লিসিচ্যাংস্কের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কিইভবাহিনী ও মস্কো সমর্থিত বিচ্ছিন্নতবাদীদের পাল্টাপাল্টি বক্তব্যের মধ্যে তার এ আশঙ্কার কথা জানা গেল।
এদিকে ইউক্রেইন সীমান্তবর্তী রাশিয়ার শহর বেলগোরদে একাধিক বিস্ফোরণে অন্তত ৩ জন নিহত ও কয়েকডজন বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে রোববার সেখানকার আঞ্চলিক গভর্নরের বরাত দিয়ে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
গভর্নর ভিয়াচেস্লাভ গ্লাদকভ ম্যাসেজিং অ্যাপ টেলিগ্রামে বলেছেন, অন্তত ১১টি অ্যাপার্টমেন্ট ভবন ও ৩৯টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরমধ্যে ৫টি বাড়ি একেবারে ধ্বংস হয়ে গেছে।
রাশিয়ার এক আইনপ্রণেতা আন্দ্রেই ক্লিশাস বেলগোরদো হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির জন্য ইউক্রেইনের গোলাবর্ষণকে দায়ী করে মস্কোকে পাল্টা সামরিক জবাব দিতে বলেছেন।
“বেলগোরদে বেসামরিকদের মৃত্যু এবং বেসামরিক স্থাপনার ক্ষয়ক্ষতি ইউক্রেইনের দিক থেকে সরাসরি আগ্রাসন; এজন্য সামরিক প্রতিক্রিয়াসহ সবচেয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখানো জরুরি,” টেলিগ্রামে লিখেছেন ক্লিশাস।
মস্কো এর আগেও কিইভের বিরুদ্ধে বেলগোরদ ও ইউক্রেইন সীমান্তবর্তী বিভিন্ন এলাকার বেসামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে একাধিক হামলা চালানোর অভিযোগ এনেছিল।
ইউক্রেইন অবশ্য কখনোই সেসব হামলার দায় স্বীকার করেনি; উল্টো বলেছে, এসব ঘটনা হচ্ছে রাশিয়ার আগ্রাসনের ‘ফল’।
বেলগোরদে সর্বশেষ হামলার বিষয়েও ইউক্রেইনের কাছ থেকে তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি, রয়টার্সও স্বতন্ত্রভাবে রুশ ভাষ্যের সত্যতা যাচাই করে দেখতে পারেনি।
ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেইনে সেনা পাঠানোর পর থেকে এখন পর্যন্ত কয়েক হাজার বেসামরিক নিহত হয়েছে; মাটির সঙ্গে মিশে গেছে অসংখ্য শহর।
কিইভ ও এর পশ্চিমা মিত্ররা বলেছে, মস্কো বিনা উসকানিতে ইউক্রেইনে আগ্রাসী যুদ্ধ চালাচ্ছে।
রাশিয়া বলছে, যুদ্ধ নয়, ইউক্রেইনে যা চলছে তা হল ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’, যার লক্ষ্য হচ্ছে ‘নিরস্ত্রীকরণ’ ও প্রতিবেশী দেশটিকে ‘নাৎসিমুক্ত’ করা। এই অভিযানে বেসামরিক স্থাপনায় উদ্দেশ্যমূলকভাবে কোনো হামলা হচ্ছে না বলেও দাবি তাদের।
পূর্বাঞ্চলে থাকা ইউক্রেইনীয় বাহিনী লিসিচ্যাংস্কের আশপাশসহ বিভিন্ন এলাকায় বেসামরিক এলাকাগুলোর ওপর রুশ সমর্থিতরা তুমুল কামানের গোলা ছুড়ছে বলে অভিযোগ করেছে। লুহানস্কে ইউক্রেইনীয় বাহিনীর দখলে থাকা শেষ শহর এই লিসিচ্যাংস্ক।
তুমুল লড়াইয়ের পর রুশ বাহিনী ও এর মিত্ররা গত মাসে সিভেরস্কি দোনেৎস নদীর অপর পাশে অবস্থিত লিসিচ্যাংস্কের জমজ খ্যাত সিয়েভিয়ারোদোনেৎস্ক শহরের দখল নিয়েছিল।
মস্কো সমর্থিত লুহানস্ক পিপলস রিপাবলিকে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত রোদিওন মিরোশনিক রুশ টেলিভিশনকে বলেছেন, “লিসিচ্যাংস্ক আমাদের নিয়ন্ত্রণে, যদিও এখনও পুরোপুরি মুক্ত নয়।”
রাশিয়ার গণমাধ্যমে প্রচারিত ভিডিওতে লিসিচ্যাংস্কের বিভিন্ন সড়কে লুহানস্ক বাহিনীর সদস্যদের পতাকা উড়িয়ে, উল্লাস করতে করতে হেঁটে যেতে দেখা গেলেও ইউক্রেইনের ন্যাশনাল গার্ডের মুখপাত্র রুসলাম মুজিচুক ইউক্রেইনীয় টিভিকে বলেছেন, পূর্বাঞ্চলীয় ওই শহরটি এখনও তাদের নিয়ন্ত্রণেই আছে।
“লিসিচ্যাংস্কের কাছে ভয়াবহ লড়াই চলছে। তবে সৌভাগ্যক্রমে শত্রুরা শহরটিকে চারদিক থেকে ঘেরাও করতে পারেনি এবং এখনও শহরটি ইউক্রেইনীয় সেনাদের নিয়ন্ত্রণেই আছে,” বলেছেন তিনি।
দুই পক্ষের কারও ভাষ্যেরই সত্যতা যাচাই করতে পারেনি রয়টার্স।
জেলেনস্কির উপদেষ্টা ওলেকসি আরেস্তোভিচ বলেছেন, রুশ বাহিনী শেষ পর্যন্ত সিভেরস্কি দোনেৎস নদী পার হয়ে উত্তর দিক থেকে লিসিচ্যাংস্কের দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
“এটা অবশ্যই হুমকির। দেখা যাক। কোনো সম্ভাবনাই উড়িয়ে দিচ্ছি না। এক থেকে দুই দিনের মধ্যে অনেককিছুই স্পষ্ট হবে,” বলেছেন তিনি।
আরেস্তোভিচের মতে, লিসিচ্যাংস্কের দখল নেওয়ার পর রুশ বাহিনীর কৌশলগত জটিলতা আরও বাড়বে, কেননা তাদেরকে তখন শিল্পসমৃদ্ধ পূর্বাঞ্চলীয় দনবাস অঞ্চলের ছয়টি বড় শহরের দিকে মনোযোগ দিতে হবে। সেসব শহরের দিকে তাদেরকে তখন বাহিনীকে ছোট ছোট ভাগে বিভক্ত করে পাঠাতে হবে।
“যত বেশি পশ্চিমা অস্ত্রশস্ত্র যুদ্ধক্ষেত্রে আসবে, ততই চিত্র ইউক্রেইনের পক্ষে আসতে শুরু করবে,” মিত্রদের কাছে আরও অস্ত্র সাহায্য চেয়ে বলেন জেলেনস্কির এই উপদেষ্টা।