রাশিয়ার গ্যাস বন্ধ হলে মোকাবেলার প্রস্তুতি জার্মানির

রাশিয়ার গ্যাস সরবরাহ হুট করে বন্ধ হয়ে গেলে জরুরি এক প্যাকেজের মাধ্যমে পরিস্থিতি সামাল দিতে নীরবে প্রস্তুতি নিচ্ছেন জার্মানির কর্মকর্তারা।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 May 2022, 01:29 PM
Updated : 10 May 2022, 01:37 PM

ওই প্যাকেজের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ অনেক কোম্পানির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার বিষয়টিও থাকতে পারে বলে এ উদ্যোগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তিন ব্যক্তি বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন।

গ্যাস সরবরাহ নিয়ে জার্মানি যে সর্বোচ্চ সতর্কবস্থায় আছে তা দেশটির  অর্থনৈতিক মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে হওয়া এই প্রস্তুতিই দেখাচ্ছে। ইউরোপের সবচেয়ে বড় এ অর্থনীতির চালিকাশক্তি রাশিয়ার সরবরাহ করা গ্যাস। জার্মানির ইস্পাত, প্লাস্টিক ও গাড়ি উৎপাদনের জন্যও এ গ্যাস বেশ গুরুত্বপূর্ণ।

জার্মানি গত বছর যত গ্যাস আমদানি করেছে, তার ৫৫ শতাংশই রাশিয়ার। দুই দেশের এ ব্যবসায়িক সম্পর্ক নিয়ে বার্লিন এখন বেশ চাপে আছে।

সমালোচকরা বলছেন, রাশিয়ার গ্যাস আমদানি করে জার্মানি মস্কোর ইউক্রেইন আক্রমণে সহায়তা দিচ্ছে।

বার্লিন বলছে, তারা রাশিয়ার কাছ থেকে গ্যাস নেওয়া কমাতে চায়, কিন্তু ২০২৪ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত মস্কোর গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল থাকার কোনো বিকল্প তাদের হাতে নেই।

ছবি: রয়টার্স

রাশিয়ার গ্যাস সরবরাহ হুট করে বন্ধ হয়ে যাবে কি না, তা স্পষ্ট নয়। এ নিয়ে মস্কোর সঙ্গে উত্তেজনা বাড়ুক জার্মানি তা চায় না। এ কারণে তারা রাশিয়ার কয়লা ও তেলে নিষেধাজ্ঞায় রাজি হলেও গ্যাসের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞায় সমর্থন দিচ্ছে না।

তবে বার্লিন এখন ভয় পাচ্ছে, রাশিয়া যে কোনো সময় হুট করে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিতে পারে; তেমনটা হলে পরিস্থিতি যেন সামাল দেওয়া যায়, সেটা নিশ্চিত করতে চাইছে তারা।

বিস্তৃত পরিসরে পরিকল্পনা হয়েছে, সরকারও সাহায্য করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এখন এ পরিকল্পনা কীভাবে কার্যকর করা যায়, তাই নিয়ে কথাবার্তা চলছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

রুশ গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হলে সরকার জ্বালানি কোম্পানিগুলোকে আরও ঋণ দিতে পারে, তাদেরকে নানা ধরনের সহায়তা দেওয়ার নিশ্চয়তা দিতে পারে, যেন তারা চড়া দামের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে।

এর পাশাপাশি তারা (সরকার) তেল শোধনাগারের মতো সংবেদনশীল কোম্পানিগুলোকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণেও নিয়ে নিতে পারে, বলেছেন ওই তিন কর্মকর্তা।

এ বিষয়ে মন্তব্য চাইলে জার্মানির অর্থনৈতিক মন্ত্রণালয় ভাইস-চ্যান্সেলর রবার্ট হাবেকের বিবৃতি দেখিয়ে দেয়।

ওই বিবৃতিতে হাবেক বলেছিলেন, রাশিয়ার জ্বালানি ব্যবহার কমাতে তার দেশ সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ‘নিরলস প্রচেষ্টা’ চালিয়ে যাচ্ছে।

শেষ পর্যন্ত জ্বালানি কোম্পানিগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিতে হলে, যেন কোনো ধরনের জটিলতায় পড়তে না হয়, তা নিশ্চিত করতে গত মাসে আইনেও পরিবর্তন এনেছে বার্লিন।

ছবি: রয়টার্স

এখন তারা এই পরিকল্পনা বাস্তবে কীভাবে কার্যকর করা যায়, তাই নিয়ে আলোচনা করছে। তাদের পরিকল্পনার মধ্যে পোল্যান্ডের কাছে স্ফেটে অবস্থিত পিসিকে শোধনাগারের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার কথাও আছে বলে জানিয়েছেন দুই ব্যক্তি; ওই শোধনাগারটি পরিচালনা করছে রাশিয়ার রোসনেফট।

জার্মানি এখন যতটুকু রুশ তেল আমদানি করে তার বেশিরভাগই ওই শোধনাগার হয়ে আসে; ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়ার তেলে নিষেধাজ্ঞা দিলে এই শোধনাগারও বিপাকে পড়তে পারে।

জার্মানির সম্ভাব্য এই পদক্ষেপের বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি রোসনেফট।

রুশ গ্যাস বন্ধ হলে জ্বালানি কোম্পানিগুলো জাতীয়করণের চিন্তা সতর্কতার সঙ্গে বিবেচনা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন এক কর্মকর্তা।

জার্মানি অন্যান্য কোম্পানিরও শেয়ার কেনার কথা ভাবছে বলে বিষয়টির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দুই ব্যক্তি জানিয়েছেন।  

জরুরি পরিস্থিতিতে কীভাবে গ্যাস রেশন করা যায়, জার্মানি তাও খতিয়ে দেখছে। রাশিয়ার গ্যাস বন্ধ হলে বাকি গ্যাস ঘরবাড়ির আগে শিল্প প্রতিষ্ঠানে দেওয়া যাবে কিনা, নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ এখন তা বিবেচনা করে দেখছে।

রাশিয়ার এখনকার নীতিতে গ্যাস সংকট দেখা দিলে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ আগে বন্ধ করার পরিকল্পনা রয়েছে।

ইউক্রেইনে রাশিয়ার অভিযানকে ঘিরে মস্কো ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) তীব্র রেষারেষির মধ্যেই জার্মানি সংকট মোকাবেলার এসব পরিকল্পনা নিয়ে প্রস্তুত হচ্ছে।

ইইউ চাইছে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রাশিয়াকে বিশ্ব থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করে ফেলতে। কিন্তু জ্বালানিসহ রাশিয়ার বিভিন্ন পণ্যের ওপর ইউরোপের অনেক দেশের নির্ভরশীলতা তাদের এই চাওয়া পূরণে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সোমবার রাশিয়ার বিজয় দিবসে সামরিক বাহিনীর কুচকাওয়াজে বলেছেন, তার দেশের সেনারা তাদের দেশের জন্যই লড়ছেন। কিন্তু ইউক্রেইনে ক্রেমলিন ঘোষিত ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ শেষ হতে কতদিন লাগতে পারে, সে সম্বন্ধে কোনো ইঙ্গিত দেননি তিনি।

আরও খবর: