যুক্তরাষ্ট্রে কোভিড কেড়ে নিল ১০ লাখ প্রাণ

করোনাভাইরাস মহামারীতে ১০ লাখ মৃত্যুর বেদনাদায়ক মাইলফলকে পৌঁছেছে যুক্তরাষ্ট্র, যা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 May 2022, 04:34 AM
Updated : 12 May 2022, 08:02 AM

বার্তা সংস্থা রয়টার্স তাদের সংরক্ষণ করা তথ্যের ভিত্তিতে বুধবার এ তথ্য প্রকাশ করে এক প্রতিবেদনে লিখেছে, ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে যখন কোভিড-১৯ এর প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ল, তখন কেউ কল্পনাও করতে পারেনি, দুই বছরের মধ্যে কোভিডে এত মৃত্যু তাদের দেখতে হবে।

এর অর্থ হল, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ৩২৭ জন নাগরিকের মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে কোভিডে। মৃত্যুর এই সংখ্যা স্যান ফ্র্যান্সিসকো বা সিয়াটলের জনসংখ্যার চেয়েও বেশি।

২০২০ সালের ১১ মার্চ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) যখন কোভিড-১৯ কে মহামারী ঘোষণা করল, তখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে এ রোগে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৩৬ জন।

পরের মাসগুলোতে মহামারী দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে, বিশেষ করে ঘন বসতিপূর্ণ নিউ ইয়র্ক সিটি বিপর্যস্ত হয়ে যায়, যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য অঞ্চলেও পরিস্থিতি নাজুক হয়ে পড়ে।

ছবি: রয়টার্স

২০২০ সালের জুনের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে কোভিড-১৯ এ মৃতের সংখ্যা প্রথম বিশ্বযুদ্ধে নিহত সেদেশের সেনা সংখ্যাকে ছাড়িয়ে যায়। ২০২১ এর জানুয়ারিতে তা ছাড়িয়ে যায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সামরিক মৃত্যুর সংখ্যাও। তখনও মহামারীতে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ৫ হাজার।

পৃথিবীর সর্বত্র ছড়িয়ে পড়া এ মহামারীতে এ পর্যন্ত ৬৭ লাখ মানুষের মৃত্যুর তথ্য সরকারের খাতায় নথিভুক্ত হয়েছে, তবে এর প্রকৃত সংখ্যা দেড় কোটির কাছাকাছি বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ধারণা।

২০২০ সালের শেষভাগে কোভিডের টিকা বাজারে আসার পর লাখ লাখ আমেরিকান টিকা নেন। তারপরেও ২০২১ সালের প্রথমভাগেই ৫ লাখ মার্কিন নাগরিকের মৃত্যু হয়।

গত বছর জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রে এমন সপ্তাহও পার হয়েছে, যখন কোভিড আক্রান্ত হয়ে দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা ২০০১ সালের ৯ সেপ্টেম্বরের সন্ত্রাসী হামলার দিনের মৃত্যুর সংখ্যাকেও ছাড়িয়ে গেছে।

গবেষকদের হিসাবে, বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশে এই মহামারীতে প্রায় ২ লাখ ১৩ হাজার শিশু বাবা-মায়ের কোনো একজনকে বা দুজনকেই হারিয়েছে। সবচেয়ে বেশি ভুগেছে সেদেশের বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা।

এই মহামারী যুক্তরাষ্ট্রে শেতাঙ্গদের তুলনায় আদিবাসী ও অশেতাঙ্গ জনগোষ্ঠীর বেশি ক্ষতি করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সমাজে শেকড় গেড়ে বসা বৈষম্যের চিত্রও প্রকটভাবে প্রকাশ্যে এনেছে করোনাভাইরাস মহামারী।

ছবি: রয়টার্স

গত শীতে কোভিড-১৯ এর তুলনামূলক কম প্রাণঘাতি ওমিক্রন ধরন ছড়িয়ে পড়ার পর ধীরে ধীরে মহামারীর বিধিনিষেধ শিথিল করতে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন। জনগণের মনোযোগও এখন মহামারী থেকে সরে অর্থনীতি ও মূল্যস্ফীতির দিকে নিবদ্ধ হয়েছে।

তবে গবেষকেরা এরইমধ্যে আরেক ডোজ টিকা দেওয়ার বিষয়ে কাজ করে চলেছেন, কারণ করোনাভাইরাসের রূপান্তর অব্যাহত আছে। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ অ্যান্থনি ফাউচি বলেন, “কোনো অর্থেই এটা শেষ হয়ে যায়নি। আমরা এখনও একটি বৈশ্বিক মহামারীর মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি।”

রয়টার্স লিখেছে, কোভিড-১৯ মহামারীর তথ্যউপাত্ত সংরক্ষণে একদম বৈজ্ঞানিক কোনো পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে না। রয়টার্স ও অন্যান্য সংস্থা, যারা কোভিডের মৃত্যুর টালি করছে, তাদের সবার হিসাব আলাদা আলাদা। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রে ১০ লাখ মৃত্যুর মাইলফলক একেক সংস্থার হিসাবে একেক সময়ে দেখা যাচ্ছে। এই ভিন্নতা হচ্ছে পদ্ধতিগত কারণে।

যেখানে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, সেখানকার নিশ্চিত ও সম্ভাব্য দুই ধরনের মৃত্যুর হিসাবই গণনায় অন্তর্ভুক্ত করছে রয়টার্স। তবে এই মহামারীতে সত্যিকারের প্রাণহানির সংখ্যা হয়ত কখনোই জানা সম্ভব হবে না।

পুরানো খবর -