শ্রীলঙ্কায় এমপি-সহ রাজাপাকসের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ

চরম আর্থিক সংকটে থাকা শ্রীলঙ্কায় উত্তাল গণবিক্ষোভের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসের পদত্যাগ এবং তার সমর্থকদের সঙ্গে সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ ঠেকাতে কারফিউ জারির পরও জটিল হচ্ছে পরিস্থিতি।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 May 2022, 06:04 PM
Updated : 9 May 2022, 07:28 PM

সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীরা সোমবার শ্রীলংকার ক্ষমতাসীন দলের কয়েকজন আইনপ্রণেতার বাড়িতে আগুন দিয়েছে। সরকারবিরোধীদের ওপর মাহিন্দা রাজাপাকসের সমর্থকদের হামলার জেরে এ ঘটনা ঘটে।

বিক্ষুব্ধ সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীরা সাবেক তিন মন্ত্রী এবং দুই এমপি’র বাড়িতে আগুন ধরানোর পর রাজাপাকসেদের পৈতৃক বাড়িও জ্বালিয়ে দেয় বলে জানিয়েছে এনডিটিভি।

শ্রীলঙ্কায় কয়েক সপ্তাহ ধরে চলমান সরকারবিরোধী বিক্ষোভের মধ্যে সোমবারই সবচেয়ে বেশি সহিংস ঘটনা ঘটেছে। রাজধানী কলম্বোর কাছে বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালানোর পর এক এমপি’র লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

এনডিটিভি জানায়, সবচেয়ে খারাপ সহিংসতা শুরু হয় সকালে। সে সময় রাজাপাকসের পরিবারের সমর্থকরা দাঙ্গা বাধায়। তারা প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের বাইরে ৯ এপ্রিল থেকে বিক্ষোভ চালিয়ে আসা সরকারবিরোধীদের ওপর হামলে পড়ে।

এরপর সন্ধ্যার দিকে এর পাল্টা জবাবে সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীরা কলোম্বো থেকে প্রায় ২৫০ কিলোমিটার দূরে হাম্বানটোটায় রাজাপাকসে পরিবারের পৈতৃক বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়। এমপি এবং সাবেক মন্ত্রীদের বাড়িতেও এ সময় আগুন দেয় বিক্ষোভকারীরা।

‘দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া’ শ্রীলংকার নিউজঅ্যয়ার পত্রিকার বরাত দিয়ে জানিয়েছে, বিক্ষোভকারীরা যে রাজনীতিবিদদের বাড়িতে আগুন দিয়েছে তার মধ্যে আছেন বর্তমান এমপি সনাথ নিশানথা। ভিডিও ফুটেজে জ্বলন্ত ঘর থেকে আগুনের শিখা উঠতে দেখা গেছে।

আরেকটি ভিডিওতে শ্রীলংকার রাজনৈতিক দল এসএলপিপি’র রাজনীতিবিদদের বাড়িঘর এবং যানবাহনে বিক্ষোভকারীদেরকে আগুন দিতে দেখা গেছে।

শ্রীলংকার ক্ষমতাসীন দলের এমপি অমরাকীর্তি আথুকোরালা ও তার নিরাপত্তা কর্মকর্তা সরকার সমর্থক ও সরকারবিরোধীদের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে মারা গেলে পরিস্থিতি বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে।

পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ার গ্যাস, জল কামান ছুড়েছে। কলোম্বোতে অবিলম্বে জারি করা হয়েছে কারফিউ। পরে দেশজুড়ে কারফিউ জারি করা হয়। মঙ্গলবার সকাল ৭ টা পর্যন্ত কারফিউ চলবে বলে জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে।

ভারত মহাসাগরীর দ্বীপ দেশ শ্রীলংকায় হাজার হাজার মানুষ প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া এবং প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দার পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করে আসছে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে। সোমবার কলম্বোয় সরকারবিরোধীদের একটি বিক্ষোভস্থলে ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকদের হামলার পরপরই প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের খবর আসে।

শ্রীলংকার রাজনীতিতে প্রায় ২০ বছর ধরে আধিপত্য করে এসেছেন মাহিন্দা রাজাপাকসে। তার সরকারই শ্রীলংকায় দীর্ঘ গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটাতে তামিল টাইগারদের নির্মূল করেছিল।

সেই পরাক্রমশালী নেতাকেই আজ অর্থনৈতিক দুর্দশাগ্রস্ত দেশে উত্তাল বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য হতে হল। দেশে একটি অন্তর্বর্তী, ঐক্য সরকার গঠনে সহায়তা করতেই মাহিন্দা পদত্যাগ করেছেন বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে তার কার্যালয়।

তামিল টাইগার নির্মূল করে প্রশংসা কুড়ালেও মাহিন্দা সরকার পরে মানবাধিকারের মারাত্মক লঙ্ঘনের অভিযোগে জর্জরিত হয়েছে। সমালোচকরা তার বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতির অভিযোগও করেছে। সরকার সমালোচকদের অপহরণ,নির্যাতন এবং হত্যা বন্ধে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন।

সবশেষে দুর্নীতির অভিযোগ দেশে সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের আগুনে ঘি ঢেলেছে। মাহিন্দা রাজাপাকসে দুর্নীতির পথ প্রশস্ত করেছেন বলে অনেকের বিশ্বাস। আর তাই গণবিক্ষোভের মুখে শেষমেশ মাহিন্দার মতো একজন প্রভাবশালী নেতার এমন অবমাননাকর বিদায়।

সংকট সমাধানের আশা নিয়েই মাহিন্দা তার ভাই প্রেসিডেন্ট গোটাবায়ার কাছে পদত্যাগত্র পাঠিয়েছেন বলে জানিয়েছিলেন। কিন্তু মাহিন্দা পদত্যাগ করলেও গোটাবায়া এখনও ক্ষমতায় থাকায় সরকারবিরোধীরা সন্তষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলেই মনে করা হচ্ছে।

বিবিসি জানায়, মাহিন্দার পদত্যাগে সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস দেখা গেছে ঠিকই। কিন্তু এটি তাদের আংশিক জয় মাত্র। তাদের আসল লক্ষ্য হচ্ছেন প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া। তিনি এখনও পদত্যাগের আভাস দিচ্ছেন না। যার মানে হচ্ছে, বিক্ষোভ চলতেই থাকবে।