জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন শ্রীলঙ্কার নতুন প্রধানমন্ত্রী

অর্থনৈতিক সংকটে বিপর্যস্ত শ্রীলঙ্কা যখন দিশেহারা, ঠিক তখনই দেশের কাণ্ডারীর দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে দৃশ্যপটে হাজির হয়েছেন রনিল বিক্রমাসিংহে। প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের পর সোমবার রাতে প্রথম তিনি জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন।

>>রয়টার্স
Published : 16 May 2022, 01:48 PM
Updated : 16 May 2022, 01:48 PM

সোমবারের ভাষণে তিনি দেশ কেন এই ভয়াবহ অর্থনৈতিক দুর্দশার মধ্যে পড়েছে তার ‘সম্পূর্ণ ব্যাখ্যা’ দেবেন বলে জানিয়েছেন। রোববার বেশ কয়েকটি টুইটে তিনি নিজেই এ কথা বলেছেন।

তিনি বলেন, ‘‘সেখানে অনেক কিছু আছে যেগুলো করতে হবে বা করা বন্ধ করতে হবে। আমরা বিষয়গুলিকে অগ্রাধিকার দিচ্ছি, নিশ্চিত থাকুন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সেগুলির সমাধান করা হবে৷”

উত্তাল বিক্ষোভের কাছে মাথা নত করে মাহিন্দা রাজাপাকসে সরে যাওয়ার পর গত বৃহস্পতিবার শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন রনিল।

রনিল এর আগে আরো পাঁচবার শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। যদিও কোনোবারই তিনি মেয়াদ শেষ করতে পারেননি।

বিক্ষোভকারীদের শান্ত করতে সেই রনিলেই ভরসা রেখেছেন প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে। তিনি মাহিন্দার ছোট ভাই। শ্রীলঙ্কার অনেক মানুষ দেশটির বর্তমান দুর্দশার জন্য রাজাপাকাসে পারিবারকে দায়ী মনে করেন। তারা রাজাপাকসে পরিবারের নিয়ন্ত্রণ থেকে শ্রীলঙ্কার রাজনীতির মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ করছেন। যে বিক্ষোভ এখন পর্যন্ত নয়টি প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। আহত হয়েছেন তিনশ’র বেশি মানুষ।

বিক্ষোভকারীরা এখনো গোটাবায়ার পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন। তিনি পদত্যাগ না করা পর্যন্ত বিক্ষোভ অব্যাহত রাখায় প্রত্যয়ও ব্যক্ত করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে রনিলকেও তাদের পছন্দ নয়। তাদের মতে রনিল একজন ভাঁড়। রনিলের নতুন মন্ত্রিসভার নিয়োগ নিয়েও তারা তীব্র সমালোচনা করেছেন। কারণ, রনিলের মন্ত্রিসভায় এখনে পর্যন্ত নিয়োগ পাওয়া চার মন্ত্রীর চারজনই রাজাপাকসে ভাইদের দলের এমপি।

কোভিড মহামারীতে পর্যটন শূ্ন্যে নেমে যাওয়া, ইউক্রেইন যুদ্ধের ফলে জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি এবং জনগণের মন জয় করতে রাজাপাকসে সরকারের কর কর্তন শ্রীলঙ্কার আজকের পরিস্থিতির জন্য মূলত দায়ী বলা হচ্ছে। ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতার পর দেশটিকে এত মারাত্মক অর্থনৈতিক সংকটে আগে কখনো পড়তে হয়নি।

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তলানিতে গিয়ে ঠেকায় দেশটি জ্বালানি ও ওষুধসহ অতি জরুরি নিত্য পণ্য আমদানি করতে পারছে না। তার উপর আছে বিশাল অংকের ঋণের বোঝা।

যার বিরুদ্ধে এক মাসের বেশি সময় ধরে দেশটিতে সরকার বিরোধী বিক্ষোভ চলছে। ১০/১২ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। জ্বালানি তেলের লাইনে দাঁড়িয়ে দিন পার হয়ে যাচ্ছে।

দেশটির বিদ্যুৎ মন্ত্রী জনগণকে আপাতত জ্বালানি সংগ্রহের লম্বা লাইনে না দাঁড়ানোর অনুরোধ করেছেন। সোমবার বিদ্যুৎ মন্ত্রী কাঞ্চনা উইজেসেকেরা বলেছেন, ‘‘আগামী তিন দিনের মধ্যে দেশের ১ হাজার ১৯০ টি জ্বালানি স্টেশনে জ্বালানি সরবরাহ সম্পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত জনসাধারণকে আগামী তিন দিন জ্বালানির জন্য লাইনে দাঁড়ানো বা জ্বালানি গ্রহণ বন্ধ রাখার অনুরোধ করছি।”

ভারতীয় একটি ক্রেডিট লাইন ব্যবহার করে ডিজেলের একটি চালান রোববার শ্রীলঙ্কা পৌঁছেছে। কিন্তু এখনও দ্বীপ জুড়ে তা বিতরণ করা হয়নি।

রনিল তার মন্ত্রিসভার জন্য মরিয়া হয়ে একজন অর্থমন্ত্রী খুঁজছেন। যিনি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে আলোচনা করে দেশকে বেল আউট সুবিধা পাইয়ে দিতে সক্ষম হবেন। আইএমএফ থেকে আর্থিক সহায়তা শ্রীলঙ্কার জন্য এখন অতি জরুরি।

সাবেক অর্থমন্ত্রী আলি সাব্রি এ বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনা শুরু করেছিলেন। কিন্তু গত সপ্তাহে মাহিন্দার পদত্যাগের পর তিনিও পদত্যাগ করেন।