আগ্নেয় ছাই, মানসিক ট্রমার সঙ্গে লড়ছে টোঙ্গার বাসিন্দারা

দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের একটি জলমগ্ন আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতে সৃষ্ট সুনামির আঘাতে মানসিক ট্রমা আর চারিদিক ছেয়ে যাওয়া আগ্নেয় ছাইয়ের সঙ্গে লড়ছে টোঙ্গার বাসিন্দারা।

>>রয়টার্স
Published : 23 Jan 2022, 03:57 PM
Updated : 24 Jan 2022, 03:02 AM

সুনামির এক সপ্তাহ পরও দেশটির পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক হয়নি। আগ্নেয় ছাই থেকে বাঁচতে শিশুদের বাড়ির বাইরে খোলা আকাশের নিচে খেলাধুলা করতে ‍নিষেধ করছে পরিবারের মানুষেরা।

আগ্নেগিরির অগ্ণ্রুৎপাতের সেই শব্দ আর সুনামির বিশাল ঢেউয়ের ধ্বংসলীলা প্রত্যক্ষ করা অনেক মানুষই এখনও সেই ভয়াবহতা ভুলতে পারেনি। রেডক্রসের ত্রাণকর্মী এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের কথা থেকে উঠে এসেছে এই প্রতিকূলতার সঙ্গে টোঙ্গাবাসীদের লড়াইয়ের কাহিনী।

সুনামিতে ফোন ও ইন্টারনেট লাইন বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া টোঙ্গার সঙ্গে এখনও বহির্বিশ্বের যোগাযোগ পুরোপুরি স্থাপন হয়নি। ইন্টারনেট সংযোগ কিছুটা সচল হলেও মূল ভূখন্ডের বাইরের দ্বীপগুলোতে এখনও মোবাইল ফোন সার্ভিস চালু করা যায়নি।

রেডক্রস বলছে, তারা টোঙ্গার মূল ভূখন্ডের মানুষদের জন্য শুধুমাত্র তাঁবু, খাবার, পানি ও পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থা করাই নয়, বরং তাদেরকে মানসিক ট্রমা কাটিয়ে উঠতেও সহায়তা করছে।

টোঙ্গায় রেডক্রসের ভাইস প্রেসিডেন্ট ড্রিউ হ্যাভিয়া বলেন, এ মূহুর্তে সবাই সংগ্রাম করছে। শিশুরা যেন বাড়ির বাইরে না যায় সেদিকে নজর রাখছে পরিবারগুলো।

সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হা’আপেই দ্বীপ থেকে কিছু বাসিন্দাকে মূল দ্বীপ টোঙ্গাটাপুতে আনা হলেও এখনও অনেকেই হা’আপেই ছাড়তে চাইছেন না বলে জানান হ্যাভিয়া।

তিনি বলেন, “সুনামির ঢেউ ছুটে আসা এবং গ্রামের পর গ্রাম ধ্বংসের সেই ভয়াবহতার যে মানসিক প্রভাব তাদের ওপর পড়েছে, তাতে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে তাদের কিছুটা সময় লেগে যাবে।”

রিং অব ফায়ারে অবস্থিত হুঙ্গা-টোঙ্গা-হু্ঙ্গা হা’আপেই আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের পর দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরজুড়ে শকওয়েভ ছড়িয়ে। পুরো প্রশান্ত মহাসাগরেই এর ফলে তরঙ্গ অনুভূত হয়।

 শব্দ শুনা গেছে অন্তত ২ হাজার ৩০০ কিলোমিটার দূরে নিউ জিল্যান্ড পর্যন্ত। এমনকী স্যাটেলাইটগুলোতেও এই বিস্ফোরণের শকওয়েভ ধরা পড়েছে। ভাকালোয়া সৈকতের এক রিসোর্ট মালিক জন টুকুয়াফু বলেন, “আমি মনে করেছিলাম পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।”

ছবি: রয়টার্স

নিউজ ওয়েবসাইট ’মাতাঙ্গি টোঙ্গা অনলাইন’ এর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ম্যারি লিন ফনুয়া রোববার রয়টার্স বার্তা সংস্থাকে বলেন, “আমার মনে হয়, গোটা দ্বীপের আমরা সবাই বড় রকমের ধাক্কা খেয়েছি। অগ্ন্যুৎপাতের সেই ভয়ঙ্কর শব্দ ভুলতে অনেকেরই পুরো সপ্তাহ লেগে গেছে।”

ফনুয়া বলেন, “(আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত) শব্দ শ্রবণসীমার বাইরে ছিল। তবুও আমি তা অনুভব করতে পেরেছি। বাড়ি কাঁপছিল, জানালা কাঁপছিল। বড় ধরনের বিস্ফোরণ ঘটার আগে শব্দ কেবল তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছিল।”

তিনি জানান, বাতাসে মিশ্রিত ছাই ও ধুলোর ফলে টোঙ্গার বাসিন্দাদের শরীরে চুলকানির মতো উপসর্গ্ দেখা দিচ্ছে। গাছের পাতা ছাইয়ে ধূসর হয়ে গেছে এবং পাতা পড়েও যাচ্ছে। এই ছাই যাতে ধুয়ে যায় সেজন্য স্থানীয়রা চাইছে বৃষ্টি হোক।

সুনামির আঘাতের সময় ফনুয়া সমুদ্র তীরবর্তী অফিসে থেকে নিউ জিল্যান্ডে তার ছেলের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলছিলেন। হঠাৎ নেটওয়ার্ক সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় তার ছেলে “তিনি (ফনুয়া) ঢেউয়ে ভেসে চলে গেছেন” বলে মনে করেছিল।

টোঙ্গায় সীমিত আকারে আন্তর্জাতিক যোগাযোগ চালু হওয়ার আগ পর্যন্ত সেখানকার পরিবারগুলোর বিদেশে থাকা ‍সদস্যদের অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে সময় পার করতে হয়েছে। তবে বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েও টোঙ্গা খুব দ্রুতই উদ্ধার তৎপরতা এবং সহায়তা পেয়েছে, বলেন ফনুয়া।

আগ্নেয় ছাইয়ে পানি সরবরাহ ব্যবস্থা দূষিত এবং সুনামিতে ঘরবাড়ি ধ্বংস হওয়ার পাঁচ দিনের মধ্যেই গত বৃহস্পতিবার নিউ জিল্যান্ডের একটি বিমান ত্রাণ নিয়ে টোঙ্গায় পৌঁছায়।

ওদিকে পানীয় জলকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে বলে টোঙ্গার সরকার জানিয়েছে। জাতীয় দুর্যোগ সংস্থার একটি টিম ইতোমধ্যেই বাসিন্দাদের মধ্যে ৬০ হাজার লিটার পানি বিতরণ করেছে।

সমুদ্রের পানি পরিশোধনের জন্য ডেসালিনেশন প্ল্যান্ট থাকা নিউ জিল্যান্ড নৌবাহিনীর একটি জাহাজ শুক্রবার টোঙ্গায় পৌঁছেছে। টোঙ্গার বন্দরে অবস্থান করে জাহাজটি সাগরের পানি নেওয়া শুরু করেছে, এটি দৈনিক ৭০ হাজার লিটার সুপেয় পানি উৎপাদন করছে।