বৃহস্পতিবার রাতে সেনেটে ভোটাভুটিতে বিলটি পাস হয়। বিলটির পক্ষে ভোট পড়েছে ৬৫ টি। এর মধ্যে ১৫ জন রিপাবলিকান সদস্যও আছে। আর বিলের বিপক্ষে ভোট পড়েছে ৩৩ টি।
এখন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে বিলটি পাস হতে হবে। এর পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সই করলেই তা আইনে পরিণত হবে। এসব প্রক্রিয়া খুব শিগগিরই সম্পন্ন হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
বিবিসি জানায়, বিলটির আওতায় যেসব প্রস্তাব করা হয়েছে তার মধ্যে আছে:
· ২১ বছরের কম বয়সীদের কাছে অস্ত্র বিক্রির ক্ষেত্রে তাদের পারিবারিক ইতিহাস যাচাই করা।
· মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক কর্মসূচি এবং স্কুলের নিরাপত্তার জন্য ১ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের কেন্দ্রীয় তহবিল বরাদ্দ করা।
· হুমকি বলে বিবেচিত মানুষষের কাছ থেকে আগ্নেয়াস্ত্র দূরে রাখতে ‘রেড ফ্ল্যাগ’ আইন বাস্তবায়নের জন্য অঙ্গরাজ্যগুলোকে উদ্বুদ্ধ করতে তহবিল বরাদ্দ করা।
· পারিবারিক সহিংসতার রেকর্ড থাকলে তার কাছে আগ্নেয়াস্ত্র বিক্রি না করা
যুক্তরাষ্ট্রে একের পর এক গুলির ঘটনার পর এমন পদক্ষেপ এল। গত ২৪ মে টেক্সাসের স্কুলে বন্দুক হামলা এবং তার আগে নিউ ইয়র্কের বাফেলোয় সুপারমার্কেটে বন্দুক হামলা হয়। এসব হামলায় অন্তত ৩১ জন নিহত হয়েছে।
এ সমস্ত ঘটনার প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইন কঠোর করার দাবি নতুন করে সামনে আসে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন অস্ত্র আইনে বড় ধরনের সংস্কারের জন্য তাগাদা দেন।
অ্যাসল্ট রাইফেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া কিংবা অন্ততপক্ষে এ ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র যারা কিনবে তাদের বয়সসীমা বাড়িয়ে দেওয়ার প্রস্তাব রাখেন তিনি।
গত মাসে টেক্সাসে হামলার ঘটনায় অ্যাসল্ট রাইফেল ব্যবহার করা হয়েছিল। বন্দুকধারী ১৮ বছর বয়স পূর্ণ হওয়ার কয়েক দিনের মাথায়ই দুটি আধা স্বয়ংক্রিয় রাইফেল কিনেছিলেন বলে ধারণা করা হয়।
গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক:
সেনেটে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণ বিল পাসের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রে কয়েক দশকের মধ্যে এবারই প্রথম কোনও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণ বিল ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান দুই দলের কাছ থেকেই সমর্থন পেয়েছে।
অতীত ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায়, যখনই আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করার প্রশ্ন এসেছে, তখনই তাতে বাধা দিয়ে এসেছে রিপাবলিকান পার্টি।
এবার ১০০ সদস্যের সেনেটে বিলের পক্ষে পড়েছে ৬৫ ভোট। ৫০ জন ডেমোক্র্যাটের সবাই, এমনকী দলের সবচেয়ে রক্ষণশীল দুই সদস্যও বিলের পক্ষে ভোট দিয়েছেন।
তাদের সঙ্গে যোগ দিয়ে ভোট দিয়েছেন রিপাবলিকান দলের সেনেট নেতা মিচ ম্যাককনেল এবং লিন্ডসে গ্রাহামও। এই দুইজনই সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী এবং বন্দুক-নিয়ন্ত্রণ আইনের দীর্ঘদিনের বিরোধী।
অবশ্য তারপরও বিলের বিপক্ষে ৩৩ ভোট পড়ার মানে সেনেটের দুই-তৃতীয়াংশ রিপাবলিকানই বিলে সমর্থন দেয়নি।
টেক্সাসের সেনেটর টেড ক্রুজ, যিনি ২০২৪ সালে রিপাবলিকান টিকেটে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হওয়ার চেষ্টায় আছেন, তিনি আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণ বিলের তীব্র নিন্দা করেছেন।
ক্রুজ বলেছেন, এ বিলের মধ্য দিয়ে আইন মেনে চলা নাগরিকদেরকে নিরস্ত্র করা হচ্ছে, শিশুদের সুরক্ষায় চিন্তাশীল কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।”
যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক নিরাপত্তা নিয়ে আন্দোলন করে আসা সংগঠন ‘মার্চ ফর আওয়ার লাইভস’ বিল পাসকে স্বাগত জানিয়েছে। ২০১৮ সালে ফ্লোরিডার পার্কল্যান্ড স্কুলে হামলার ঘটনায় বেঁচে যাওয়ারা এই সংগঠন গড়েছে।
সংগঠনটি এক টুইটে বলেছে, “আমরা জানি, এ মহামারীর অবসান ঘটাতে আরও অনেক কাজ কোর আছে। তবে অনেক কঠোর পরিশ্রম করে আমরা আজকের রাতটি পেয়েছি। আমরা সরে আসিনি কিংবা চুপ করে যাইনি। বন্দুক সহিংসতা বন্ধ করতে আমরা আজীবন লড়ব।”
ওদিকে, ন্যাশনাল রাইফেল অ্যাসোসিয়েশন (এনআরএ) বিলটির বিরোধিতা করেছে। তারা বলছে, এ আইন সহিংসতা ঠেকাতে পারবে না।
বন্দুক নিয়ন্ত্রণ এত বড় বিষয় কেন?
যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে ৩৯ কোটি ৩০ লাখ আগ্নেয়াস্ত্র আছে। গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘গান ভায়োলেন্স আর্কাইভ’ অনুযায়ী, বিশ্বের সম্পদশালী দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে আগ্নেয়াস্ত্রজনিত মৃত্যুহার সবচেয়ে বেশি।
এবছর যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক সহিংসতায় ২০ হাজার ৯শ’র বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। এর মধ্যে খুন এবং আত্মহত্যার ঘটনাও আছে।
কিন্তু এটি এমন একটি দেশ, যেখানে সংবিধানের দ্বিতীয় সংশোধনীর মধ্য দিয়ে অনেকেরই অস্ত্রের অধিকারকে সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে ‘অস্ত্র রাখা এবং তা বহনের’ সুযোগ দিয়ে।
যুক্তরাষ্ট্রে সর্বশেষ কেন্দ্রীয়ভাবে উল্লেখজনক আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইন পাস হয়েছিল ১৯৯৪ সালে।
সে সময় বেসামরিক নাগরিকদের ব্যবহারের জন্য অ্যাসল্ট রাইফেল ও অধিক ধারণক্ষমতাসম্পন্ন ম্যাগাজিন উৎপাদন নিষিদ্ধ করতে ওই আইন পাস করা হয়েছিল। কিন্তু এর এক দশক পরই আইনটি বিলুপ্ত হয়।
বৃহস্পতিবার দেশটির সুপ্রিম কোর্ট নিউ ইয়র্কের একটি আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইন বাতিল করে আদতে বন্দুকের অধিকারের পরিধি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।