ফিনল্যান্ড-সুইডেনের নেটোতে যোগদানে তুরস্ক বাধা সরলো

যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট নেটোর সদস্যপদ প্রাপ্তিতে ফিনল্যান্ড ও সুইডেনকে সমর্থন দিতে রাজি হয়েছে তুরস্ক।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 June 2022, 09:03 AM
Updated : 29 June 2022, 09:03 AM

নর্ডিক দেশদুটির নেটোতে যোগদানে আপত্তি জানিয়েছিল আঙ্কারা । কুর্দিদের আশ্রয় দিতে ফিনল্যান্ড-সুইডেনের আগ্রহ নিয়ে ক্ষিপ্ত ছিল তারা। ওই কুর্দিদের সন্ত্রাসী হিসেবে বিবেচনা করে তুরস্ক।

নেটোর নীতি অনুযায়ী অন্যতম সদস্য দেশ তুরস্কের সমর্থন ছাড়া বাল্টিক সাগরঘেঁষা দেশ দুটি মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটে যোগ দিতে পারতো না।

তবে তুরস্ক বাদে নেটোর অন্য সদস্য রাষ্ট্রগুলো আগেই ফিনল্যান্ড-সুইডেনকে সবুজ সংকেত দিয়ে রেখেছিল; এখন আঙ্কারা রাজি হওয়ায় দুই নর্ডিক দেশের সদস্যপদ প্রাপ্তির পথ পরিষ্কার হয়ে গেল বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

রাশিয়া তার প্রতিবেশী ফিনল্যান্ড এবং সুইডেনের নেটোভুক্তির তীব্র বিরোধিতা করে আসছে।

পশ্চিমা সামরিক জোটের পূর্বমুখী বিস্তৃতির আকাঙ্ক্ষাকে ইউক্রেইন যুদ্ধের অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে মস্কো। কিন্তু প্রতিবেশী দেশটিতে তাদের আক্রমণে শঙ্কিত অপর প্রতিবেশী কথিত ‘নিরপেক্ষ’ দেশ সুইডেন-ফিনল্যান্ড এখন নেটোতে যুক্ত হতে ছুটছে।

মঙ্গলবার আঙ্কারার উদ্বেগগুলোকে বিবেচনায় নেওয়া একটি যৌথ নিরাপত্তা সমঝোতায় স্বাক্ষর করেন সুইডেন, ফিনল্যান্ড ও তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা ।

নেটোপ্রধান ইয়েন্স স্তলতেনবার্গ বলেছেন, সন্দেহভাজন কুর্দি জঙ্গিদের হস্তান্তরে তুরস্কের অনুরোধ নিয়ে কাজ করার গতি বাড়াতে সম্মত হয়েছে সুইডেন।

দুই নর্ডিক দেশ তুরস্কে অস্ত্র বিক্রির ওপর বিধিনিষেধও তুলে নিচ্ছে, বলেছেন তিনি।

ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট সাউলি নিনিস্তো জানান, ‘একে অপরের নিরাপত্তা হুমকির বিরুদ্ধে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতে’ তিন দেশ ওই যৌথ সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেছে।

সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী ম্যাগদালিয়েনা অ্যান্দেসন তিন দেশের সমঝোতাকে ‘নেটোর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ’বলে অভিহিত করেছেন।

আর তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়িপ এরদোয়ানের দপ্তর বলেছে, ‘যা চেয়েছি, সুইডেন-ফিনল্যান্ডের কাছে তা পেয়েছি’।

ইউক্রেইনে রাশিয়ার হামলার প্রতিক্রিয়ায় নর্ডিক দুই দেশ গত মাসই নেটোতে যোগ দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। নেটোর সঙ্গে আগে থেকেই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকায় দেশ দুটির সদস্যপ্রাপ্তি ‘খুব দ্রুত’ হতে পারে বলে স্তলতেনবার্গ সেসময় ইঙ্গিতও দিয়েছিলেন।

কিন্তু তুরস্ক বাধা হয়ে দাঁড়ানোয় তা হয়নি; সুইডেন-ফিনল্যান্ড কুর্দি ‘জঙ্গিদের’ সুরক্ষা দিচ্ছে অভিযোগ করে আঙ্কারা দেশদুটির নেটোতে যোগদানে সমর্থন না দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল।

নেটোতে যুক্ত হতে হলে জোটের সদস্য সব দেশেরই সমর্থন লাগবে। নেটোভুক্ত দেশের বর্তমান সংখ্যা ৩০, সুইডেন-ফিনল্যান্ড যোগ দিলে জোটটির সদস্য দেশের সংখ্যা ৩২ হবে। 

তুরস্ক দীর্ঘদিন ধরেই সুইডেনের বিরুদ্ধে কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টির (পিকেকে) ‘জঙ্গিদের’ আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ করলেও স্টকহোম তা অস্বীকার করে আসছিল। পিকেকে তুরস্কে নিষিদ্ধ, আঙ্কারা একে সন্ত্রাসী সংগঠন বিবেচনা করে।

তুরস্কের দাবি মেনে নেওয়ায় সুইডেন ও ফিনল্যান্ডকে এখন আইন সংশোধনের মাধ্যমে পিকেকের সদস্যদের ওপর ব্যাপক দমনপীড়ন চালানোর পথে হাঁটতে হবে।

সুইডেন ও ফিনল্যান্ড যদি নেটোর সদস্য হয়, তাহলে তা সুইডেনের ২০০ বছরের ‘জোট নিরপেক্ষ’ অবস্থানের ইতি ঘটাবে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছে তিক্ত পরাজয়ের পর ফিনল্যান্ডও ‘নিরপেক্ষ’ অবস্থান নিয়েছিল।

নেটোতে যোগদানের ব্যাপারে ফেব্রুয়ারির আগেও ফিনিশ জনগণের মধ্যে আগ্রহের ঘাটতি ছিল; জনমত জরিপগুলোতে নেটোর পক্ষে দেখা যেত ২০ থেকে ২৫ শতাংশকে।

কিন্তু ইউক্রেইনে রাশিয়ার আক্রমণের পর পরিস্থিতি পুরো বদলে যায়; সর্বশেষ জনমত জরিপে অংশ নেওয়াদের মধ্যে ৭৯ শতাংশ নেটোতে যোগ দেওয়ার পক্ষে অবস্থান জানিয়েছে।

সুইডেনের ৬০ শতাংশ জনগণও বলছে, নেটোতে যোগদানের আবেদন করা উচিত; এই সংখ্যা ইউক্রেইন যুদ্ধের আগের তুলনায় অনেক অনেক বেশি।