অস্ট্রেলিয়ায় বন্যার অবনতি, সিডনি থেকে সরছে আরও কয়েক হাজার

অস্ট্রেলিয়ার পূর্ব উপকূলে মুষলধারে বৃষ্টি অব্যাহত আছে, এতে সিডনি শহরের বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 July 2022, 06:05 AM
Updated : 5 July 2022, 06:06 AM

নদীগুলোর পানি দ্রুত বেড়ে বিপৎসীমা ছাড়িয়ে যাওয়ার পর মঙ্গলবার নগরীটির আরও কয়েক হাজার বাসিন্দাকে বাড়ি ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়, জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পূর্ব উপকূলীয় নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের প্রায় ৫০ হাজার বাসিন্দাকে হয় বাড়ি ছাড়ার নয়তো তাদের বাড়ি ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হতে পারে এমনটি জানানো হয়েছে। এদের অধিকাংশই সিডনির পশ্চিমাংশের বাসিন্দা।

এর আগে সোমবার ওই অঞ্চলের ৩০ হাজার বাসিন্দাকে এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।

নিউ সাউথ ওয়েলসের মুখ্যমন্ত্রী ডমিনিক পেরোটেট সাংবাদিকদের বলেছেন, “অনুগ্রহ করে আত্মতুষ্টিতে ভুগবেন না, এই দুর্যোগ শেষ হতে অনেক সময় লাগবে। আপনি যেখানেই থাকুন, আমাদের রাস্তাগুলোতে গাড়ি চালানোর সময় সতর্ক থাকবেন। এখনও হড়কা বান হওয়ার যথেষ্ট ঝুঁকি আছে।”

ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার আবহাওয়া ব্যুরো জানিয়েছে, উপকূলীয় নিম্নচাপটি উত্তরদিকে চলে যাওয়ায় মঙ্গলবার থেকে সিডনিতে বৃষ্টি ও ঝড়ো আবহাওয়ার প্রকোপ কমে আসতে পারে। এই নিম্নচাপের প্রভাবে কোথাও কোথাও তিন দিনে এক বছরের সমপরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে।   

তবে সর্বশেষ প্লাবনের আগে থেকেই অধিকাংশ নদীখাতগুলো পানিতে প্রায় পূর্ণ থাকায় পুরো সপ্তাহজুড়েই বন্যার ঝুকি বিদ্যমান থাকতে পারে বলে জানিয়েছে তারা।

শনিবার থেকে কিছু অঞ্চলে ৮০০ মিলিমিটারেরও বেশি বৃষ্টি হয়েছে, যা অস্ট্রেলিয়ার বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতকে (প্রায় ৫০০ মিলিমিটার) ছাড়িয়ে গেছে। 

মঙ্গলবার থেকে নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের মধ্যউত্তর উপকূলজুড়ে ছয় ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে প্রায় ৯০ মিলিমিটারেরও বেশি বৃষ্টি হতে পারে, আবার কোথাও কোথাও তা ১২৫ মিলিমিটারেও পৌঁছে যেতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া ব্যুরো।

বন্যাকবলিত বেশ কয়েকটি এলাকায় ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৯০ কিলোমিটার (ঘণ্টায় ৫৬ মাইল) বেগে ঝড়ো হওয়া বয়ে যেতে পারে এবং এ সময় গাছ উপড়ে পড়ার ও বৈদ্যুতিক লাইন ছিঁড়ে পড়ার ঝুঁকি দেখা দিতে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছে।

রাজ্যটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী স্টেফ কুক বলেছেন, “আমরা সিডনির বাসিন্দাদের আজ বাসায় থাকার অনুরোধ জানাচ্ছি, অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে যাবেন না।” 

ছবি: রয়টার্স

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সিডনির উপকূলে একটি মালবাহী জাহাজ অচল হয়ে পড়ার পর জরুরি বিভাগের কর্মীরা উত্তাল সাগরের সঙ্গে লড়াই করে তাদের উদ্ধার অভিযান চালিয়ে যাচ্ছেন। এর আগে টাগবোট দিয়ে জাহাজটিকে টেনে আনার চেষ্টার সময় খারাপ আবহওয়ার মধ্যে টো লাইন ছিঁড়ে যায়।

আবহাওয়া ব্যুরোর ভাষ্য অনুযায়ী, সিডনির পশ্চিমাংশের উইন্ডসরে বড় ধরনের বন্যা হচ্ছে, এটি চলতি বছরের তৃতীয় ও সবচেয়ে মারাত্মক বন্যা। 

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসা ফুটেজে পানিতে ডুবে থাকা রাস্তা ও সেতু দেখা গেছে, পাশাপাশি জরুরি বিভাগের কর্মীদের দ্রুত বাড়তে থাকা পানিতে আংশিক ডুবে যাওয়া বেশ কয়েকটি গাড়ি থেকে লোকজনকে বের করে আনতেও দেখা গেছে। 

অস্ট্রেলিয়ার অর্থমন্ত্রী জিম শালমার্স সতর্ক করে বলেছেন, অর্থনীতির ওপর এই বন্যার প্রভাব ‘উল্লেখযোগ্য হবে’।

বন্যায় বেশ কিছু খাদ্য উৎপাদি অঞ্চল ডুবে যেতে পারে আর তাতে সরবরাহে ঘাটতি তৈরি হয়ে মূল্য বৃদ্ধি পেতে পারে বলে সতর্ক করেছেন তিনি।

সোমবার রাতে অস্ট্রেলিয়ার কেন্দ্রীয় সরকার এ বন্যাকে একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা করেছে। এতে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জরুরি তহবিল থেকে সহায়তা পাওয়া সহজ হবে বলে রয়টার্স জানিয়েছে।