলে জানিয়েছিলেন তিনি।

বরিস জনসনকে জোরালো সমর্থন দিয়ে যাওয়া ট্রাস গত সোমবারও বলেছিলেন, জনসনের প্রতি তার ‘শতভাগ সমর্থন আছে’। তিনি সহকর্মীদের প্রতিও জনসনকে সমর্থন দিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন।

জেরেমি হান্ট

সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরেমি হান্ট ২০১৯ সালে দলীয় প্রধান হওয়ার নির্বাচনে জনসনের কাছে হেরে গিয়েছিলেন। বিতর্কিত জনসনের এভাবে চলে যাওয়ার পর তিনি দলকে আরো রাশভারী এবং কম বিতর্কিত স্টাইলের নেতৃত্বের প্রস্তাব দিতেই পারেন।

আর তার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ইচ্ছা যে ‘একেবারে শেষ হয়ে যায়নি’ সে কথা তিনি এ বছরের শুরুতে আরেকবার স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন।

বেন ওয়ালেস

প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস সম্প্রতি দলের ভেতর জনপ্রিয়তায় কনজারভেটিভ পার্টির সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা লিজ ট্রাসকেও টেক্কা দিচ্ছেন। অন্তত কনজারভেটিভ হোম ওয়েবসাইটের জনমত জরিপ সে কথা বলছে।

ইউক্রেইন সংকট নিয়ে তার কঠোর অবস্থানই এর কারণ বলে ধরে নেয়া হয়।

তালেবান পুনরায় আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের পর সেখান থেকে যুক্তরাজ্যের নাগরিকদের নিরাপদে সরিয়ে আনার ক্ষেত্রে ওয়ালেসের ভূমিকা বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছে।

সাবেক আর্মি ক্যাপ্টেন ওয়ালেস ২০০৫ সালে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্য হন, এর আগে অবশ্য স্কটিশ পার্লামেন্টের সদস্য ছিলেন। ২০১৫ সালে ডেভিড ক্যামেরন সরকারের জুনিয়র মন্ত্রী থেকে ২০১৯ সালে যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পদে পদোন্নতি পান ৫২ বছর বয়সী এ নেতা।

ঋষি সুনাক

ভারতীয় বংশোদ্ভূত ৪২ বছর বয়সী এ নেতা একসময় বরিস জনসনের উত্তরসূরি হওয়ার দৌড়ে সবার চেয়ে এগিয়ে ছিলেন। কোভিড-১৯ ‍মহামারীর সময় শিল্প প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি কর্মীদের জন্য হাজার কোটি পাউন্ডের প্রণোদনা দেওয়ায় ঘরে ঘরে পৌঁছে গিয়েছিল সদ্য পদত্যাগী ব্রিটিশ অর্থমন্ত্রীর নাম।

তবে চলতি বছরের শুরুর দিকে তার ধনী স্ত্রীর অ-আবাসিক ট্যাক্স স্ট্যাটাস এবং জনসনের সঙ্গে লকডাউনের সময় নিয়ম ভাঙায় তারও জরিমানা হওয়া তার ইমেজকে খানিকটা নষ্ট করেছে।

গত বছর দেয়া তার করের আয়ের উপর নির্ভরশীল বাজেট যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের উপর ১৯৫০ এর দশকের পর সবথেকে ভারি করের বোঝা চাপিয়ে দিয়েছে। অথচ, সুনাক সবসময় কর কম করার পক্ষে কথা বলেছেন।

সাজিদ জাভিদ

কনজারভেটিভ পার্টির একজন এমপির বিরুদ্ধে উঠা যৌন নিপীড়নের অভিযোগ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী জনসন জনগণকে ভুল পথে পরিচালিত করেছেন এমন কথা বলে এর প্রতিবাদে তার মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করা প্রথম মন্ত্রী সাজিদ জাভিদ।

 তিনি জনসনের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ছিলেন। যুক্তরাজ্য সরকারের আরও ছয়টি মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্ব দেওয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে তার।

সাবেক ব্যাংকার সাজিদ সব সময় মুক্ত বাণিজ্যের পক্ষে কথা বলেছেন। ২০২০ সালে তিনি জনসনের অর্থ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে পদত্যাগ করেন।

পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত সাজিদ ২০১৯ ‍সালে কনজারভেটিভ পার্টির নেতা নির্বাচনের দৌড়ে চতুর্থ হয়েছিলেন।

নাদিম জাহাবি

সদ্যই যুক্তরাজ্যের চ্যান্সেলরের দায়িত্ব পাওয়া নাদিম জাহাবি ভ্যাকসিন মন্ত্রী হিসেবে যুক্তরাজ্যজুড়ে বেশ প্রশংসা পেয়েছেন। তার নেতৃত্বেই বিশ্বের মধ্যে যুক্তরাজ্যে সবথেকে দ্রুত গতিতে কোভিড টিকা দেওয়া হয়।

গত মঙ্গলবার অর্থমন্ত্রী ঋসি সুনাক পদত্যাগ করার পর অর্থমন্ত্রীর পদ নাদিম জাহাভিকেই দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। জাহাভি এর আগে শিক্ষা সচিব হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

ইরাকের এক কুর্দি পরিবারে জন্ম নেওয়া নাদিম দেশটির সাবেক স্বৈরাশাসক সাদ্দাম হোসেনের আমলে দেশে ছেড়ে শরণার্থী হিসেবে যুক্তরাজ্যে আসেন। তখন ঠিকমত ইংরেজি বলতে না পারা শিশুটিই কঠোর পরিশ্রম আর বুদ্ধিমত্তার জোরে আজ যুক্তরাজ্যের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ এক নাম।

২০১০ সালে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে প্রবেশের আগে পাঁচ বছর জনমত জরিপ ফার্ম ‘ইউগভ’ এর প্রধান নির্বাহী হিসেবে দায়িত্ব সামলেছেন। তেল শিল্পে কাজ করার অভিজ্ঞতাও রয়েছে ৫৫ বছর বয়সী এ নেতার।

পেনি মর্ডান্ট

কনজারভেটিভ পার্টির সবচেয়ে জনপ্রিয় এমপিদের একজন পেনি মর্ডান্ট। প্রধানমন্ত্রী হয়েই জনসন যাকে প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে বরখাস্ত করেছিলেন। বর্তমানে জুনিয়র বাণিজ্যমন্ত্রী মর্ডান্ট লকডাউনের মধ্যে জনসনের মদেরপার্টির ঘটনাকে ‘লজ্জাজনক’ বলেছিলেন।

এছাড়াও আছেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি প্যাটেল, অ্যাটর্নি জেনারেল সুয়েলা ব্রেভারম্যান, পরিবহন মন্ত্রী গ্র্যান্ট শ্যাপস এবং পার্লামেন্ট সদস্য টম টুগেনডাট। পার্লামেন্টের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান টম একজন সাবেক সেনা। ইরাক এবং আফগানিস্তানে লড়েছিলেন তিনি।

দলের যে কোনও নেতৃত্বের প্রতিযোগিতায় লড়বেন বলে এরই মধ্যে ইঙ্গিত দিয়েছেন টম। তিনি জনসনের নিয়মিত সমালোচক ছিলেন। তাই টম নেতা হলে স্পষ্টতই তা আগের সরকারের মতো হবে না। তবে টম এর আগে কখনও মন্ত্রিসভায় ছিলেন না বলে তিনি অন্যদের মতো ততটা পরিক্ষীত ব্যক্তিত্ব নন।