আগের দিন সোমবার ফিলাডেলফিয়ায় নিজেদের হাই স্কুল থেকে বের হওয়ার পরপরই তিন কিশোর গুলিবিদ্ধ হয়। গত সপ্তাহে মিশিগান, লুইজিয়ানা ও টেনেসিতে হাইস্কুলের সনদ দেওয়ার অনুষ্ঠানে তিনটি গোলাগুলির ঘটনা ঘটে।
এ ধরনের ঘটনাগুলো পর্যবেক্ষণ করা গবেষক ডেভিড রিডম্যান বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের স্কুলগুলোতে গোলাগুলির ঘটনা রেকর্ড সংখ্যায় বৃদ্ধি পেয়েছে, চলতি বছরের প্রায় প্রতিদিন কোনো না কোনো স্কুলে গোলাগুলি বা বন্দুকবাজির ঘটনা ঘটেছে।
মঙ্গলবার টেক্সাসের প্রাথমিক স্কুলে ঘটা ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা যখন হতবাক, বিশেষজ্ঞরা তখন সতর্ক করে বলছেন, এ ধরনের ছোট ছোট ঘটনাগুলোর দৈনিক মহামারী অনেকটা অলক্ষ্যেই থেকে যাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নেভাল পোস্টগ্র্যাজুয়েট স্কুলের সেন্টার ফর হোমল্যান্ড ডিফেন্স অ্যান্ড সিকিউরিটির কে-টুয়েলভ স্কুল শুটিং ডেটাবেইজের প্রধান গবেষক রিডম্যানের ভাষ্য, চলতি বছর এ পর্যন্ত দেশটির স্কুলগুলোতে ১৩৭টি গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। অর্থাৎ প্রায় প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। আর গত বছর ২৪৯টি ঘটনা ঘটেছিল।
স্কুলের এলাকার মধ্যে বন্দুক উঁচিয়ে আস্ফালন, গুলিবর্ষণ বা স্কুলের সম্পত্তিতে গুলি- এ ধরনের প্রতিটি ঘটনা হিসাবে আনা হচ্ছে এ গবেষণায়।
ছবি: রয়টার্স
তিনি জানান, মঙ্গলবার সাউথ টেক্সাসের ইউভালডে শহরের রব এলিমেন্টারি স্কুলে নির্বিচার গুলিবর্ষণের ঘটনার আগে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে অন্যান স্কুলগুলোতে গোলাগুলির ঘটনায় সাত শিক্ষার্থীসহ ২৭ জন নিহত হয়েছিল, আহত হয়েছিল ৭৭ জন।
স্কুলগুলোতে নির্বিচার গুলিবর্ষণের ঘটনাগুলো ক্রমেই আরও প্রাণঘাতী হয়ে উঠছে। স্কুলে সবচেয়ে প্রাণঘাতী গুলিবর্ষণের তিনটি ঘটনার সবগুলোই গত এক দশকে ঘটেছে বলে ‘ভায়োলেন্স প্রজেক্টের’ সহপ্রতিষ্ঠাতা জেমস ডেনসলি জানিয়েছেন। নির্বিচার গুলিবর্ষণের যেসব ঘটনায় চার জন বা তারও বেশি মানুষ নিহত হয় সেগুলোর তথ্য সংগ্রহ করে এই প্রজেক্ট।
ওই তিনটি গোলাগুলির ঘটনাগুলি হল- ২০১২ সালে স্যান্ডি হুক প্রাথমিক স্কুলে বন্দুকধারী ২৬ শিশু ও স্কুলের একজন কর্মীকে গুলি করে হত্যা করে, ২০১৮ সালে ফ্লোরিডার পার্কল্যান্ডে মার্জরি স্টোনম্যান ডগলাস হাইস্কুলের গোলাগুলির ঘটনায় ১৭ জনের প্রাণ যায় এবং মঙ্গলবার টেক্সাসে ঘটা হত্যাকাণ্ড।
যুক্তরাষ্ট্রের স্কুল শিশুদের ওপর প্রাণঘাতী সহিংসতার ঝুঁকি যেভাবে ছায়া ফেলে আছে অন্য অধিকাংশ দেশেই তা নেই। মার্কিন শিশুরা অল্প বয়স থেকেই নিয়মিত ‘অ্যাকটিভ শুটার ড্রিল’ অনুশীলন করে, এর মাধ্যমে বন্দুকধারীর হামলা হলে শ্রেণিকক্ষের লাইট বন্ধ করে ও প্রবেশপথ আটকে দিয়ে কীভাবে লুকিয়ে থাকতে হবে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের তা শেখানো হয়।
আগাম সতর্কতা হিসেবে কিছু স্কুলে প্রধান গেট বন্ধ করার পাশাপাশি শ্রেণিকক্ষের দরজাও বন্ধ করে রাখা হয়। এভাবে সম্ভাব্য বন্দুকধারীদের ঠেকিয়ে রাখার আশা করে তারা। টেক্সাসে স্কুলগুলোর জন্য একটি মার্শাল কর্মসূচীও আছে, যার আওতায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকরা হ্যান্ডগান বহন করেন।
গোলাগুলির ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় স্কুলের নিরাপত্তাকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রে একটি শিল্পও গড়ে উঠেছে। বহু স্কুলে বুলেট-প্রুফ দরজা ও জানালা, বিশেষ তালা লাগানো হয়েছে; বসানো হয়েছে মেটাল ডিটেক্টর। কিছু স্কুল সশস্ত্র রক্ষী ভাড়া করে পাহারা জোরদার করেছে।
কিন্তু তারপরও এগুলো প্রায়ই বন্দুকের ক্যাম্পাসে প্রবেশ ও প্রাণঘাতী ফলাফল ঠেকানোর জন্য যথেষ্ট হয়নি বলে মন্তব্য ডেনসলির।