ফিলিপিন্সে নোবেলজয়ী রেসার সংবাদমাধ্যম র‌্যাপলার বন্ধের নির্দেশ

নোবেলজয়ী শান্তি পুরস্কারজয়ী সাংবাদিক মারিয়া রেসা প্রতিষ্ঠিত অনুসন্ধানী সংবাদমাধ্যম র‌্যাপলার আবারও বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে ফিলিপিন্সের সরকার।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 June 2022, 09:40 AM
Updated : 29 June 2022, 09:40 AM

ফিলিপিন্সে যে গুটিকয় সংবাদমাধ্যম প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতের্তে সরকারের সমালোচনা করার সাহস দেখাতে পেরেছে, তাদের মধ্যে র‌্যাপলার অন্যতম।

দুতের্তে নতুন প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়র বংবংয়ের হাতে দায়িত্ব হস্তান্তরের আগ মুহূর্তে র‌্যাপলার বন্ধের এই আদেশ এল বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বিবিসি।

র‌্যাপলার জানিয়েছে, তারা তাদের অফিস বন্ধ করবে না, বরং সরকারের ওই নির্দেশের বিরুদ্ধে আদালতে যাবে। বছর চারেক আগেও একবার সংবাদমাধ্যমটি বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিল দেশটির নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

দেশটির সাবেক স্বৈরশাসক ফের্দিনান্দ মার্কোসের ছেলে এবং দুতের্তের মিত্র মার্কোস জুনিয়র গত মে মাসে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর দায়িত্ব গ্রহণের মুহূর্তে আবারও একই পদক্ষেপ নেওয়া হল।

মারিয়া রেসা বুধবার সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা কাজ চালিয়ে যাব। আমরা আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করব এবং অধিকারের জন্য লড়ে যাব। আমাদের অবস্থান আমরা ধরে রাখব।”

ছবি: রয়টার্স

তার ভাষায়, যেভাবে ওই আদেশ দেওয়া হয়েছে, তাতে নিয়ম অনুসরণ করা হয়নি। তাদের সংবাদমাধ্যম আর রাষ্ট্রের ‘আইনের শাসনের’ ভরসা রাখতে পারছে না।

ফিলিপিন্সের সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন এক বিবৃতিতে বলেছে, র‌্যাপলার যেভাবে তহবিল সংগ্রহ করেছে, তা ‘অসাংবিধানিক’ বলে সিদ্ধান্ত দিয়েছে আদালত। র‌্যাপলারের লাইসেন্স কেড়ে নেওয়ার সিদ্ধানতেই তাতে বহাল থাকছে।

বিবিসি লিখেছে, ২০১৮ সালে প্রথম র‌্যাপলারের লাইসেন্স অবৈধ ঘোষণা করে আদেশ জারি হয়েছিল। কারণ হিসাবে বলা হয়েছিল, সংবাদমাধ্যমটি একটি বিদেশি সত্তার কাছে নিজেদের সত্ব বিক্রি করেছে, যার ফলে ফিলিপিন্সের মিডিয়াতে বিদেশি মালিকানার বিধিনিষধ লঙ্ঘন হয়েছে।

র‌্যাপলার তখন থেকেই লড়ে যাচ্ছে। মার্কিন বিনিয়োগকারীদের অর্থায়ন নিয়ে ফিলিপিন্সের আইন ভঙ্গ করার কথা তারা অস্বীকার করে আসছে।

২০১৫ সালে র‌্যাপলার ওমিয়াদার নেটওয়ার্ক থেকে তহবিল পেয়েছিল। এই নেটওয়ার্ক হল ‘ই-বে’র প্রতিষ্ঠাতা বিলিয়নেয়ার পিয়ের ওমিদার প্রতিষ্ঠিত একটি জনহিতৈষী বিনিয়োগ সংস্থা। তিন বছর পরে তারা বিনিয়োগের ওই অর্থ র‍্যাপলারের ফিলিপিনো কর্মীদেরই দান করে দেয় এটা দেখাতে যে ওই সংবাদমাধ্যমের ব্যবসায় তারা নিয়ন্ত্রণকারী কোনো ভূমিকায় নেই।

ছবি: রয়টার্স

রেসা বুধবার বলেন, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের আদেশটি এসেছে র‌্যাপলারের অনুসন্ধানী রিপোর্টিংয়ের প্রতিক্রিয়ায়। গত ছয় বছরের ধারাবাহিকতায় র‌্যাপলারের ওপর এটি সর্বশেষ ধাক্কা।

“আমাদের হয়রানি করা হচ্ছে। এগুলো রাজনৈতিক কৌশল। আমরা তাদের কাছে নতি স্বীকার করতে চাই না।”

প্রেসিডেন্ট দুতের্তের মাদকবিরোধী অভিযানে বিচারবহির্ভূত হত্যার বিষয়গুলো তুলে ধরেছে র‌্যাপলার। একইসঙ্গে মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং দুর্নীতির জন্যও দুতের্তে সরকারের সমালোচনা করেছে সংবাদমাধ্যমটি।

মারিয়া রেসা সহ-প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে ২০১২ সালে নিউজ সাইটটি প্রতিষ্ঠা করেন। অন্তত সাতটি ফৌজদারি ও দেওয়ানি মামলার মুখোমুখি হয়েছেন তিনি, যেগুলোকে তিনি রাজনৈতিক মামলা হিসেবে বর্ণনা করে আসছেন।

মানহানির অভিযোগে ২০২০ সালে রেসাকে দোষী সাব্যস্ত করা হলে তিনি আপিল করেন। ওই মামলাকে ফিলিপিন্সের গণমাধ্যমের স্বাধীনতার পরীক্ষা হিসাবে দেখা হচ্ছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে।

গতবছর রাশিয়ার সাংবাদিক দিমিত্রি মুরাতভের সঙ্গে যৌথভাবে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান মারিয়া রেসা।

আরও খবর