ইউক্রেইন যুদ্ধ: সাতদিনে যা যা হয়েছে

রাশিয়ার আগ্রাসনের সপ্তম দিনে ইউক্রেইনের কয়েকটি বড় বড় নগরীতে আবাসিক এলাকায় ভারি গোলা বর্ষণ হয়েছে। রুশ বাহিনী অন্তত দুইটি নগরী মারিওপোল ও খারকিভ ঘিরে ফেলেছে। কৌশলগত ভাবে গুরুত্বপূর্ণ দক্ষিণের আরেক নগরী খারসনের পতন ঘটেছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 March 2022, 02:09 PM
Updated : 3 March 2022, 02:53 PM

ইউক্রেইনের প্রধান বাণিজ্য নগরী মারিওপোলে ১৫ ঘণ্টার বেশ সময় ধরে টানা গোলা বর্ষণ চলেছে। নগরীর ডেপুটি মেয়র সারহি ওরলভ সেখানকার পরিস্থিতি বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন, মারিওপোল মানবিক বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে।

তিনি বলেন, প্রচণ্ড গোলা বর্ষণে একটি আবাসিক এলাকায় শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ওরলভের বাবাও ওই এলাকায় বসবাস করছেন। গোলা বর্ষণের পর থেকে তার কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানায় বিবিসি। 

রাশিয়ার দখল করা ক্রিমিয়ার উত্তরের নগরী খারসনে আড়াই লাখের মত মানুষের বসবাস ছিল। সেখানকার বাসিন্দা ৫৮ বছরের প্যারামেডিক লারিসা পাবলোভস্কা বলেন, গোলা বর্ষণে কয়েকটি আবাসিক এলাকা ‘গুঁড়িয়ে গেছে’।

কয়েকটি ভিডিওতে খারসনের সিটি সেন্টারে রাশিয়ার সেনাবাহিনীকে দেখা গেছে। বিবিসি ওইসব ভিডিওর সত্যতা যাচাই করেছে। ইউক্রেইনের দ্বিতীয় বৃহৎ নগরী খারকিভে ছত্রীসেনা নামিয়েছে রাশিয়া। নগরীর উপকণ্ঠের সড়কগুলোতে প্রচণ্ড যুদ্ধ চলছে।

মঙ্গলবার ইউক্রেইনের রাজধানী কিয়েভের ঐতিহাসিক হলোকাস্ট মেমোরিয়াল ‘বাবিন ইয়ার’ এলাকায় রুশ হামলা হয়েছে। এ হামলায় ক্ষোভ এবং নিন্দা প্রকাশ করেছে ইহুদিরা।

বিকল্প বাস্তবতা:

সারা বিশ্বের টেলিভিশন এবং সংবাদমাধ্যমগুলোতে যেখানে ইউক্রেইনের নগরীগুলোতে রাশিয়ার মুহুর্মুহ গোলা বর্ষণ এবং অ্যাপার্টমেন্ট ব্লকে প্রচণ্ড শব্দে বিস্ফোরণের খবর প্রকাশ করছে সেখানে রাশিয়ার টেলিভিশন চ্যানেলগুলো তাদের দর্শকদের কী দেখাচ্ছে?

বিবিসি-র একটি দল রাশিয়ার প্রধান প্রধান টেলিভিশন চ্যানেলের খবরের উপর নজর রেখে তা বিশ্লেষণ করে বলেছে, চ্যানেলগুলো মূলত দনবাস (দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক) অঞ্চলের খবর প্রচার করছে। রুশপন্থি বিচ্ছিন্নতাবাদীরা ২০১৪ সাল থেকে দনবাস অঞ্চল দখল করে আছে এবং এখন তারা নতুন করে আক্রমণ শুরু করেছে।

এমনকী কোনও কোনও চ্যানেল ইউক্রেইনকে যুদ্ধাপরাধী বলছে। বলছে, তারা রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে ইউক্রেইনের বেসামরিক নাগরিকদের মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে। আর কোনো কোনো চ্যানেল যুদ্ধক্ষেত্রে রুশ বাহিনীর সাফল্যের খবর দিচ্ছে।

শরণার্থীদের স্বাগতম:

ইউক্রেইনে রাশিয়ার আগ্রাসন শুরুর পরপরই দেশটির লাখ লাখ বাসিন্দা প্রাণ বাঁচাতে সীমান্তে ছুটতে থাকে। জাতিসংঘের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এরইমধ্যে আট লাখের বেশি ইউক্রেইনীয় দেশ ছেড়েন।

ওই সব শরণার্থীরা পোল্যান্ড, স্লোভাকিয়া, হাঙ্গেরি, রোমানিয়া, মলডোবা এমনকি রাশিয়াতেও আশ্রয় নিয়েছেন। সবথেকে বেশি শরণার্থী আশ্রয় নিয়েছেন পোল্যান্ডে। দেশটির নাগরিকরাও ইউক্রেইন থেকে আসা শরণার্থীদের আশ্রয় দিতে এগিয়ে এসেছেন।

এমনই একজন তিন সন্তানের ‍মা জোয়ানা। তিনি কিয়েভ থেকে পালিয়ে আসা এক মা ও তার মেয়েকে নিজ বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছেন।

বিবিসি-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আবেগাক্রান্ত জোয়ানা বলেন, ‘‘তাদের সাহায্য প্রয়োজন। কারণ, সেখানে হাজার হাজার শিশু প্রচণ্ড ঠান্ডার মধ্যে সম্পূর্ণ একা হয়ে পড়েছে।”

গণতন্ত্রের জন্য লড়াই:

কিয়েভের মেয়র ভিতালি ক্লিচকো এবং তার ভাই ওলাদিমির উভয় আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত বক্সার। তারা দুজনই ইউক্রেইনের মিত্র দেশগুলোর কাছে রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সাহায্য কামনা করেছেন।

ভিতালি বলেন, ‘‘ইউক্রেইনের সামরিক সরঞ্জাম, অর্থ এবং ওষুধ প্রয়োজন।

‘‘ইউক্রেইনের মানুষ গণতন্ত্র এবং নিজেদের পছন্দ মত বাঁচার অধিকারের দাবিতে লড়াই করছে।”