মারিউপোলের আত্মসমর্পণকারী যোদ্ধাদের নিয়ে ‘শঙ্কা’

মারিউপোলের আজভস্তাইল ইস্পাত কারখানায় রাশিয়ার বাহিনীগুলোর কাছে আত্মসমর্পণ করা ২৫০ জনেরও বেশি ইউক্রেইনীয় সেনার ভাগ্যে কী ঘটতে যাচ্ছে তা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। 

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 May 2022, 07:21 AM
Updated : 18 May 2022, 07:34 AM

এই আত্মসমর্পণের মাধ্যমে ইউক্রেইনের যুদ্ধে রাশিয়ার সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক অবরোধের অবসান ঘটেছে।

সোমবার রাতে রাশিয়ার সাঁজোয়া যানগুলোর পাহারায় আত্মসমর্পণকারী ইউক্রেইনীয় যোদ্ধাদের বহনকারী বাসগুলো ইস্পাত কারখানাটি ছেড়ে যায়। এর মধ্যে পাঁচটি বাস রাশিয়ার অধিকৃত নোভোজভস্ক শহরে যায়, ইউক্রেইনের আহত যোদ্ধাদের সেখানে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে বলে মস্কো জানিয়েছে।

আজভস্তাইল থেকে রওনা হওয়া আরও সাতটি বাস দোনেৎস্কের কাছে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রিত ওলেনিভকা শহরে নতুন করে আবার চালু করা একটি কারাগারে গিয়ে পৌঁছায় বলে জানিয়েছেন বার্তা সংস্থা রয়টার্সের একজন প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিক। 

ছবি: রয়টার্স

রাশিয়া জানিয়েছে, অন্তত ২৫৬ জন ইউক্রেইনীয় যোদ্ধা ‘তাদের অস্ত্র নামিয়ে রেখে আত্মসমর্পণ করেছে’, এদের মধ্যে ৫১ জন গুরুতর আহত। ইউক্রেইন বলেছে, ২৬৪ জন সেনা আজভস্তাইল ছেড়ে গেছে, তাদের মধ্যে ৫৩ জন আহত রয়েছেন।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভিডিওতে দেখা গেছে, ইউক্রেইনীয় যোদ্ধারা ইস্পাত কারখানাটি ছেড়ে যাচ্ছেন, তাদের কয়েকজনকে স্ট্রেচারে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে আর বাকিরা হাত মাথার ওপর তুলে এগিয়ে যাওয়ার সময় রুশ সেনারা তাদের তল্লাশি করছে।

ওলেনিভকায় যে বাসগুলো গিয়েছে সেগুলোর অন্তত একটির মধ্যে কিছু নারী যোদ্ধাও রয়েছেন বলে রয়টার্সের ভিডিওতে দেখা গেছে।

উভয়পক্ষই বলেছে, একটি চুক্তি হয়েছে যার অধীনে সব ইউক্রেইনীয় সেনারা ইস্পাত কারখানা ছেড়ে যাবে। কিন্তু এ চুক্তির বিস্তারিত অনেক কিছু এখনও প্রকাশ করা হয়নি। এরমধ্যে কতোজন যোদ্ধা এখনও ইস্পাত কারখানাটিতে রয়ে গেছে এবং দুপক্ষের মধ্যে কোনো বন্দি বিনিময় চুক্তি হয়েছে কিনা, এগুলো পরিষ্কার হয়নি। 

ছবি: রয়টার্স

ক্রেমলিন জানিয়েছে, বন্দিদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী আচরণ করা হবে বলে ব্যক্তিগতভাবে নিশ্চয়তা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। আর ইউক্রেইনীয় কর্মকর্তারা বলছেন, রুশ বন্দিদের সঙ্গে তাদের বিনিময় করা হতে পারে।

ইউক্রেইনের উপপ্রধানমন্ত্রী ইরিনা ভেরেশ্চুক বলেছেন, আহতদের অবস্থা স্থিতিশীল হওয়ার পর তাদের সঙ্গে বন্দিবিনিময়ের ব্যবস্থা করার লক্ষ্য নিয়েছে কিইভ।

জাতিসংঘে নিযুক্ত রাশিয়ার সহকারী রাষ্ট্রদূত দিমিত্রি পলিয়ানস্কি জানিয়েছেন, কোনো চুক্তিই হয়নি।

এক টুইটে তিনি বলেছেন, “আমি জানতাম না ইংরেজিতে একটি বার্তা প্রকাশ করার অনেক উপায় আছে: ওই আজভনাজিরা বিনাশর্তে আত্মসমর্পণ করেছে।” 

বার্তা সংস্থা তাসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘ইউক্রেইনীয় সরকারের অপরাধ’ বিষয়ক একটি তদন্তের অংশ হিসেবে রাশিয়ার একটি কমিটি বন্দি ইউক্রেইনীয় সেনাদের জিজ্ঞাসাবাদ করার পরিকল্পনা করেছে, যাদের অনেকেই আজভ ব্যাটেলিয়নের সদস্য।

ছবি: রয়টার্স

রাশিয়র শীর্ষ পর্যায়ের অনেক আইনপ্রণেতা যে কোনো ধরনের বন্দি বিনিমিয়ের বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান জানান দিয়েছেন।

রাশিয়ার পার্লামেন্ট দুমার নিম্নকক্ষের স্পিকার ভিচেশ্লাভ ভলোদিন বলেছেন, “নাৎসি অপরাধীদের বিনিময় করা উচিত নয়।” 

ইউক্রেইনের সঙ্গে আলোচনায় রাশিয়ার হয়ে অংশ নেওয়া আরেক আইনপ্রণেতা লিওনিদ স্লুৎসকে ওই ইউক্রেইনীয় যোদ্ধাদের ‘মানুষরূপী জানোয়ার’ অভিহিত করে তাদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন।

২০১৪ সালে রাশিয়া সমর্থিত ইউক্রেইনীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে লড়াই করাতে উগ্র ডানপন্থি স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে মিলিশিয়া বাহিনী আজভ রেজিমেন্ট গঠিত হয়। তাদের নব্যনাৎসি বা ফ্যাসিবাদী সংগঠন বলা হলেও আজভ রেজিমেন্ট তা অস্বীকার করেছে।

আরও পড়ুন: