শ্রীলঙ্কার বিক্ষোভে নজর কাড়ছে অল্পকটি তাঁবুর যে শিবির

শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোতে প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসের কার্যালয়ের কাছেই ঘাসে পরিপূর্ণ একখণ্ড জমিতে দুই ডজনের মতো তাঁবুর ছোট কিন্তু ক্রমর্ধমান একটি শিবির দেশব্যাপী চলমান বিক্ষোভের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 April 2022, 11:41 AM
Updated : 13 April 2022, 11:41 AM

অর্থনৈতিক সংকটে খাবি খাওয়া দেশটির হাজার হাজার লোক সাম্প্রতিক দিনগুলোতে কাছাকাছি বিভিন্ন এলাকা ও দেশের নানা অংশে রাস্তায় নেমে রাজাপাকসের পদত্যাগের দাবি তুলেছেন, ভয়াবহ মূল্যস্ফীতি ও দীর্ঘ লোডশেডিং নিয়ে ক্ষোভ ব্যক্ত করছেন।

বিক্ষোভকারীদের ওই তাঁবুগুলোর এক পাশে হাতে লেখা একটি বোর্ডে লেখা রয়েছে, ‘গোটা, গ্রামে যাও’; বোর্ডটি থেকে কলম্বোর ওয়াটার ফ্রন্ট সংলগ্ন ঔপনিবেশিক আমলের প্রেসিডেন্ট ভবন খুব বেশি দূরে নয়।

গোটাবায়াকে উদ্দেশ্য করে দেওয়া এ স্লোগান ‘গোটা, চলে যাও’ শ্রীলঙ্কাজুড়ে এখন মুহুর্মুহু উচ্চারিত হচ্ছে, নজিরবিহীন এ জনঅসন্তোষ ভিন্ন ভিন্ন ধর্মীয় বিশ্বাস, জাতীয়তা ও সামাজিক গোষ্ঠীর মানুষকে এক করেছে।

সোমবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যার দিকে সাদা পোশাক পরিহিত একদল খ্রিস্টান নানকে বিক্ষোভকারীদের ওই শিবিরের কাছে পুলিশের ব্যারিকেডের পাশ দিয়ে হেঁটে যেতে দেখা যায়। সেখানে তখন ১১ বিক্ষোভকারী স্লোগান দিচ্ছিলেন; একজনের হাতে ধরা একটি পোস্টারে লেখা ছিল, “আমাদের সরকার আমাদের ডুবিয়েছে।”

কিছু দূরে উজ্জ্বল গেরুয়া কাপড় পরা তিন বৌদ্ধ সন্নাসীকে দেখা গেল ভিড়ের মাঝে। আর ওই লনের এক প্রান্তে, কয়েকটি তাঁবুর পেছনে জনা তিরিশেক মুসলমার দুই সারিতে বসে ইফতার করছিলেন।

এভাবেই এ বিক্ষোভস্থল এমন একটি জায়গায় পরিণত হচ্ছে যেখানে শ্রীলঙ্কার সবাই একত্রিত হতে পারছে, দেখা যাচ্ছে ঐক্যের বিরল প্রদর্শনী, বলেছেন কলম্বো বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিদ্যার অধ্যাপক ফারজানা এফ হানিফা।

বিক্ষোভকারীদের ভাষ্য, তাদের এখনকার দুর্ভোগের অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা, যার জন্য দায়ী রাজাপাকসে পরিবার। প্রেসিডেন্টের বড় ভাই মাহিন্দা রাজাপাকসে এখন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন, ছোট ভাই বাসিল অল্প ক’দিন আগেও ছিলেন অর্থমন্ত্রী।

স্বাধীনতার পর সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে পড়া শ্রীলঙ্কা বিদেশি মুদ্রার ঘাটতির কারণে জ্বালানি ও ওষুধ কিনতে পারছে না, হিমশিম খাচ্ছে ঋণ পরিশোধেও।

দেশটির সরকার অবশ্য বলছে, শ্রীলঙ্কাকে সংকটের বাইরে নিয়ে যেতে যা যা করা দরকার করছে তারা। কলম্বোর ওই বিক্ষোভকারীদের মধ্যে অনেকেই সরকারের এই কথায় আস্থা রাখতে পারছেন না; তারা বলছেন, রাজাপাকসেরা পদত্যাগ করলেই কেবল তারা বাড়ি ফিরবেন।

অন্যদিকে, টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে মাহিন্দা রাজাপাকসে বিক্ষোভ প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন; বলেছেন, পরিস্থিতির উন্নতির ক্ষেত্রে বিক্ষোভ বিঘ্ন ঘটাচ্ছে।

টানা বৃষ্টির আরেকটি রাতের পর মঙ্গলবার সকালের দিকে খালি পায়ে হেঁটে হেঁটে মেরি সুয়েন তাঁবুগুলো ঠিকঠাক করে খাটাচ্ছিলেন; তার স্বামীই নিজের ট্যুরিজম ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে এই তাঁবুগুলো নিয়ে এসেছেন।

“দেশ সংকটে, এই সময় আপনি ঘরে থাকতে পারেন না। তাদের (রাজাপাকসে পরিবার) ওপর চাপ প্রয়োগ করতে হবে। তাদের জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হবে,” বলেছেন ২৭ বছর বয়সী নির্মাণ প্রকৌশলী সুয়েন।

২০১৯ সালের যে নির্বাচনী প্রচার গোটাবায়া রাজাপাকসেকে ক্ষমতায় এনেছে, সেই প্রচারে ছিলেন গগনা আতাপাত্তুও। তবে তার জন্য এখন আফসোস হচ্ছে ২২ বছর বয়সী এ যুবকের।

“যা করেছি, তার জন্য এখন ভুগছি,” শ্রীলঙ্কানদের দান করা খাবার, পানি ও অন্যান্য পণ্য নিয়ে এসে বড় উন্মুক্ত একটি তাঁবুতে রাখার কাজে সহায়তা করতে করতে বলছিলেন গগনা।

জ্বালানির জন্য দীর্ঘ সারিতে দাঁড়িয়ে অপেক্ষার পর ১৫ কিলোমিটার গাড়ি চালিয়ে বিক্ষোভকারীদের জন্য সুস্বাদু এক গাদা বান নিয়ে এসেছেন ৫৩ বছর বয়সী ওয়াই সি কাথি।

“কাছাকাছি একটি বেকারিতে আমি বিশেষভাবে অর্ডার দিয়ে এই তরুণদের জন্য এগুলো বানিয়েছি। এ তরুণরাই আমাদের ভবিষ্যৎ, এই বিশৃঙ্খলার মধ্যে তারাই আমাদের একমাত্র আশা,” বলেছেন তিনি।