রাশিয়া গ্যাস সরবরাহ কমানোয় বিপাকে জার্মান শিল্পখাত
নিউজ ডেস্ক, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published: 23 Jun 2022 07:26 PM BdST Updated: 23 Jun 2022 07:26 PM BdST
-
ছবি রয়টার্সের
রাশিয়ার গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যেতে পারে এমন আশঙ্কার সঙ্গে সমন্বয় সাধনে ইউরোপের সবচেয়ে বড় অর্থনীতিকে পরিচালনা করা জার্মান কোম্পানিগুলোকে এখন উৎপাদন কমানো ও বেশি দূষণের জন্য দায়ী জ্বালানিতে ফেরার মতো বেদনাদায়ক পথ বেছে নিতে হচ্ছে।
অথচ কিছুদিন আগেও এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়টি ছিল অচিন্ত্যনীয়।
কিন্তু রাশিয়ার গ্যাস সরবরাহ কমে আসায় কারখানা সচল রাখতে ও অর্থনৈতিক ক্ষতি কমাতে জার্মানিজুড়ে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানকে এখন বিকল্পের খোঁজে প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করতে হয়েছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
কোন কারখানার উৎপাদন আগে কমাতে হবে তা নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে রাসায়নিক জায়ান্ট বিএএসএফকে; প্রতিদ্বন্দ্বী ল্যাংসেসও হয়তো কয়লাচালিত কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধে দেরি করবে।
কয়েকদিন আগে গ্যাজপ্রম রাশিয়া থেকে জার্মানিতে যাওয়া নর্ড স্ট্রিম ১ পাইপলাইন দিয়ে গ্যাসের প্রবাহ ৬০ শতাংশ কমিয়ে দেওয়ায় প্রোক্টর অ্যান্ড গ্যাম্বলের সরবরাহকারী খেলহাইম ফাইবার লাখ লাখ ডলার খরচ করে তাদের গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রটি তেলে চালানোর উপযুক্ত করার কথা ভাবছে।
৮৬ বছরের পুরনো বাভারিয়াভিত্তিক এ কোম্পানি জীবাণুমুক্তকরণ সামগ্রী ও পরিস্রাবনে ব্যবহৃত হয় এমস রাসায়নিক তন্তু সরবরাহ করে আসছে। তাদের গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র তেলে চালানোর উপযুক্ত করতে অন্তত ২১ লাখ ডলার লাগবে; এজন্য রাজ্যের কাছে অর্থ সাহায্যও চেয়েছে তারা।
“অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপ হচ্ছে এবং আমাদের জমা অর্থ দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে,” বলেছেন কোম্পানির নির্বাহী ওলফগ্যাং অট।
বিদ্যুৎকেন্দ্রতে তেলে চালিত কেন্দ্রে রূপান্তর করতে ৬ থেকে ৮ মাসের মতো সময় লাগবে বলেও তিনি জানান।
“তেলের কেবল একটাই সুবিধা আছে, তা হচ্ছে নিরূপদ্রব সরবরাহ,” বলেছেন তিনি।
অট জানান, তাদের কোম্পানি ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান কেএফডব্লিউ-র কাছ থেকে ঋণ নেওয়ার বিষয়েও আলোচনা করছে। গ্যাসের দামের ঊর্ধ্বগতিতে ক্ষতিগ্রস্ত কোম্পানিগুলোর সহায়তায় একটি প্রকল্পও হাতে নিয়েছে কেএফডব্লিউ।
আকরিক থেকে তামা আলাদা করায় ইউরোপের শীর্ষ কোম্পানি অরুবিস বলেছে, তারাও বিকল্প খুঁজছে কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর খাপ খাওয়ানোটা বেশ ব্যয়বহুল এবং সময়সাপেক্ষ হবে।
এ জ্বালানিনির্ভর কোম্পানিগুলো প্রতিবছর জ্বালানিবাবদ এক হাজার ৭০০ কোটি ইউরো খরচ করে।
চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেইনে হামলা চালানোর আগ পর্যন্ত এ কোম্পানিগুলোকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের জলবায়ু লক্ষ্যের সঙ্গে মিলিয়ে জার্মানির প্রচেষ্টার সঙ্গে সমন্বয় রেখে কার্বন নিঃসরণ ধীরে ধীরে কমিয়ে আনার দিকে নজর দিতে হচ্ছিল।
এখন তাদের অগ্রাধিকার হচ্ছে টিকে থাকা, এবং এজন্য যদি বৈশ্বিক উষ্ণতা মোকাবেলায় চেষ্টার গতি কমিয়ে দিতে হয়, তাতেও তারা রাজি।
গ্রিনস জোটের সদস্য, জার্মানির অর্থমন্ত্রী রবার্ট হাবেক বলেছেন, কয়লার ওপর আগের তুলনায় বেশি নির্ভরতা জার্মানির কার্বন নিঃসরণের মাত্রা বাড়াবে।
“খোলা চোখে বিশ্বকে দেখা কারও জন্যই এই ব্যাপারটা সন্তুষ্টিদায়ক হতে পারে না,” বলেছেন তিনি।
বিদ্যুতের জন্য তেল পোড়ানো হলে তাতে কয়লার মতোই বেশি দূষণ হবে। এই প্রক্রিয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদন থেকে ইউরোপ এক দশক আগেই মোটাদাগে সরে এসেছিল।
অতীতেও তেল ও গ্যাসে বেশি খরচ হতো, সে তুলনায় কয়লায় বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানো ছিল বেশ সস্তা। কিন্তু এখন, সব জ্বালানিই দামি ও বাজার অস্থিতিশীল হওয়ায় কীসে ক্ষতি কম হবে তা বের করা বেশ কষ্টসাধ্য।
ইউক্রেইনে রাশিয়ার আক্রমণের পর পশ্চিমাদের প্রতিক্রিয়া ও নানান উদ্বেগ থেকে ইউরোপজুড়ে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম রেকর্ডও ছুঁয়েছে।
এখন পর্যন্ত জার্মানি গ্যাস সরবরাহ সংকট মোকাবেলায় তাদের তিন স্তর পরিকল্পনার প্রথম স্তর ‘প্রাথমিক সতর্কতা স্তর’ কার্যকর করেছে।
দেশটির জ্বালানি নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ মঙ্গলবার উৎপাদকদের কম গ্যাস ব্যবহারে উৎসাহিত করতে সহানুভূতিশীল এক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শিল্পখাতে গ্যাস ব্যবহার কমানোর পরিকল্পনার রূপরেখা দিয়েছে।
“লাখ লাখ কোম্পানি জ্বালানি সাশ্রয়ে কাজ করছে,” বলেছেন জার্মানির শিল্পসমিতি বিডিআইয়ের প্রেসিডেন্ট সিগফ্রিড রুসভু্র্ম।
বিক্রির দিক থেকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় রাসায়নিক কোম্পানি বিএএসএফ এখন তাদের লুদভিগশাফেন সাইটের জন্য জরুরি পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে। এই কেন্দ্রটি জার্মানির একক বৃহত্তম শিল্প বিদ্যুৎ ভোক্তা, যার দেশের মোট চাহিদার ১ শতাংশেরও বেশি বিদ্যুৎ লাগে।
এই শিল্পকেন্দ্রটির গ্যাসের যে সর্বোচ্চ চাহিদা তার তুলনায় সরবরাহ ৫০ শতাংশের নিচে না নামলে বিএএসএফ লুদভিগশাফেনের কার্যক্রম চালিয়ে নিতে পারবে; এখানে প্রায় দুইশটি উৎপাদন অংশ রয়েছে এবং এর প্রতিবছর অন্তত ৬ টেরাওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুৎ লাগে।
উৎপাদন কী মাত্রায় কমাতে হবে, তা নির্ভর করছে গ্যাসের প্রাপ্যতার উপর; এর উপর নির্ভর করবে বিকল্প হিসেবে তেলের বিষয়টিও; কিন্তু সরবরাহ যদি দীর্ঘ সময় ধরে চাহিদার ৫০ শতাংশের চেয়েও নিচে থাকে তাহলে উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়া লাগতে পারে, রয়টার্সকে এমনটাই বলেছে বিএএসএফ।
