পুতিনকে নিয়ে মন্তব্যের জেরে জার্মান নৌবাহিনী প্রধানের পদত্যাগ

ইউক্রেইন সঙ্কটে চলমান উত্তেজনার মধ্যে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে নিয়ে মন্তব্যের জেরে পদত্যাগ করেছেন জার্মানির নৌবাহিনীর প্রধান ভাইস অ্যাডমিরাল কে-আচিম শোয়েনবাখ।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Jan 2022, 08:48 AM
Updated : 23 Jan 2022, 08:48 AM

শনিবার এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, “আমি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ক্রিস্টিন ল্যামব্রেখটকে অবিলম্বে আমার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য বলেছিলাম, মন্ত্রী আমার অনুরোধ গ্রহণ করেছেন।”

রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, শুক্রবার ভারতে একটি আলোচনায় অংশ নিয়ে ভাইস অ্যাডমিরাল শোয়েনবাখ বলেন, ‍“পুতিন সম্মান পাওয়ার যোগ্য এবং কিয়েভ কখনোই মস্কোর কাছ থেকে ক্রিমিয়া ফিরে পাবে না।”

তার ওই বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়।

শোয়েনবাখের পদত্যাগের আগেই প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় প্রকাশ্যে তার মন্তব্যের সমালোচনা করে বলেছিল, তার ওই বক্তব্যে জার্মানির অবস্থান প্রতিফলিত হয় না।

তিনি এমন সময়ে এই মন্তব্য করেছেন যখন রাশিয়া ইউক্রেইন সীমান্তে এক লাখ সেনা মোতায়েন করেছে। বিষয়টি নিয়ে পশ্চিমা জোট ও রাশিয়ার মধ্যে উত্তেজনা চলছে।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, পশ্চিমা এবং ইউক্রেইনের গোয়েন্দা সংস্থাগুলা বলে আসছে, এ বছরের শুরুর দিকেই কোনো এক সময় আরেকটি হামলা বা অভিযানের পরিকল্পনায় আছে মস্কো।

এ নিয়ে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রাস এক বিবৃতিতে বলেছেন, “রাশিয়াকে অবশ্যই এ ধরনের কর্মকাণ্ড থামাতে হবে, আগ্রাসন ও অপপ্রচার বন্ধ করে কূটনীতির পথ অনুসরণ করতে হবে।”

দিল্লিতে অনুষ্ঠিত সভায় শোয়েনবাখ ইংরেজিতে দেওয়া বক্তব্যে বলেন, “পুতিন পশ্চিমাদের কাছে সমান হিসাবে বিবেচিত হতে চান। তিনি (পুতিন) আসলে যা চান তা হল সম্মান।”

শোয়েনবাখ রাশিয়াকে একটি পুরনো এবং গুরুত্বপূর্ণ দেশ হিসেবে বর্ণনা করে বলেছিলেন, “কাউকে সম্মান দেওয়ার খরচ কম, এমনকি কোনো খরচও হয় না… যে সম্মানের তিনি দাবিদার, তা দেওয়া সহজ- এবং সম্ভবত তার প্রাপ্যও।”

শোয়েনবাখ স্বীকার করেন, ইউক্রেইনে রাশিয়ার পদক্ষেপের ব্যাপারে মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন। কিন্তু তিনি বলেন, “ক্রিমিয়া উপদ্বীপটি চলে গেছে, এটি কখনই ফিরে আসবে না, এটি সত্য।”

এ মন্তব্যের জন্যও ক্ষমা চেয়েছেন জার্মান নৌবাহিনীর প্রধান। তিনি বলেন, “ভারতে আমার মন্তব্য… আমার অফিসে ক্রমবর্ধমান চাপ সৃষ্টি করছে। জার্মান নৌবাহিনী, জার্মান বাহিনী, বিশেষ করে ফেডারেল রিপাবলিক অব জার্মানির আরও ক্ষতি এড়াতে পদত্যাগের এই পদক্ষেপকে প্রয়োজনীয় বলে মনে করছি।”

ইউক্রেইনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শোয়েনবাখের মন্তব্য প্রত্যাহার করার জন্য জার্মানির কাছে দাবি জানিয়েছিল। তাদের ভাষ্য ছিল, রাশিয়ার সঙ্গে সমস্যা সমাধানের চেষ্টার মধ্যে তার এই বক্তব্য ক্ষতির কারণ হবে।

দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রো কুলেবা এক টুইটে বলেন, “২০১৪ সালের পর থেকে সহযোগিতা করার জন্য জার্মানির প্রতি কৃতজ্ঞ ইউক্রেইন। কিন্তু জার্মানির বর্তমান মন্তব্য হতাশাব্যঞ্জক এবং সহযোগিতা প্রচেষ্টার বিরোধী।”

ইউক্রেইনবাসীরা সেদেশের রুশপন্থি প্রেসিডেন্টকে উৎখাত করার পর রাশিয়া ২০১৪ সালে ইউক্রেইনে আগ্রাসন চালিয়ে ক্রিমিয়া উপদ্বীপ দখল করে নেয়।

তখন থেকেই রাশিয়ার পূর্ব সীমান্তের এলাকাগুলোর কাছে ইউক্রেইনের সেনাবাহিনীর সঙ্গে রাশিয়া-সমর্থিত বিদ্রোহীদের যুদ্ধ চলে আসছে।

আরও খবর: