ইউক্রেইনের গম বের করে আনতে রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনায় তুরস্ক

বসফরাস প্রণালী দিয়ে ইউক্রেইনে পড়ে থাকা খাদ্যশস্য বের করে আনতে রাশিয়া ও ইউক্রেইনের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে তুরস্ক।

>>রয়টার্স
Published : 26 May 2022, 04:09 PM
Updated : 26 May 2022, 04:09 PM

তুরস্কের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বৃহস্পতিবার এ খবর জানান।

গত ফেব্রুয়ারি মাসে আগ্রাসন শুরু পর রাশিয়া কৃষ্ণ সাগরে ইউক্রেইনের সবগুলো বন্দর অবরোধ করে রেখেছে। ফলে সমুদ্র পথে ইউক্রেইনের রপ্তানি শূন্যে নেমে এসেছে। এদিকে, দেশটির বিভিন্ন গুদামে পড়ে নষ্ট হচ্ছে দুই কোটি টনের বেশি গম।

বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ শস্য উৎপাদন ও রপ্তানিকারক দেশ ইউক্রেইন। রাশিয়া ও ইউক্রেইন মিলে বিশ্বের একতৃতীয়াংশ গমের যোগান দেয়। যুদ্ধের কারণে ইউক্রেইন থেকে গমসহ অন্যান্য খাদ্যশস্য রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাওয়ার নেতিবাচক প্রভাব পুরো বিশ্বের উপরই পড়েছে। দেখা দিয়েছে খাদ্য সংকট। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দাম।

এ অবস্থায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ইউক্রেইনে পড়ে থাকা ওই গম বের করতে দিতে মস্কোর প্রতি আহ্বান জানানো হয়। জবাবে মস্কো বলেছে, আগে রাশিয়ার উপর থেকে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিতে হবে। তারপর গম বের করে আনার অনুমতি দেওয়া হবে।

কৃষ্ণ সাগরে তুরস্কের দুই প্রতিবেশী দেশ ইউক্রেইন ও রাশিয়া। দুই দেশের সঙ্গেই তুরস্কের সুসম্পর্ক রয়েছে। যদিও তুরস্কে ইউক্রেইনে রাশিয়ার আগ্রাসনের সমালোচনা করেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তুরস্কের ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘‘ইউক্রেইন থেকে শস্য রপ্তানির জন্য তুরস্ক রাশিয়া এবং ইউক্রেইন উভয়ের মধ্যে মধ্যস্থতার চেষ্টা করছে।

‘‘তুরস্ক থেকে একটি করিডোর খুলে, যেখানে ওই শস্যের চাহিদা আছে সেগুলোকে সেইসব বাজারে পৌঁছে দেওয়া। এখনো আলোচনা চলছে।”

এ বিষয়ে জানতে রয়টার্স থেকে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ ‍তায়েপ এরদোয়ানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু তার কার্যালয় থেকে সাড়া পাওয়া যায়নি।

তবে এ বিষয়ে অবগত আছেন এমন দুই কর্মকর্তাও ইউক্রেইন থেকে শস্য বের করে আনতে সাহায্য করতে তুরস্কের আলোচনা শুরুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তাদের একজন বলেন, যদিও তুরস্ক নেটোর সদস্য। কিন্তু রাশিয়া এ জোটের অন্যান্য পশ্চিমা সদস্যদের তুলনায় তুরস্ককে অধিক ‘নিরপেক্ষ’ মনে করে।

একদিন আগে বুধবার একজন শীর্ষ ইউরোপীয় কূটনীতিকও একই কথা বলেছিলেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কূটনীতিক বলেছিলেন, ‘‘ওডেসা থেকে কৃষ্ণ সাগর হয়ে এই ধরনের রপ্তানি পর্যবেক্ষণে অবদান রাখতে তুরস্ক প্রস্তুত আছে। কারণ, ঐতিহ্যগতভাবে কৃষ্ণ সাগরে তুরস্কের অবস্থান খুবই শক্তিশালী এবং তারা সাহায্য করতে প্রস্তুত।”

কৃষ্ণ সাগরে তুরস্কের দুইটি রণতরী, দুইটি সাবমেরিন, ছয়টি টহল এবং দ্রুত আঘাত হানতে সক্ষম জাহাজ মোতায়েন করা আছে।

ধারণা করা হয় এগুলো কৃষ্ণ সাগরে পণ্যবাহী জাহাজ চলাচলের পথ পাহারা দেয় এবং সমু্দ্রে খনিজ খোঁজে। রাশিয়া এবং ইউক্রেইন উভয় দেশ পরষ্পরের বিরুদ্ধে একই কাজ করার অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরেই করে আসছে।

শুধু ইউক্রেইনের রপ্তানি বন্ধ হওয়াতে নয় বরং পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়ার পণ্য রপ্তানিও অনেকাংশে কমে গেছে। যার প্রভাবও বিশ্ব বাজারে চরম খারাপভাবে পড়েছে। রাশিয়াও বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ খাদ্যপণ্য উৎপাদনকারী ও রপ্তানিকারক দেশ।

যে কারণে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তনিও গুতেরেজ সব পক্ষকে একটি ‘প্যাকেজ ডিলে’ আসার আহ্বান করেছেন। যাতে ইউক্রেইন ও রাশিয়া থেকে খাদ্যশস্য ও সার রপ্তানি আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা যায়।

এ ধরনের কোনো চুক্তিতে উপনীত হওয়া সত্যিই বেশ কঠিন।