ইউক্রেইন নিয়ে উত্তেজনা: ৮,৫০০ মার্কিন সেনা সতর্ক অবস্থায়

ইউক্রেইন ঘিরে উত্তেজনা বাড়তে থাকায় যুক্তরাষ্ট্রের সাড়ে ৮ হাজার সৈন্যকে স্বল্প সময়ের নোটিসে যুদ্ধে পাঠানোর জন্য সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে পেন্টাগন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Jan 2022, 04:40 AM
Updated : 25 Jan 2022, 04:40 AM

পেন্টাগনের বরাতে মঙ্গলবার বিবিসি ও নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে জানানো হয়, সৈন্যদের সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে, তবে তাদের ইউরোপে মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি।

পেন্টাগনের প্রেস সেক্রেটারি জন কিরবি সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “সামরিক জোট নেটোর সদস্যরা তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিলে অথবা রাশিয়ার সেনা মোতায়েন ঘিরে অন্য কোনো পরিস্থিতির উদ্ভব হলে তবেই যুক্তরাষ্ট্র সেনা পাঠাবে।”

যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এককভাবে ইউক্রেইনে সেনা মোতায়েনের কোনো পরিকল্পনা নেই বলেও জানান তিনি।

জন কিরবি বলেন, “এটা খুবই স্পষ্ট যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার বিষয়ে রাশিয়ার পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। তবে সেনাবাহিনীকে সতর্ক অবস্থায় রাখার পদক্ষেপটি মূলত আমাদের নেটোর মিত্রদের আশ্বস্ত করার জন্যই নেওয়া।”

পশ্চিমা এবং ইউক্রেইনের গোয়েন্দা সংস্থাগুলা বলে আসছে, এ বছরের শুরুর দিকেই কোনো এক সময় আরেকটি হামলা বা অভিযানের পরিকল্পনায় আছে মস্কো।

রাশিয়া প্রতিবেশী ইউক্রেইন সীমান্তে এক লাখ সেনা মোতায়েন করলেও কোনো ধরনের অভিযান চালানোর পরিকল্পনার কথা বরাবরই অস্বীকার করে আসছে।

এদিকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেইনের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য সেদেশের সরকারে ‘মস্কোপন্থি কাউকে বসানোর ষড়যন্ত্র’ করছেন বলেও অভিযোগ তুলেছে যুক্তরাজ্য।

ব্রিটিশ মন্ত্রীরা হুঁশিয়ার করেছেন, ইউক্রেইনে হামলা হলে রাশিয়াকে চরম পরিণতি ভোগ করতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্র সম্মুখ সারির সেনাদের রসদ হিসেবে ৯০ টনের মত গোলাবারুদ পাঠিয়েছে ইউক্রেইনে। পাশাপাশি সেখানে থাকা মার্কিন দূতাবাস কর্মীদের পরিবারের সদস্যদের সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ওয়াশিংটন।

সোমবারের সংবাদ সম্মেলনে কিরবি বলেন, “আমি মনে করি না, ইউরোপ মহাদেশে কেউ আরেকটি যুদ্ধ দেখতে চায়।”

সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে সোমবার ইউরোপীয় মিত্রদের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তাদের আলোচনার মূল বিষয় ছিল রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে একটি যৌথ কৌশল নির্ধারণ।

আঞ্চলিক নিরাপত্তা জোরদারে ডেনমার্ক, স্পেন, ফ্রান্স ও নেদারল্যান্ডসসহ নেটোর বেশ কিছু সদস্য এরইমধ্যে পূর্ব ইউরোপে যুদ্ধ বিমান ও রণতরী পাঠানোর পরিকল্পনা করছে।

ইউক্রেইন সংকট নিয়ে সোমাবার প্রেসিডেন্ট বাইডেন ভিডিও ফোনকলে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ, জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস, ইতালির প্রধানমন্ত্রী মারিও দ্রাঘি, পোল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আন্দ্রয়েজ দুদা, নেটো প্রধান জেনস স্টোলটেনবার্গ, ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতা উরসুলা ফন ডের লিয়েন ও চার্লস মিশেলের সঙ্গে কথা বলেন।

পরে প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, “আমরা খুবই খুবই খুবই ভালো আলোচনা করেছি- ইউরোপের সব নেতাই একইসুরে কথা বলেছেন।”

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখপাত্র জানিয়েছেন, ‘ক্রমেই বেড়ে চলা রুশ আগ্রাসনের’ বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ঐক্য ধরে রাখার বিষয়ে নেতারা একমত হয়েছেন। ইউক্রেইনে রাশিয়া আর কোনো ধরনের আগ্রাসন চালালে “মিত্ররা অবশ্যই তাৎক্ষণিক জবাবে মস্কোর বিরুদ্ধে কঠোর অবরোধ আরোপ করবে।”

নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাম্প ডেভিডে প্রেসিডেন্ট বাইডেন পেন্টাগনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। ইউক্রেইনে পরিস্থিতির অবনতি হলে রাশিয়ার কতোটা কাছাকাছি যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সরঞ্জাম পৌঁছানো যায়, তার বিভিন্ন বিকল্প নিয়ে সেখানে আলোচনা হয় বলে প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। 

জন কিরবি সাংবাদিকদের বলেন, কমব্যাট ব্রিগেড, চিকিৎসা, আকাশ ভ্রমণ, পরিবহন, গোয়েন্দা ও পর্যবেক্ষণ বাহিনী ও তাদের সরঞ্জামসহ সেনাদের একটি বড় অংশকে সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে। তবে নির্দিষ্ট করে ইউনিটের কথা জানাতে রাজি হননি তিনি।

নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে জানানো হয়, যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনীতে ‘হাই অ্যালার্ট’ বা ‘উচ্চ সতর্কতা’র মানে হল, সেনারা আরও নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকবেন যাতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে তাদের মোতায়েন করা সম্ভব হবে।

কর্মকর্তারা জানান, আগে ১০ দিনের নোটিসে এই সেনা মোতায়েনের ব্যবস্থা ছিল, যা এখন মাত্র পাঁচ দিনে নামিয়ে আনা হয়েছে।

কিরবি জানান, নেটোর সদস্য হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র এককভাবে রোমানিয়া বা পোল্যান্ডে সেনা পাঠাতে পারে, যা নির্দিষ্ট ধরনের সহায়ক বাহিনীর অনুরোধের প্রেক্ষাপটে করা হয়। কিন্তু উচ্চ সতর্কতায় রাখা সেনারা নেটোর একটি বিশেষ বাহিনীর অংশ হিসেবে থাকবে।

এই বিশেষ ইউনিট, যা নেটো রেসপন্স ফোর্স বা এনআরএফ নামে পরিচিত, সেটি ৪০ হাজার সেনা সদস্যের একটি বহুজাতিক বাহিনী।

এই বাহিনী সেনা, বিমান, নৌ ও বিশেষ অভিযান পরিচালনা বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে গঠিত এবং জরুরি পরিস্থিতিতে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবহার করার লক্ষ্যে এটা গঠন করা হয়।

সেন্টার ফর ইউরোপিয়ান পলিসি অ্যানালাইসিসের সদস্য ইউরোপে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক সেনা কমান্ডার ফ্রেডরিক হজেস বলেন, “এটা তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ এটা ইঙ্গিত দিচ্ছে যে যুক্তরাষ্ট্র একক সিদ্ধান্তে কিছু করছে না বরং তারা এনআরএফে সেনা সরবরাহ করছে, সার্বিকভাবে নেটোর প্রেক্ষাপটে থেকে।”

আরও পড়ুন: