গোলা নেই, ইউক্রেইনকে ট্যাংক দিতে দেরি হচ্ছে জার্মানির

জার্মানি সামরিকভাবে কয়েক দশক ধরে তৎপরতাহীন থাকার পর চার সপ্তাহ আগে রাশিয়ার আক্রমণ ঠেকাতে ইউক্রেইনকে কয়েক ডজন বিমানবিধ্বংসী ট্যাংক দিতে রাজি হয়।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 May 2022, 11:04 AM
Updated : 26 May 2022, 11:04 AM

দেশটির এই সিদ্ধান্তকে বাঁক বদলের অংশ বলা হলেও বার্লিন জানিয়েছে, তারা ইউক্রেইনকে ওই গিপাদ ট্যাংকের প্রথম চালান জুলাইতে দিতে পারবে ।

পূ্র্বাঞ্চলে রুশ বাহিনীর সাঁড়াশি আক্রমণের মুখে ট্যাংক পেতে এত দেরি হওয়া নিয়ে মঙ্গলবার ইউক্রেইনের পার্লামেন্ট অসন্তোষ প্রকাশ করেছে।

“আমাদের( ট্যাংক পেতে) জুলাই হচ্ছে, বলে কী? আমি এভাবে দেখাচ্ছি। চলুন এক মা’কে জিজ্ঞেস করি, ‍যিনি সদ্যজাত শিশুকে নিয়ে বেজমেন্টে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন, যার কাছে শিশুখাদ্য নেই, তার জন্য জুলাই কতটা দূর?,” ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এমনটাই বলেছেন ইউক্রেইন পার্লামেন্টের সদস্য আনাস্তাসিয়া রাদিনা। 

মস্কো যখন তার বেশিরভাগ সেনা ও অস্ত্র ইউক্রেইনের অন্যান্য অঞ্চল থেকে সরিয়ে পূর্ব ও দক্ষিণ দিকে সরানো শুরু করে তখন থেকেই কিইভ মিত্রদের কাছে ভারি অস্ত্রশস্ত্রের জন্য কাতর অনুরোধ জানিয়ে আসছিল।

কিন্তু যেসব কারণে জার্মানির এই অনুরোধে সাড়া দিতে দেরি হচ্ছে, গোলার ঘাটতি তার অন্যতম বলে জানিয়েছেন সামরিক খাত সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা ও ইউক্রেইনের রাষ্ট্রদূত। ইউক্রেইনকে অস্ত্র দেওয়ার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি দেওয়ার সময়ই বার্লিন বিষয়টি জানতো।

২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেইনে রাশিয়ার আক্রমণ কীভাবে বার্লিনকে পেছনে ঠেলে দিয়েছে, কিইভকে অস্ত্র দেওয়া নিয়ে দ্বিধাই তা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখাচ্ছে। বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ প্রতিরক্ষা খাত থাকা সত্ত্বেও সামরিক পদক্ষেপের ব্যাপারে জার্মানি যে পুরোপুরি প্রস্তুত নয় সে কথা দেশটির সেনাপ্রধানও স্বীকার করেছেন। অথচ সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালেও দেশটি ৯৩৫ কোটি ইউরো মূল্যের অস্ত্রশস্ত্র রপ্তানি করেছে।

গিপাদ ট্যাংকের ৩৫ মিলিমিটার গোলাগুলো আগুয়ান বিমান ঠেকাতে কার্যকর হলেও জার্মানি এখন আর এ ট্যাংক ব্যবহার করে না, তাই তাদের ভাণ্ডারে এর গোলার মজুদও তেমন নেই। এ গোলাগুলো আবার বিশেষ প্রক্রিয়ায় বানাতে হয়। 

“ইউক্রেইনে অস্ত্র সরবারহ তখনই অর্থপূর্ণ হবে যখন এর সঙ্গে গোলাও যাবে। প্রথম থেকেই এ ব্যাপারটা সবার কাছে পরিষ্কার ছিল,” সংবেদনশীল বিষয় হওয়া পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে রয়টার্সকে এমনটাই বলেছে সামরিক খাত সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা।

