শ্রীলঙ্কা: জরুরি সেবা ছাড়া সর্বত্র জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ

জ্বালানির তীব্র ঘাটতি মেটানোর মরিয়া চেষ্টার অংশ হিসেবে শ্রীলঙ্কা মঙ্গলবার থেকে আগামী দুই সপ্তাহ স্কুল বন্ধ রাখবে এবং কেবলমাত্র স্বাস্থ্য, ট্রেন ও বাসের মতো জরুরি বলে বিবেচিত সেবাগুলোতেই জ্বালানি সরবরাহে অনুমতি দেবে বলে জানিয়েছেন দেশটির এক মন্ত্রী।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 June 2022, 08:12 AM
Updated : 28 June 2022, 08:12 AM

স্বাধীনতার পর সবচেয়ে মারাত্মক অর্থনৈতিক সংকটে ভুগতে থাকা শ্রীলঙ্কার বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ এখন সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে এবং সোয়া দুই কোটি জনসংখ্যার দেশটি খাদ্য, ওষুধ ও জ্বালানির মতো গুরুত্বপূর্ণ পণ্য আমদানির ব্যয় পরিশোধে হিমশিম খাচ্ছে।

গার্মেন্টসের মতো যেসব খাত ডলার আয় করে তাদের হাতে কেবল এক সপ্তাহ থেকে ১০ দিনের মতো জ্বালানি আছে; স্বাভাবিক যে চাহিদা তা পূরণ করতে গেলে দেশটির কাছে থাকা মজুদ এক সপ্তাহেরও কম সময়ে ফুরিয়ে যাবে বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের হিসাবে দেখা যাচ্ছে।  

পরিস্থিতি সামলাতে সরকার মঙ্গলবার থেকে ১০ জুলাই পর্যন্ত কেবল বাস, ট্রেন, চিকিৎসা সেবা সংশ্লিষ্ট কর্মকাণ্ড ও যেসব গাড়িতে খাদ্য পরিবহন হয় সেগুলোতে জ্বালানি দেওয়া হবে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদের মুখপাত্র বান্দুলা গুনাবর্ধনে। 

আন্তঃপ্রাদেশিক বাস সেবা সীমিত হবে, শহুরে এলাকাগুলোর স্কুল বন্ধ থাকবে, পাশাপাশি সবাইকে বাড়ি থেকে কাজ করার (ওয়ার্ক ফ্রম হোম) আহ্বান জানানো হচ্ছে, বলেছেন তিনি।

“শ্রীলঙ্কার ইতিহাসে দেশটি কখনোই এত ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটের মুখোমুখি হয়নি,” বলেন এই লঙ্কান মন্ত্রী।

পালাচ্ছে লোকজন

অর্থনৈতিক সংকট কাটাতে সম্ভাব্য একটি বেইল আউট নিয়ে শ্রীলঙ্কার সরকার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএ্মএফ) সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে গেলেও দেশটির অনেকেই বেইল আউটের অর্থছাড় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারছে না এবং পাসপোর্টের চাহিদা হু হু করে বাড়ছে।

লঙ্কান নৌবাহিনীর এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, তারা সোমবার দেশটির পূর্ব উপকূলের কাছ থেকে ৫৪ ব্যক্তিকে আটক করেছে, যারা নৌকায় করে দেশ ছাড়তে চেয়েছিলেন। গত সপ্তাহেও এরকম ৩৫ ‘নৌকাযাত্রী’কে ধরা হয়েছিল।

গত মাসে সরকারপন্থি ও বিরোধী বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষের পর দেশজড়ে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে ৯ জনের মৃত্যু ও তিন শতাধিক আহত হলে  দেশটির প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসের বড় ভাই মাহিন্দা রাজাপাকসে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ান। এরপর রনিল বিক্রমাসিংহে দেশটির প্রধানমন্ত্রী হন।   

জ্বালানি ঘাটতি প্রকটতর হলে দেশটিতে নতুন করে বিক্ষোভের ঢেউ আছড়ে পড়তে পারে বলে শঙ্কাও রয়েছে।

