প্রধানমন্ত্রী পদে টিকে থাকার লড়াইয়ে বরিস জনসন

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের উপর আস্থা হারিয়ে তার মন্ত্রিসভার একের পর এক মন্ত্রী এবং শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তারা পদত্যাগ করছেন। এ অবস্থায় টিকে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন জনসন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 July 2022, 02:25 PM
Updated : 6 July 2022, 02:25 PM

তবে তার ভাগ্যে শেষ পর্যন্ত কী আছে তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। কেউ কেউ প্রধানমন্ত্রী জনসনের শেষ দেখতে পাচ্ছেন।

মঙ্গলবার খানিকটা হঠাৎ করেই পদত্যাগের ঘোষণা দেন জনসন সরকারের দুই জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাক এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ। বিবিসি জানায়, তাদের সরে দাঁড়ানোর ঘোষণার পর যেন পদত্যাগের হিড়িক শুরু হয়।

সঙ্গে সঙ্গেই আরো ছয়মন্ত্রী পদত্যাগ করেন। তারা হলেন, শিশু বিষয়ক মন্ত্রী উইল কুইন্স, স্কুল বিষয়ক মন্ত্রী রবিন ওয়াকার, বিচারমন্ত্রী ভিক্টোরিয়া অ্যাটকিন্স, অর্থ বিষয়ক মন্ত্রী জন গ্লেন এবং দুই জুনিয়র মন্ত্রী লরা ট্রট ও ফেলিসিটি বুচান।

এভাবে একদিনেই জনসন সরকারের মোট ১৬ মন্ত্রী-এমপি পদত্যাগ করেন। বুধবার সকাল পর্যন্ত পদত্যাগ করেন মন্ত্রীরাসহ সরকারের নানা পর্যায়ের আরও কমকর্তা। পদত্যাগের এই ঢেউ চলছেই। মঙ্গলবার থেকে এ পর্যন্ত মোট ২৭ জন মন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন বলে জানিয়েছে বিবিসি।

শিশু বিষয়ক মন্ত্রী উইল কুইন্স তার পদত্যাগপত্রে লিখেছেন, পদত্যাগ করা ছাড়া তার সামনে ‘বিকল্প কোনো পথ খোলা ছিল না’।

ঋষি সুনাকের পদত্যাগের পর নতুন অর্থমন্ত্রী হয়েছেন নাদিম জাহাবি। তিনি আগে শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন। নাদিম দলের মন্ত্রী-এমপিদের একজোট থাকার আহ্বান জানিয়েছেন

গত তিন বছরের মধ্যে নাদিম যুক্তরাজ্যের চতুর্থ অর্থমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর চিফ অব স্টাফ স্টিভ বার্কলেই কে করা হয়েছে স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

এ বছরের শুরুতে ক্রিস পিনচারকে ডেপুটি চিফ হুইপের পদে নিয়োগ দেন জনসন। তার এই সিদ্ধান্ত নিয়ে দলের অনেকেরই তখন আপত্তি ছিল।

জনসন স্বীকার করেছেন, তার ওই সিদ্ধান্ত ‘খারাপ ভুল’ ছিল। পিনচারের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ আছে এমন কথা জানা সত্ত্বেও জনসন পিনচারকে ডেপুটি চিফ হুইপ করেন।

একের পর এক মন্ত্রীর পদত্যাগের পর মন্ত্রিসভা পুনর্গঠনের মাধ্যমে জনসন সরকার টিকিয়ে রাখার জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু তার এই চেষ্টা কতটা কার্যকরে হবে তা নিয়ে সংশয় আছে।

লকডাউনের মধ্যে নিজের কার্যালয়ে মদেরপার্টি করাসহ নানা কেলেঙ্কারিতে নিজের ইমেজ নিয়েও বেকায়দায় রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী জনসন।

কনজারভেটিভ এমপি ও সাবেক চিফ হুইপ অ্যান্ড্রু মিচেল প্রধানমন্ত্রী জনসনের ‘শেষ’ দেখতে পাওয়ার কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার মতো চরিত্র বা মেজাজ–মর্জি কোনোটাই তার নেই। এখন শুধু একটিই প্রশ্ন, ঘটনা কত দূর গড়াবে।’’