ট্যাংকের গোলার ঘাটতি নিয়ে জানতে চাওয়া হলে জার্মানির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র জানান, সরকার যেখানে সহায়তা দেওয়া সম্ভব, সেখানে দিচ্ছে।

গত শুক্রবার বার্লিন জানিয়েছে, তারা গোলা পেয়েছে এবং ট্যাংকও পাঠাচ্ছে। কিন্তু পর্যাপ্ত গোলা মিলল কীভাবে, সে বিষয়ে জিজ্ঞাসার জবাব দেয়নি দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।

২৪ ফেব্রুয়ারি মস্কো ইউক্রেইনে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ শুরু করার কয়েক ঘণ্টা পর জার্মান সেনাপ্রধান লিংকডিনে সামরিক খাতের ক্ষেত্রে জার্মানির অবজ্ঞা নিয়ে ‘হতাশা’ প্রকাশ করেন। 

জার্মানির সেনাবাহিনী ‘মোটামুটি খালি হাতেই আছে’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এই ত্রুটি কাটিয়ে উঠতে ২৭ ফেব্রুয়ারি চ্যান্সেলর ওলাফ শলাৎজ প্রতিরক্ষা খাতের জন্য ১০০ বিলিয়ন ইউরো তহবিলের প্রতিশ্রুতি দেন।

তবে এটি মোটেও ইউক্রেইনে রাশিয়ার আক্রমণের প্রেক্ষিতে স্বতস্ফূর্তভাবে হয়নি, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় কয়েক মাস আগেই এ ধরনের একটি প্রস্তাব দিয়ে রেখেছিল, সরকার ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে এসে তা গ্রহণ করে বলে বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন।   

গিপাদ ট্যাংকের বাইরেও বার্লিন ইউক্রেইনকে আরও ভারি অস্ত্রশস্ত্র দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে; আর ওই বিশেষ তহবিলের অর্থে আগামী ৪-৫ বছর নিজেদের প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়ানোর লক্ষ্য ঠিক করেছে। নেটোর চাহিদা মতো দেশটি যদি তাদের জিডিপির ২ শতাংশ প্রতিরক্ষায় ব্যয় করে তাহলে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পর সামরিক খাতে খরচের দিক থেকে জার্মানি বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম দেশে পরিণত হবে, বলছে স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ই্নস্টিটিউট। 

তবে জার্মানির পার্লামেন্ট এখনও ওই বিশেষ তহবিলের প্রস্তাব পাস করেনি। সামরিক খাতে ব্যয় বৃদ্ধির ব্যাপারে জার্মান রাজনীতিকরা এখনও পুরোপুরি একমত হতে পারেননি।

দেশটির পার্লামেন্টের প্রতিরক্ষা কমিটির প্রধান স্ট্রাক-জিমেরমান যেমন বলছেন, ফের সামরিক শক্তি হয়ে ওঠার ব্যাপারে মানসিকতায় পরিবর্তনের সঙ্গে জার্মানদের প্রথমে খাপ খাইয়ে নিতে হবে।

স্ট্রাক জিমেরমানের ফ্রি ডেমোক্রেটরা শলাজের জোট সরকারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শরিক দল। দুটি বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে জার্মানরা নিজেদেরকে সংঘাত থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করেছে।

`বন্ধুরা ঘিরে রেখেছে তাদের’, বার্লিন দেওয়ালের পতনের পর জার্মানরা এমনটাই মনে করেছিল বলে ১৯৯৭ সালে তাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছিলেন। সমগ্র জার্মান রাজনৈতিক অঙ্গন তখন থেকেই অন্যান্য দেশের সঙ্গে যোগাযোগ ও বাণিজ্যের দিকে মনোযোগী হয়। এভাবেই এক পর্যায়ে তারা প্রাকৃতিক গ্যাসের জন্য রাশিয়ার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। জার্মানিতে সরবরাহ হওয়া গ্যাসের অর্ধেকই দেয় রাশিয়া।