বিরোধীদলের নেতা সাজিথ প্রেমদাসা এরই মধ্যে সরকারের পদত্যাগ দাবি করেছেন।

“জ্বালানি ঘাটতির কারণে দেশ পুরোপুরি ধসে পড়েছে। এই সরকার বারবার জনগণকে মিথ্যা বলছে এবং তাদের সামনে আগানোর কোনো পরিকল্পনাই নেই,” ভিডিও বার্তায় এমনটাই বলেছেন তিনি। 

লোডশেডিং

শ্রীলঙ্কার সরকারের মজুদে ৯ হাজার টনের মতো ডিজেল ও ৬ হাজার টন পেট্রল আছে বলে রোববার জানিয়েছিলেন দেশটির বিদ্যুৎমন্ত্রী। নতুন চালান কবে আসবে, তার কোনো ঠিকঠিকানা নেই।

ভারতীয় অয়েল কর্পোরেশনের (আইওসি) শাখা লঙ্কা আইওসি রয়টার্সকে বলেছে, তাদের কাছে এখন ২২ হাজার টন ডিজেল ও সাড়ে ৭ হাজার টন পেট্রল আছে। ১৩ জুলাইয়ের কাছাকাছি সময়ে পেট্রল ও ডিজেল মিলিয়ে ৩০ হাজার টনের আরেকটি চালান পাওয়ারও প্রত্যাশা করছে তারা।

কেবল পরিবহন সংক্রান্ত চাহিদা মেটাতেই দেশটির প্রতিদিন প্রায় ৫ হাজার টন ডিজেল ও তিন হাজার টন পেট্রল লাগে বলে জানিয়েছেন লঙ্কা আইওসির প্রধান মনোজ গুপ্ত। 

এরপর জ্বালানির  বড় ভোক্তা হল পোশাক ও টেক্সটাইলের মতো খাতগুলো; মে-তে শ্রীলঙ্কার পোশাক ও টেক্সটাইল কোম্পানিগুলোর রপ্তানি ৩০ শতাংশ বেড়ে ৪৮ কোটি ২৭ লাখ ডলারে পৌঁছেছিল বলে সোমবার প্রকাশিত তথ্যে দেখা যাচ্ছে।

“আমাদের হাতে আগামী ৭ থেকে ১০ দিনের জ্বালানি আছে, আমরা চালিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি। মজুদে নতুন জ্বালানি আসে কিনা তার জন্য অপেক্ষা করছি, দেখি সামনের দিনগুলোতে কী দাঁড়ায়,” বলেছেন শ্রীলঙ্কা জয়েন্ট অ্যাপারেল অ্যাসোসিয়েশন ফোরামের মহাসচিব ইয়োহান লরেন্স।  

শ্রীলঙ্কার বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বেশ কয়েকটি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র চালাতে এবং লোডশেডিং সর্বনিম্ন পর্যায়ে রাখতে দ্বীপদেশটিকে এখন মজুদে থাকা শেষ দিককার ফার্নেস অয়েল ব্যবহার করতে হচ্ছে। সোমবার থেকে দেশটিতে পূর্বঘোষিত লোডশেডিংয়ের পরিমাণ আড়াই ঘণ্টা থেকে বাড়িয়ে তিন ঘণ্টা করা হয়েছে।

“আগামী দুই মাস লোডশেডিং তিন থেকে চার ঘণ্টার মধ্যে রাখার আশা করছি আমরা। দেশের পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে এটা বদলেও যেতে পারে,” বলেছেন শ্রীলঙ্কার পাবলিক ইউটিলিটিস কমিশনের চেয়ারম্যান জানাকা রত্নায়েকে।

৩০০ কোটি ডলারের বেইলআউট প্যাকেজ নিয়ে কথা বলতে আইএমএফের একটি দল এখন শ্রীলঙ্কা সফর করছে। বৃহস্পতিবার ওই সফর শেষ হওয়ার আগে কর্মকর্তা পর্যায়ে এক ধরনের সমঝোতা হবে বলে দ্বীপদেশটি আশা করলেও তাৎক্ষণিকভাবে অর্থ পাওয়ার সম্ভাবনা কম।

দেশটি এখন পর্যন্ত ভারতের কাছ থেকে প্রায় ৪০০ কোটি ডলারের আর্থিক সহায়তা পেয়েছে। আর্থিক ব্যবস্থাপনায় কৌশলগত সহায়তা দিতে যুক্তরাষ্ট্রও রাজি হয়েছে বলে সোমবার জানিয়েছে শ্রীলঙ্কার সরকার।