ইউক্রেইনের সেনা প্রত্যাহার, লিসিচ্যাংস্কে বড় জয় রাশিয়ার

ইউক্রেইন পূর্বাঞ্চলীয় দনবাসের লিসিচ্যাংস্ক শহর থেকে সেনা প্রত্যাহারের পর ‍‍লুহানস্ক অঞ্চলের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার দাবি করেছে রাশিয়া।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 July 2022, 07:17 AM
Updated : 4 July 2022, 07:17 AM

মস্কো তাদের ভাষায় ইউক্রেইনে যে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ চালাচ্ছে, তার অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে দনবাস থেকে কিইভের বাহিনীগুলোকে তাড়িয়ে সেখানকার দুটি প্রদেশকে পুরোপুরি রাশিয়াসমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হাতে তুলে দেওয়া।

লুহানস্ক ও প্রতিবেশী দোনেৎস্ক মিলেই শিল্পসমৃদ্ধ দনবাস অঞ্চল; লিসিচ্যাংস্ক বাদে লুহানস্কের বাকি অংশ আগেই দখলে নিয়েছিল রাশিয়া ও তার রুশভাষী ইউক্রেইনীয় মিত্ররা। লুহানস্কের শেষ অবস্থান লিসিচ্যাংস্ক থেকে রোববার ইউক্রেইন সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণার মধ্য দিয়ে ক্রেমলিনের একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হাসিল হল।

লুহানস্কের শেষ ঘাঁটি থেকে সৈন্য সরিয়ে নিলেও ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ফের হারানো সব ভূমি পুনরুদ্ধারের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

রোববার ইউক্রেইন বলেছে, কৌশলগত এ প্রত্যাহার সেনাদের জীবন বাঁচাবে, যারা ফের সংঘটিত হয়ে পশ্চিমা দেশগুলো দেওয়া দূরপাল্লার অস্ত্রের সাহায্যে পাল্টা আক্রমণ চালাতে পারবে।

আর মস্কো বলছে, সিয়েভিয়ারোদোনেৎস্ক শহরের পর এক সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে লিসিচ্যাংস্ক দখলে নিয়ে তারা লুহানস্ককে পুরোপুরি ‘স্বাধীন’ করতে সক্ষম হয়েছে। তারা এখন দনবাসের এই অঞ্চলকে লুহানস্ক পিপলস রিপাবলিকের (স্বঘোষিত) হাতে তুলে দেবে।

রাশিয়ার বেলগ্রোগ্রাদ শহরে বিস্ফোরণে বিধ্বস্ত একটি আবাসিক ভবনের ধ্বংসস্তূপে কাজ করছেন উদ্ধারকর্মীরা। ছবি: রয়টার্স

ইউক্রেইন অভিযান শুরুর ঠিক আগে রাশিয়া লুহানস্ক পিপলস রিপাবলিকের স্বাধীনতার স্বীকৃতি দিয়েছিল।

লুহানস্কের পর যুদ্ধক্ষেত্র এখন পার্শ্ববর্তী দোনেৎস্ক এলাকায় সরে আসবে, যার কিছুটা অংশ এখনও কিইভবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে আছে।

“যদি আমাদের সেনা কমান্ডাররা যুদ্ধক্ষেত্র থেকে নির্দিষ্ট কারণে লোকজন সরিয়ে নেয়, যেমন অস্ত্রশস্ত্র বিবেচনায় শত্রুরা আমাদের চেয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে আছে, যেমনটা লিসিচ্যাংস্কেও হয়েছে; এর অর্থ হচ্ছে একটাই- কৌশল, সরবরাহ বাড়তে থাকা অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্রের সাহায্যে আমরা আবার ফিরে আসবো,” রোববার নিজের রাত্রিকালীন ভিডিও ভাষণে বলেন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি।

তিনি জানান, রাশিয়া তার অস্ত্রশস্ত্র ও সেনাশক্তিকে দনবাস ফ্রন্টে কেন্দ্রীভূত করেছে, কিন্তু ইউক্রেইন যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহ করা হিমরাস রকেট লঞ্চারসহ দূরপাল্লার অস্ত্র দিয়ে পাল্টা আঘাত হানবে।

“আমরা আমাদের সৈন্য, আমাদের জনগণের জীবন রক্ষা করছি, যা একইসঙ্গে সমান গুরুত্বপূর্ণ। আমরা দেয়ালগুলো পুনর্নির্মাণ করবো, ভূমি ফেরত নেবো তবে সব কিছুর উপরে মানুষকে রক্ষা করতে হবে,” বলেছেন জেলেনস্কি।

রাশিয়া তাদের ‘বিশেষ অভিযানের’ শুরুতে ইউক্রেইনের রাজধানী কিইভ নিয়ে আগ্রহী থাকলেও পরের দিকে সেখান থেকে সরে এসে শিল্পসমৃদ্ধ দনবাসে মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করে।

দনবাসের লুহানস্ক ও দোনেৎস্কের মস্কো সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীরা ২০১৪ সাল থেকেই  স্বাধীনতার দাবিতে যুদ্ধ চালিয়ে আসছিল।

এক বিবৃতিতে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছেন, লুহানস্ককে ‘মুক্ত’ করা হয়েছে বলে প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে অবহিত করেছেন।

এর আগে রাশিয়া জানিয়েছিল, আশপাশের গ্রামগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে লিসিচ্যাংস্ক শহরটিকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলা হয়েছে।

ইউক্রেইনের সামরিক কমান্ড বলেছে, তাদের বাহিনী শহরটি (লিসিচ্যাংস্ক) থেকে পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে।

“শহরটিতে প্রতিরোধ যুদ্ধ অব্যাহত রাখার পরিণতি হতো মারাত্মক। ইউক্রেইনীয় প্রতিরোধ যোদ্ধাদের জীবন রক্ষায় সেখান থেকে (সেনা) প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে,” সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া বিবৃতিতে এমনটাই বলেছে তারা।

ইউক্রেইনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দোনেৎস্কের বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় তুমুল গোলাবর্ষণ চলছে।  

লিসিচ্যাংস্কের পশ্চিমে দোনেৎস্কের স্লোভিয়ানস্কে রোববার মাল্টিপল রকেট লঞ্চারের ছোড়া গোলায় অন্তত ৬ জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কর্মকর্তারা।