রাশিয়াকে মোকাবেলায় ৩ লক্ষাধিক সেনা প্রস্তুত রাখবে নেটো

রাশিয়ার হুমকি মোকাবেলায় পশ্চিমা সামরিক জোট নেটো তাদের ‘যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত’ বাহিনীর সেনা সংখ্যা বর্তমানের ৪০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৩ লাখ করবে এবং ২০২৩ সালের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে এই সেনাদেরকে উচ্চ সতর্কাবস্থায় রাখবে।

>>রয়টার্স
Published : 30 June 2022, 05:43 PM
Updated : 30 June 2022, 06:01 PM

স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদ্রে অনুষ্ঠিত নেটো সম্মেলনে বৃহস্পতিবার নেতারা আগামী দশকের জন্য রাশিয়াকে সবচেয়ে বড় হুমকি আখ্যা দিয়ে বিপুল সংখ্যক সেনা প্রস্তুত রাখার এ পরিকল্পনায় একমত হয়েছেন।

নেটো জোটকে রূপান্তর করে শক্তি আরও বাড়ানোর এই সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়েই এদিন শেষ হয়েছে সম্মেলন। নেটো মহাসচিব ইয়েন্স স্টলটেনবার্গ বলেছেন, “মাদ্রিদে আমরা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি তাতে আমাদের মিত্রদেশগুলোতে শান্তি সুরক্ষিত রাখা, সংঘাত ঠেকানো এবং আমাদের জনগণ ও মূল্যবোধের সুরক্ষা নিশ্চিত হবে।”

নেটোর শক্তি বর্তমানে কতটুকু এবং ভবিষ্যতে নেটোর পূর্বাঞ্চলে রাশিয়ার যে কোনও হামলা মোকাবেলাসহ দক্ষিণ সীমান্তেও অন্যান্য সংকট সামাল দিতে জোটকে কীভাবে শক্তিশালী করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে তার বিস্তারিত খুঁটিনাটি তুলে ধরেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স:

নেটো বাহিনীর বর্তমান অবস্থা:

তিনটি বাল্টিক দেশ এবং পোল্যান্ডে নেটোর চারটি বহুজাতিক ব্যাটেলিয়ন আছে। ২০১৭ সাল থেকে এই ব্যাটেলিয়নের প্রত্যেকটির সেনা সংখ্যা ১ হাজারের মতো। ২০১৪ সালে রাশিয়া ইউক্রেইনের ক্রাইমিয়া উপদ্বীপ দখলে নেওয়ার পর এসব ব্যাটেলিয়ন মোতায়েন করা হয়েছিল।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেইনে আগ্রাসন শুরু করার পর থেকে নেটোর এই সেনা উপস্থিতি বাড়ানো হয়েছে। সেইসঙ্গে নেটো তাদের শক্তিশালী রেসপন্স ফোর্সের ৪০ হাজার সেনাকেও সক্রিয় রেখেছে। পাশাপাশি ‍যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপে প্রায় আরও ২০ হাজার সেনা পাঠিয়েছে। এ নিয়ে ইউরোপে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর সদস্যসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখে।

নেটোর যে বহুজাতিক ব্যাটেলিয়নগুলো মোতায়েন আছে সেগুলোসহ রেসপন্স ফোর্সের কিয়দংশ নিয়ে ইউরোপে নেটোর সুপ্রিম এলায়েড কমান্ডার (এসএসিইইউআর)- এর অধীনে আছে ৪২ হাজারেরও বেশি সেনা। এর সঙ্গে জঙ্গি বিমান এবং রণতরী তো প্রস্তুত আছেই।

এসএসিইইউআর যুক্তরাষ্ট্রের ইউরোপীয় কমান্ডেরও কমান্ডার। এর অধীনে নেটো মিত্রদেশগুলোর সেনা সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে।

নেটোর জাতীয় বাহিনীও আছে। কিন্তু সেগুলোর বেশিরভাগ বাহিনীতেই পর্যাপ্ত তহবিল নেই এবং কোনও সংঘাতের ক্ষেত্রে দ্রুত সেনা মোতায়েনের সক্ষমতাও নেই।

নেটোর শক্তিবৃদ্ধির স্বল্পমেয়াদী পরিকল্পনা:

নেটো এখন হাঙ্গেরি, বুলগেরিয়া, স্লোভেনিয়া এবং রুমানিয়ায় আরও চার বহুজাতিক ব্যাটেলিয়ন মোতায়েনের প্রক্রিয়া চালাচ্ছে। প্রতিটি ব্যাটেলিয়নেই থাকছে প্রায় ১ হাজার সেনা।

দক্ষিণ-পূর্ব মিত্রদেশগুলোর ভূখন্ডে আকাশ এবং নেটো আকাশসীমা টহল দেওয়ার জন্য বিমানের সংখ্যাও বাড়িয়েছে পশ্চিমা সামরিক এই জোটটি।

দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা:

যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত বাহিনী এবং উচ্চ সতর্কাবস্থায় রাখা সেনার সংখ্যা বিপুলসংখ্যক বাড়াবে নেটো। তার মানে হচ্ছে, এই সেনারা ইউরোপে যে কোনও সংঘাতের ক্ষেত্রে মিত্রদেশগুলোর সীমান্তকে রক্ষায় দ্রুত মোতায়েন হতে পারবে।

সেনাদেরকে প্রস্তুত রাখতে তিন-স্তরের একটি ব্যবস্থা নেবে নেটো। এই ব্যবস্থায়, কোনও সংঘাতের ক্ষেত্রে প্রথমে ১০ দিনের মধ্যে  ১ লাখ সেনা মোতায়েন করা হবে। এরপর ৩০ দিনের মধ্যে মোতায়েন হবে ২ লাখ সেনা এবং তারপর ১৮০ দিনের মধ্যে মোতায়েন হবে ৫ লাখ সেনা।

তিন-স্তর বিশিষ্ট এ ব্যবস্থায় প্রথমে নেটো ইউরোপের ট্যাকটিক্যাল ফোর্স, তারপর অপারেশনাল রিজার্ভ ফোর্স এবং তারপর আটলান্টিকের ওপারে যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডা থেকে বাহিনী নিয়ে আসবে, যা ট্র্যাটেজিক রিজার্ভ নামে পরিচিত।

এইসব বাহিনীর অস্তিত্ব এরই মধ্যে নেটোতে আছে। কিন্তু সেই বাহিনীকে দ্রুত কোথাও মোতায়েন করতে হলে আরও বিনিয়োগ, প্রশিক্ষণ এবং সাজ-সরঞ্জাম দরকার। এর মধ্যেই থাকবে যুদ্ধের জন্য উচ্চ-প্রস্তুতিসম্পন্ন বাহিনী।