নেটোতে যোগ দিতে আগ্রহী ফিনল্যান্ড, খারকিভে ‘পিছু হটছে’ রুশরা

যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট নেটোতে যোগ দিতে ফিনল্যান্ডের অবিলম্বে আবেদন করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট সাউলি নিনিস্তো ও প্রধানমন্ত্রী সান্না মারিন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 May 2022, 11:01 AM
Updated : 12 May 2022, 11:01 AM

বৃহস্পতিবার তাদের এ ঘোষণার মধ্য দিয়ে ওই অঞ্চলের নিরাপত্তা ভারসাম্যে একটি বড় ধরনের পরিবর্তনের আভাস মিলল বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

এদিকে খারকিভ অঞ্চলে ইউক্রেইনের বাহিনী রুশ সেনাদের দখলে থাকা কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ একটি গ্রামের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছে। তাদের অগ্রগতি রুখতে রুশ বাহিনীও সীমান্তবর্তী ওই অঞ্চলের কিছু এলাকায় শক্তি বৃদ্ধি করছে।

রাশিয়ার সঙ্গে এক হাজার ৩০০ কিলোমিটার সীমান্ত থাকা ফিনল্যান্ড তার পূর্বাঞ্চলীয় বৃহৎ প্রতিবেশীর সঙ্গে আগেও কয়েকদফা যুদ্ধে জড়িয়েছিল; রাশিয়া ২০১৪ সালে ক্রাইমিয়ার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকে হেলসিঙ্কির সঙ্গে নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশনের (নেটো) দহরম-মহরম বাড়তে দেখা যায়।

তবে চলতি বছর রাশিয়া ইউক্রেইনে আক্রমণ চালানোর আগ পর্যন্ত ফিনল্যান্ডকে মস্কোর সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখার স্বার্থে নেটোতে যোগ দেওয়ার ইচ্ছার কথা বলতে শোনা যায়নি।

ছবি: রয়টার্স

“অবিলম্বে ফিনল্যান্ডের নেটো সদস্যপদের জন্য আবেদন করা উচিত। এটা করার জন্য জাতীয়ভাবে যা যা পদক্ষেপ নেওয়া দরকার দ্রুতগতিতে আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই তা করার ব্যাপারে আশাবাদী আমরা.” বৃহস্পতিবার যৌথ বিবৃতিতে এমনটাই বলেছেন নিনিস্তো ও মারিন।

ফিনল্যান্ডের মতো সুইডেনও আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই নেটোতে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে তাদের আগ্রহ প্রকাশ করতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে।

এই দুই দেশ শিগগিরই আবেদন করবে এবং তাদেরকে তড়িৎগতিতে সদস্যপদ দেওয়ার ব্যাপারে নেটো মিত্ররাও আশাবাদী বলে বিষয়টি সম্পর্কে অবগত ৫ কূটনীতিক ও কর্মকর্তা ফিনল্যান্ডের ঘোষণার আগেই রয়টার্সকে বলেছিলেন।

বিস্তৃত নর্ডিক অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে নরওয়ে, ডেনমার্ক এবং বাল্টিক তিন দেশ আগে থেকেই নেটোর সদস্য; এর সঙ্গে ফিনল্যান্ড ও ডেনমার্ক যুক্ত হলে তা স্বভাবতই মস্কোকে আরও ক্রুদ্ধ করবে বলে অনুমান বিশ্লেষকদের। 

রাশিয়া দীর্ঘদিন ধরেই নেটোর বিস্তৃতিকে তার নিরাপত্তার জন্য সরাসরি হুমকি অ্যাখ্যা দিয়ে আসছে।

এই কারণকে উদ্ধৃত করেই রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লামিদির পুতিন ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেইনে ‘বিশেষ সামরিক অভিযানের’ ঘোষণা দিয়েছিলেন। রাশিয়ার সীমান্তে থাকা ইউক্রেইনও পশ্চিমা সামরিক জোট নেটোতে যুক্ত হওয়ার আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেছিল।

মস্কো আগে ধারাবাহিকভাবে ফিনল্যান্ড ও সুইডেনকে নেটোতে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে সতর্ক করেছে। যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন জোটে গেলে ‘গুরুতর সামরিক ও রাজনৈতিক পরিণতির’ও হুমকি দিয়ে রেখেছে তারা।

নেটোতে যোগ দিয়ে ফিনল্যান্ড রাশিয়াকে উস্কে দিচ্ছে কিনা, বুধবার এমন এক প্রশ্নের জবাবে নিনিস্তো এমন পরিস্থিতির জন্য পুতিনকেই দায়ী করেছেন।

“আমার উত্তর হবে, আপনিই (পুতিন) এটা সৃষ্টি করেছেন; আয়নায় তাকান,” বলেছেন তিনি।

ছবি: রয়টার্স

ফিনল্যান্ডের পাশাপাশি সুইডেনও শিগগিরই নেটোতে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে তাদের অবস্থান জানাবে। দেশটির ক্ষমতাসীন দল আগামী সপ্তাহে মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটের সদস্যপদের জন্য আবেদন বিষয়ে তাদের সিদ্ধান্ত জানাবে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো।

ইউক্রেইন বুধবার খারকিভ অঞ্চলে তাদের বাহিনীর অগ্রগতি ও রুশ বাহিনীকে পূর্ব দিকে ঠেলে দেওয়ার কথা জানিয়েছে।

ইউক্রেইনের সশস্ত্র বাহিনীর জেনারেল স্টাফ জানিয়েছে, তাদের সেনারা ইউক্রেইনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভের উত্তরে অবস্থিত মূল মহাসড়কের একটি গ্রামের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেয়েছে।

তবে রাশিয়ার বাহিনী তাদের অগ্রযাত্রা প্রতিহত করতে শক্তি বৃদ্ধি করছে এবং এরইমধ্যে দোনেৎস নদীও অতিক্রম করে ফেলেছে।

দক্ষিণে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে থাকা খারসন অঞ্চলে রুশ বাহিনীর দুটি ট্যাংক ও একটি গোলাবারুদের ডিপো ধ্বংসেরও দাবি করেছে ইউক্রেইন।

মস্কো খারসনে ভুয়া গণভোটের আয়োজন করে অঞ্চলটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা করছে বলে অভিযোগ করেছে কিইভ।

তবে ক্রেমলিন বলছে, খারসনের ভবিষ্যৎ নিয়ে সিদ্ধান্ত সেখানকার বাসিন্দারাই নেবে, তবে রাশিয়ায় যুক্ত হওয়ার যে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে এর সুস্পষ্ট আইনি ভিত্তি থাকতে হবে।

পূর্বাঞ্চলে রুশ বাহিনীর আক্রমণের ধার আগের মতোই তীব্র; দক্ষিণাঞ্চলীয় বন্দরনগরী মারিউপোলের আজভস্তাল ইস্পাত কারখানায় তাদের বোমাবর্ষণও অব্যাহত আছে।

আরও পড়ুন: