ফিনল্যান্ড-সুইডেনের নেটোতে ঢোকা আটকে দেওয়ার হুমকি তুরস্কের

ফিনল্যান্ড ও সুইডেন নেটোর সদস্যপদপ্রাপ্তির আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়িপ এরদোয়ান স্ক্যান্ডিনেভিয়ার দেশ দুটির মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটভুক্ত হওয়ার প্রস্তাবে তার আপত্তি পুনর্ব্যক্ত করেছেন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 May 2022, 08:57 AM
Updated : 17 May 2022, 08:57 AM

আঙ্কারাকে রাজি করাতে তুরস্কে ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের প্রতিনিধি দল পাঠানোরও দরকার নেই, বলেছেন এরদোয়ান।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, তুর্কি প্রেসিডেন্ট কুর্দি সশস্ত্র যোদ্ধাদের আশ্রয় দেওয়ার ক্ষেত্রে হেলসিংকি ও স্টকহোমকে ব্যাপক উৎসাহী মনে করেন, এটাই তাকে ক্রুদ্ধ করেছে।

এর আগে সুইডেন ইউক্রেইনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানকে ইঙ্গিত করে ইউরোপ একটি বিপজ্জনক নতুন বাস্তবতায় বাস করছে বলে মন্তব্য করেছিল। সুইডেন-ফিনল্যান্ডের নেটোতে যোগদানের আগ্রহ নিয়ে মস্কোও তার অসন্তোষ চেপে রাখেনি।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, ৩০ দেশের সামরিক জোট নেটোতে সুইডেন-ফিনল্যান্ডের যোগ দেওয়ার আকাঙ্ক্ষা মস্কোর জন্য সরাসরি হুমকি নয়, কিন্তু এ দুটি দেশে মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটটির সামরিক স্থাপনার যে কোনো ধরনের বিস্তৃতিতে ক্রেমলিন প্রতিক্রিয়া দেখাবে।

সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে এরদোয়ান বলেছেন, ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের নেটোতে যোগ দেওয়ার প্রস্তাবের বিরোধিতা করছে তুরস্ক।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট সুইডেনকে সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর ‘হ্যাচারি’ বলেও অভিহিত করেন।

“এই দুই দেশের কোনোটিরই সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর বিষয়ে স্পষ্ট, খোলামেলা মনোভাব নেই। কীভাবে আমরা তাদের বিশ্বাস করবো?,” বলেন এরদোয়ান। 

নর্ডিক এ দুই দেশের বিরুদ্ধে তুরস্ক তাদের দৃষ্টিতে সন্ত্রাসী হিসেবে বিবেচিত সংগঠন কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টির (পিকেকে) সদস্য ও ফেতুল্লাহ গুলেনের অনুসারীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ করে আসছে।

২০১৬ সালে তুরস্কে একটি অভ্যুত্থানচেষ্টার পেছনে গুলেনের দায় দিয়ে আসছে আঙ্কারা।

তুরস্কের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া দেশগুলোর নেটো সদস্যপদের আবেদন আটকে দেওয়ার অঙ্গীকারও আছে এরদোয়ানের সরকারের।

সিরিয়ায় তুরস্কের অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে ২০১৯ সালে নর্ডিক দুই দেশ ফিনল্যান্ড ও সুইডেন আঙ্কারার ওপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল।

সোমবার হেলসিংকির পার্লামেন্টে দেওয়া বক্তব্যে ফিনল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেক্কা হাভিস্তো বলেছেন, তাদের নেটো সদস্যপদপ্রাপ্তির আবেদনের ব্যাপারে তুরস্কের অবস্থানে তিনি বিস্মিত।

তার সরকার এ নিয়ে এরদোয়ানের সঙ্গে ‘দরকষাকষিতে’ আগ্রহী নয় বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

ফিনল্যান্ড কয়েকদিন আগে তাদের নেটোতে যোগ দেওয়ার আকাঙ্ক্ষার কথা আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়; শনিবার তাদের সঙ্গে যুক্ত হয় প্রতিবেশী সুইডেনও।

মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটে যোগ দিলে স্ক্যান্ডিনেভিয়ান এই দুই দেশের নিরপেক্ষ থাকার দীর্ঘদিনের ঐতিহ্যের ইতি ঘটবে।

“নেটো সুইডেনকে শক্তিশালী করবে, সুইডেন নেটোকে,” সোমবার এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এমনটাই বলেছেন সুইডিশ প্রধানমন্ত্রী ম্যাগদালেনা অ্যান্দারসেন। 

ইউরোপ এখন বিপজ্জনক নতুন বাস্তবতায় বাস করছে বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন।

“আমরা এক যুগ পেছনে ফেলে নতুন এক যুগে প্রবেশ করছি,” স্টকহোমের পার্লামেন্টে এক বিতর্কে সংসদ সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলেন তিনি।

তিনি জানান, ফিনল্যান্ডের সঙ্গে সমন্বয় করে সুইডেনের আনুষ্ঠানিক আবেদন কয়েকদিনের মধ্যেই পাঠিয়ে দেওয়া হবে। সুইডেন যে তার ভূখণ্ডে নেটোর স্থায়ী ঘাঁটি ও পারমাণবিক অস্ত্র রাখতে আগ্রহী নয়, তাও জোর দিয়ে বলেছেন তিনি।

কাছাকাছি তিন নেটো সদস্য নরওয়ে, ডেনমার্ক ও আইসল্যান্ড এরই মধ্যে সুইডেন ও ফিনল্যান্ডের নেটো সদস্যপদপ্রাপ্তিতে সমর্থন দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। দেশদুটি আক্রমণের শিকার হলে যে তাদের সব ধরনের সহায়তারও আশ্বাস দিয়েছে তারা।

আবেদনের পর নেটো সদস্যপদ পাওয়া পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন সময়ে সুইডেন ও ফিনল্যান্ডকে ‘নিরাপত্তা নিশ্চয়তা’ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে নেটোর আরেক সদস্য দেশ যুক্তরাজ্য।     

আরও খবর: