চীনে বিধ্বস্ত উড়োজাহাজের আরোহীদের দেহাবশেষ পাওয়া গেছে

চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম জানিয়েছে, চলতি সপ্তাহে গুয়াংশির পার্বত্য এলাকায় বিধ্বস্ত চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজের আরোহীদের দেহাবশেষ পাওয়া গেছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 March 2022, 06:31 AM
Updated : 24 March 2022, 06:49 AM

উদ্ধারকারী দলগুলো দুর্ঘটনাস্থল থেকে এসব দেহাবশেষ খুঁজে পেয়েছে বলে জানিয়েছে তারা, খবর বিবিসির।

এ দুর্ঘটনায় কতোজন নিহত হয়েছে, কর্তৃপক্ষ সে বিষয়ে এখনো কোনো ঘোষণা দেয়নি; কিন্তু এ পর্যন্ত উড়োজাহাজটির ১৩২ আরোহীর কেউ বেঁচে আছেন বলে কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি।

সোমবার উড়োজাহজটি ইউনান প্রদেশের রাজধানী শহর কুনমিং থেকে গুয়াংডং প্রদেশের রাজধানী গুয়াংজোতে যাওয়ার পথে মাঝ আকাশ থেকে খাড়া পার্বত্য বন এলাকায় পড়ে বিধ্বস্ত হয়। তদন্তকারীরা এখনও জানেননা কেন এমনটি হল।

তবে বুধবার উদ্ধার হওয়া প্রথম ব্ল্যাকবক্স (ককপিট ভয়েস রেকর্ডার) এ রহস্যের জট কিছুটা হলেও ছাড়াতে সাহায্য করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

চীনের বেসামরিক বিমান চলাচল প্রশাসনের (সিএএসি) এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ব্ল্যাকবক্সটির বাইরের অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ভেতরের রেকর্ড ভাল অবস্থায় আছে। তথ্য বিশ্লেষণের জন্য সেটি বেইজিংয়ে পাঠানো হয়েছে।

উদ্ধারকারীরা কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে এ ব্ল্যাকবক্সটি খুঁজে পেয়েছেন। উড়োজাহাটি যেখানে বিধ্বস্ত হয়েছে উঝৌ অঞ্চলের সেই পার্বত্য এলাকায় বুধবার ভারি বৃষ্টি হয়েছে। এতে উড়োজাহাজের আঘাতে ভূমিতে হওয়া গর্তগুলোতে পানিতে পূর্ণ হয়ে গেছে। 

চীনের উড়োজাহাজটি যেখানে বিধ্বস্ত হয়েছে গুয়াংশির সেই পার্বত্য অঞ্চলে কাজ করছেন্ উদ্ধারকারীরা। ছবি: রয়টার্স

দুর্গম পাহাড়ি ঢালগুলো কর্দমাক্ত ও পিছল হয়ে যাওয়ায় কয়েকশত উদ্ধারকারী ও স্বেচ্ছাসেবীদের পক্ষে তল্লাশি চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। তারপরও তারা ককপিট ভয়েস রেকর্ডার, কিছু আরোহীর দেহাবশেষ খুঁজে পেয়েছেন।   

বৃহস্পতিবার হাল্কা বৃষ্টির মধ্যে তারা দ্বিতীয় ব্ল্যাকবক্সের খোঁজে তল্লাশি চালিয়ে যাচ্ছিলেন বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে।

দুর্ঘটনার পরপরই চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ঘটনার পূর্ণ তদন্তের নির্দেশ দিয়ে উপপ্রধানমন্ত্রী লিউ হিসহ শতাধিক কর্মকর্তাকে গুয়াংশি প্রদেশের প্রত্যন্ত পাহাড়ি এলাকায় পাঠিয়ে দেন।

কিন্তু ফ্লাইটটির কোনো কারিগরি ত্রুটি বা আবহাওয়াজনিত কোনো কারণ এ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী কি না, এ পর্যন্ত সেসব নিয়ে কোনো তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।

চীনের বিমান চলাচল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ফ্লাইটটির গমনপথে আবহাওয়া বা অন্য কোনো বিপদ বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। আর প্রায় সাত বছর পুরনো বোয়িং ৭৩৭-৮০০ উড়োজাহাজটি এর অন্তিম উড্ডয়নের আগে করা সব ধরনের পরীক্ষায়ও উৎরে গিয়েছিল বলে চায়না ইস্টার্ন জানিয়েছে। 

চীনের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিমানটি যখন পড়ে যাচ্ছে তখন এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোল থেকে বারবার কল করার হলেও পাইলটরা সাড়া দেননি।

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, অনেকগুলো কারণের ফলাফল হিসেবে এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে থাকে, তবে সেগুলো নির্ধারণ করতে সময় প্রয়োজন।

চায়না ইস্টার্নের কর্মকর্তারা উড়োজাহাজটির পাইলটদের সম্পর্কে তথ্য প্রকাশ করেছেন। দুর্ঘটনার সময় উড়োজাহাজটিতে তিন জন পাইলট ছিলেন।

ফ্লাইটের ক্যাপ্টেন জানুয়ারি, ২০১৮-তে যোগ দিয়েছিলেন এবং তার ৬,৭০৯ ঘণ্টা উড্ডয়নের অভিজ্ঞতা ছিল। প্রথম ও দ্বিতীয় পাইলটের যথাক্রমে ৩১,৭৬৯ ঘণ্টা এবং ৫৫৬ ঘণ্টা উড্ডয়ন অভিজ্ঞতা ছিল। এসব তথ্য প্রকাশ করলেও পাইলটদের নাম প্রকাশ করেনি তারা। 

পুলিশ ও কর্মকর্তারা অস্থায়ী চেকপয়েন্ট বসিয়ে দুর্ঘটনাস্থলে যাওয়ার সবগুলো রাস্তা বন্ধ করে রেখেছে।   তারা শুধু স্থানীয় গ্রামবাসী ও অনুমতিপ্রাপ্তদের প্রবেশ অনুমোদন করছে বলে জানা গেছে।