বন্ধ করার ক্ষেত্রে কোন অংশকে অগ্রাধিকার দিতে হবে ভোক্তা ও রাজনীতিবিদদের সঙ্গে কথা বলার পর তা ঠিক করা হবে, জানিয়েছে তারা।
কোম্পানিটি বলছে, তাদের অনেক পণ্যই খাদ্য উৎপাদন, ওষুধ ও গাড়ি নির্মাণ শিল্পের জন্য দরকারি।
“যদি বন্ধ করতেই হয়, তাহলে কোন কেন্দ্রটি আগে বন্ধ করবো সে বিষয়ে ফেডারেল নেটওয়ার্ক এজেন্সির সঙ্গে আলোচনা করতে হবে,” বলেছে কোম্পানিটি। লুদভিগশাফেনের জরুরি পরিকল্পনা নিয়ে এর বিস্তারিত আর কিছু বলতে রাজি হয়নি তারা।
অন্যদিকে বিশেষায়িত রাসায়নিক পণ্য নির্মাতা ল্যাংসেস ভাবছে কি করে কারখানা বন্ধ ঠেকানো যায়।
একটি বিকল্প হচ্ছে, লেভারকুসেন ও ক্রেফেল্ডে তাদের যেসব কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র আছে সেগুলো ধীরে ধীরে বন্ধের পরিকল্পনা পিছিয়ে দেওয়া।
কিন্তু এতে কার্বন নিঃসরণের মাত্রা বাড়বে।
আবার বিকল্প জ্বালানির মাধ্যমে পণ্য উৎপাদন অব্যাহত রাখতে চাইলে খরচ অনেক বেশি বেড়ে যাবে, যাতে কারখানা বন্ধ এবং শত শত মানুষ চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে পড়বে, বলেছে কোম্পানিটি।
-
কলম্বিয়ায় ষাঁড়ের লড়াই চলাকালে স্টেডিয়ামের স্ট্যান্ড ধসে নিহত ৬
-
পুতিনের জয় বিশ্বের জন্য বিপর্যয়কর হবে: জনসন
-
কিইভে দফায় দফায় রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা
-
ইউক্রেইন যুদ্ধ শুরুর পর প্রথম বিদেশ সফরে যাচ্ছেন পুতিন
-
বিশ্বের সবচেয়ে বড় ব্যাকটেরিয়ার সন্ধান, খালি চোখেই দেখা যায়
-
রাশিয়া থেকে আর সোনা কিনবে না যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য
-
কাতার থেকে অনুদান নেওয়ার অভিযোগ, বিতর্কে প্রিন্স চার্লস
-
কীসের পদত্যাগ, আরও এক যুগ ক্ষমতায় থাকতে চান জনসন
-
কলম্বিয়ায় ষাঁড়ের লড়াই চলাকালে স্টেডিয়ামের স্ট্যান্ড ধসে নিহত ৬
-
পুতিনের জয় বিশ্বের জন্য বিপর্যয়কর হবে: জনসন
-
ইউক্রেইন যুদ্ধ শুরুর পর প্রথম বিদেশ সফরে যাচ্ছেন পুতিন
-
জি-৭ সম্মেলন শুরুর আগে কিইভে মুহুর্মূহু রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা
-
বিশ্বের সবচেয়ে বড় ব্যাকটেরিয়ার সন্ধান, খালি চোখেই দেখা যায়
-
কাতার থেকে অনুদান নেওয়ার অভিযোগ, বিতর্কে প্রিন্স চার্লস
সর্বাধিক পঠিত
- প্রথম টোল দিয়ে বাইক নিয়ে পদ্মা সেতু পার হলেন যিনি
- সাঁতরে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কী কথা বললেন তরুণী?
- পুলিশের সামনে শিক্ষকের গলায় জুতার মালা: চলছে প্রতিবাদ
- পদ্মা সেতুর নাটবল্টু খুলে ‘টিকটক’: সেই যুবক গ্রেপ্তার
- পদ্মা সেতুতে মোটর বাইক ওঠা নিষিদ্ধ হল
- পদ্মা সেতুতে বাইক দুর্ঘটনায় ঝরল দুই প্রাণ
- ‘প্রধানমন্ত্রীর পর আমিই প্রথম, অনুভূতিটা অন্যরকম’
- ‘মাদারীপুর এত কাছে!’
- পদ্মা সেতু খুলেছে, ‘হাত নেড়ে কুল পাচ্ছে না’ ঢাকার ট্রাফিক পুলিশ
- ৩ সেতুতে টোল দিয়ে ৪ ঘণ্টায় বরিশাল