মদেরপার্টি এবং কর বাড়ানো নিয়ে জনসনের সঙ্গে পার্লামেন্টে কনজারভেটিভ দলের ব্যাকবেঞ্চারদের সম্পর্কেরও অবনতি হয়েছে। যদিও মাত্র গত ‍মাসেই পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটে টিকে যান জনসন।

তাই আগামী এক বছর দল থেকে তার প্রতি আর অনাস্থা প্রস্তাব তোলা যাবে না। যদিও নিয়মে কিছু সংশোধন এনে কোনো কোনো বিদ্রোহী টোরি এমপি তার আগেই জনসনের বিরুদ্ধে আনাস্থা প্রস্তাব তুলতে আগ্রহী।

যদি সত্যিই জনসনকে প্রধানমন্ত্রীত্ব ছাড়তে হয় তবে তার স্থলাভিষিক্ত হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে আছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রাস।

যেভাবে চলে যেতে হতে পারে জনসনকে;

· এক বছরের জন্য জনসনের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব না তোলার নিয়ম পার্টি নেতারা পরিবর্তন করতে পারলে বিদ্রোহী টোরি এমপিরা এই গ্রীস্ম শেষে কিংবা শরতেই আবার তাকে ক্ষমতা থেকে সরানোর চেষ্টা নিতে পারেন।

· অনাস্থা ভোটে হেরে গেলে জনসনকে পদত্যাগ করতে হবে কিংবা নতুন নির্বাচন ডাকতে হবে।

· অন্যথায়, মন্ত্রিসভার চাপে নিজে থেকেই জনসনকে পদত্যাগ করতে হবে, অনেকটা মার্গারেট থ্যাচারের মতো। কিংবা আবার মন্ত্রীদের আরেকদফা পদত্যাগের ঢেউয়ের পর জনসনকে চলে যেতে হবে।

গত মাসে দুটো পার্লামেন্টারি আসনের উপনির্বাচনে কনজারভেটিভ পার্টির পরাজয়ের পর প্রধানমন্ত্রীর ওপর পদত্যাগের জন্য চাপ আরও বেড়েছে। উপনির্বাচনে দলের হারের পরই ইস্তফা দেন কনজারভেটিভ পার্টির চেয়ারম্যান। জনসন তখনও ইস্তফা দিতে নারাজ ছিলেন।

কনজারভেটিভ এমপি এন্ড্রু ব্রিগেন বিবিসি-কে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ করা উচিত। তা যদি তিনি না করেন তাহলে দল তাকে সরে যেতে বাধ্য করবে। সেক্ষেত্রে ১৯২২ কমিটি টালমাটাল অবস্থায় থাকা প্রধানমন্ত্রীকে সরাতে পদক্ষেপ নেবে।

১৯২২ নির্বাহী কমিটির সদস্য বব ব্ল্যাকম্যান বলেন, এই নির্বাহী দলে পরিবর্তন আনতে নির্বাচন করা হবে পার্লামেন্টের গ্রীস্মকালীন অবকাশের আগেই। অর্থাৎ দুই সপ্তাহ সময়ের মধ্যে। বাধ্যতামূলকভাবে নেতৃত্বের শাসন পরিবর্তন করতে টোরি দলের বিদ্রোহীরা নির্বাচনের এ পদক্ষেপ নিতে ইচ্ছুক।

ওদিকে, বিরোধীদল লেবার পার্টির নেতা কির স্টারমার বলেছেন, তিনি আগাম নির্বাচনকে স্বাগত জানাবেন। দেশের এখন দরকার সরকার পরিবর্তন। তিনি বলেন, “সব দুর্নীতি, সব ব্যর্থতার পর এটি স্পষ্ট যে, এই টোরি (কনজারভেটিভ) সরকার এখন পতনের মুখে আছে।”

যুক্তরাজ্যে পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে ২০২৪ সালে। কিন্তু জনসন তার ক্ষমতাবলে নির্বাচন ডাকলে তা হতে পারে আরও আগেই। লিবারেল ডেমোক্র্যাটস (লিব ডেম) নেতা ডেভি বিবিসি-কে বলেছেন, কনজারভেটিভ দলের এখন উচিত “স্বাদেশিক কর্তব্য” পালন করা এবং “আজই বরিস জনসন থেকে নিস্কৃতি পাওয়া।”