টোঙ্গামুখী অস্ট্রেলীয় ত্রাণবাহী জাহাজে ভাইরাসের হানা

করোনাভাইরাস মুক্ত টোঙ্গার পথে ত্রাণ নিয়ে রওনা হওয়া অস্ট্রেলিয়ার একটি যুদ্ধজাহাজের প্রায় দুই ডজন ক্রু-র শরীরে কোভিড সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Jan 2022, 08:35 AM
Updated : 25 Jan 2022, 11:23 AM

বুধবার স্থানীয় সময় ভোরে জাহাজটির টোঙ্গায় পৌঁছনোর কথা রয়েছে বলে অস্ট্রেলিয়ার কর্তৃপক্ষ মঙ্গলবার জানিয়েছে।

১৫ জানুয়ারি দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের একটি জলমগ্ন আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত ও এতে সৃষ্ট সুনামিতে বিপর্যয়ের মুখে পড়ে নিকটবর্তী টোঙ্গা দ্বীপপুঞ্জ। আগ্নেয় ছাই ও সুনামির ঢেউবাহিত লবণাক্ত পানির কারণে দ্বীপগুলোর পানি সরবরাহ ব্যবস্থা দুষিত হয়ে পড়ে, পাশাপাশি ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কারণে খাবার ও অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের অভাব দেখা দেয়।

এ পরিস্থিতিতে বিশ্বের অনেক দেশই প্রশান্ত মহাসাগরের প্রত্যন্ত দ্বীপ দেশটিতে ত্রাণ পাঠানো শুরু করেছে। নিউ জিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া তাদের বিমান বাহিনীর আকাশযান ও নৌবাহিনীর জাহাজগুলো ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক ত্রাণ সরবরাহে নেতৃত্ব দিচ্ছে। 

বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস মহামারীর প্রকোপ চললেও টোঙ্গা এখনও প্রায় কোভিড মুক্ত আছে। এ অবস্থা বজায় রাখতে মানুষের সংস্পর্শ ছাড়াই ত্রাণ সরবরাহের অনুরোধ করেছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। তাদের আশংকা, একবার কোনোভাবে সেখানে কোভিড সংক্রমণ ছড়ানো শুরু করলে মাত্র এক লাখ পাঁচ হাজার জনসংখ্যার দেশটি ধ্বংসের মুখে পড়বে।

অস্ট্রেলিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিটার ডাটন জানিয়েছেন, এইচএমএএস অ্যাডিলেডে থাকা প্রায় ৬০০ ক্রুকে পরীক্ষার পর ২৩ জনের কোভিড পজিটিভ এসেছে।

জাহাজটি শুক্রবার অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেন থেকে রওনা হয়েছিল। এতে প্রচুর মানবিক ত্রাণ ও চিকিৎসা সামগ্রী, হেলিকপ্টার ও পানি বিশুদ্ধকরণ যন্ত্রপাতির পাশাপাশি অস্ট্রেলীয় সেনাবাহিনীর একটি ইঞ্জিনিয়ার কন্টিনজেন্টও আছে। 

অস্ট্রেলিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বুধবার ভোরে জাহাজটির টোঙ্গায় পৌঁছার কথা আছে।

স্কাই নিউজকে ডাটন বলেন, “সেখানে কোনো হুমকি যেন দেখা না দেয় তা নিশ্চিত করতে জাহাজটিকে সাগরে রাখতে টোঙ্গার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কাজ করবো আমরা আর এই মহূর্তে টোঙ্গার সরকার অবশ্যই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছে। স্পষ্টতই তাদের সাহায্য খুব দরকার কিন্তু তারা কোভিডের ঝুঁকি নিতে চায় না।”

পরে আরেক বিবৃতিতে দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এইচএমএএস অ্যাডিলেড মিশন অব্যাহত রাখবে এবং কোভিড সুরক্ষা নিয়মনীতি মেনে ত্রাণ সরবরাহ করবে।

নিজেদের বিবৃতিতে তারা বলেছে, “কোভিড পজিটিভ আসা ক্রু-দের ও যারা তাদের ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে এসেছিল সবাইকে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে।” 

তারা জানিয়েছে, জাহাজটিতে কোভিড পরীক্ষার ব্যবস্থাসহ ৪০ শয্যার একটি হাসপাতাল ও নিবিড় পরিচর্যা ওয়ার্ড আছে। জাহাজটির সব ক্রু-র টিকা নেওয়া আছে এবং যে ২৩ জনের সংক্রমণ ধরা পড়েছে তাদের উপসর্গ প্রায় নেই অথবা মৃদু।

গত সপ্তাহ থেকে টোঙ্গায় অস্ট্রেলিয়া ও নিউ জিল্যান্ডের ত্রাণবাহী ফ্লাইটগুলো নামতে শুরু করে, কিন্তু পণ্য হস্তান্তর সংস্পর্শবিহীন উপায়ে সম্পন্ন করা হচ্ছে।

এর আগে অস্ট্রেলিয়ার একটি ত্রাণবাহী বিমান টোঙ্গার পথে থাকার সময় এক ক্রু-র কোভিড ধরা পড়লে ফ্লাইটটি মাঝপথ থেকে ফিরে যায়।

টোঙ্গায় থাকা জাতিসংঘ, রেড ক্রস ও অন্যান্য ত্রাণ সংস্থাগুলো সতর্ক করে বলেছে, এই সময়ে দ্বীপপুঞ্জটিতে যদি কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়ে তাহলে তা বিপর্যয়কর হবে।