মস্কোপন্থি কাউকে ইউক্রেইনে বসানোর চক্রান্তে পুতিন: যুক্তরাজ্য

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেইনের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য সেদেশের সরকারে ‘মস্কোপন্থি কাউকে বসানোর ষড়যন্ত্র’ করছেন বলে অভিযোগ তুলেছে যুক্তরাজ্য।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Jan 2022, 06:04 AM
Updated : 23 Jan 2022, 07:59 AM

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যতিক্রমী এই পদক্ষেপে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ক্রেমলিনের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে ইউক্রেইনের সাবেক এমপি ইয়েভেন মুরায়েভের নামও প্রকাশ করেছে।

এ ছাড়া ইউক্রেনের আরও চারজন রাজনীতিবিদের নাম বলেছে ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দপ্তর, যারা রাশিয়ার গোয়েন্দা সংস্থার সাথে যোগাযোগ রেখে আসছে বলে যুক্তরাজ্যের ভাষ্য।

ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দপ্তর বলছে, এর মধ্যে কয়েকজন আছেন, যারা ইউক্রেইন আক্রমণের পরিকল্পনায় কাজ করা রুশ গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সাথেও যোগাযোগ করেছিলেন।

ইউক্রেইনে যে কোনো মুহূর্তে রুশ হামলার আশঙ্কার কথা গত কয়েক দিন ধরেই বলে আসছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা।

রাশিয়া ইউক্রেইন সীমান্তে এক লাখ সেনা সমাবেশ করেছে, তবে হামলা চালানোর কোনো পরিকল্পনা নেই বলে তাদের ভাষ্য।

যুক্তরাজ্যের মন্ত্রীর হুঁশিয়ার করেছেন, রাশিয়ার কোনো বাহিনী ইউক্রেইন সীমান্ত অতিক্রম করলে ‘মারাত্মক পরিণতি’ ভোগ করতে হবে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রাস এক বিবৃতিতে বলেছেন, “আজ যে তথ্য প্রকাশ পাচ্ছে, তা ইউক্রেইনকে ধ্বংস করার পরিকল্পনায় রাশিয়ার কর্মকাণ্ড এবং ক্রেমলিনের চিন্তাভাবনাকেই সামনে এনেছে। 

“রাশিয়াকে অবশ্যই এ ধরনের কর্মকাণ্ড থামাতে হবে, আগ্রাসন ও অপপ্রচার বন্ধ করে কূটনীতির পথ অনুসরণ করতে হবে।”

ইউক্রেইনবাসীরা সেদেশের রুশপন্থি প্রেসিডেন্টকে উৎখাত করার পর রাশিয়া ২০১৪ সালে ইউক্রেইনে আগ্রাসন চালিয়ে ক্রিমিয়া উপদ্বীপ দখল করে নেয়।

তখন থেকেই রাশিয়ার পূর্ব সীমান্তের এলাকাগুলোর কাছে ইউক্রেইনের সেনাবাহিনীর সঙ্গে রাশিয়া-সমর্থিত বিদ্রোহীদের যুদ্ধ চলে আসছে।

পশ্চিমা এবং ইউক্রেইনের গোয়েন্দা সংস্থাগুলা বলে আসছে, এ বছরের শুরুর দিকেই কোনো এক সময় আরেকটি হামলা বা অভিযানের পরিকল্পনায় আছে মস্কো।

ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রাস বলেন, “যুক্তরাজ্য এবং আমাদের অংশীদাররা বারবার বলেছে, ইউইক্রেনে রাশিয়ার যে কোনো সামরিক অনুপ্রবেশ ঘটলে কৌশলগত বিশাল ভুল হবে, যার জন্য চরম মূল্য দিতে হবে।”

অনদিকে হামলা পরিকল্পনার কথা অস্বীকার করে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে বেশ কিছু দাবি করেছেন। এর মধ্যে ইউক্রেইনকে নেটো জোটে না নেওয়ার দাবি রয়েছে। তা ছাড়া, নেটো যাতে সামরিক মহড়া না চালায় এবং পূর্ব ইউরোপে অস্ত্র সরবরাহ না করে সেটিও চান পুতিন।

ইউক্রেইন সরকারে নেতৃত্ব দিতে মস্কোপন্থিদের বসানোর পরিকল্পনার অভিযোগের জবাবে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক টুইটে বলেছে, “ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দপ্তর বিভ্রান্তিমূলক তথ্য প্রচার করছে।”

এই ‘উসকানিমূলক কার্যক্রম এবং ফালতু আলাপ বন্ধ করার’ আহ্বান জানিয়েছে রাশিয়ার সরকার।

ক্রেমলিনের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে নাম আসা মুরায়েভ একটি মিডিয়া কোম্পানির মালিক। ২০১৯ সালের নির্বাচনে ৫ শতাংশ ভোট না পাওয়ায় পার্লামেন্টে আসন হারান তিনি।

অবজারভার পত্রিকাকে তিনি বলেছেন, ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দপ্তর ‘বিভ্রান্ত’ বলে তার মনে হচ্ছে।

“বিষয়টি যৌক্তিকও নয়। রাশিয়ায় আমি নিষিদ্ধ। শুধু তাই নয়, সেখানে আমার বাবার ফার্মের টাকাও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।”

মস্কোপন্থি আরও যে চার ইউক্রেইনিয়ান রাজনীতিবিদের নাম ব্রিটিশ গোয়েন্দা তথ্যে এসেছে, তাদের একজন মাইকোলা আজারভ। রুশপন্থি সাবেক প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচের অধীনে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি।

২০১৪ সালে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে আজারভ রাশিয়ায় পালিয়ে যান, যেখানে তাকে নির্বাসিত পুতুল সরকার হিসাবে দেখা হত।

‘আত্মসাত ও ক্ষমতার অপব্যবহারের’ অভিযোগে ইউক্রেইন সরকার ইন্টারপোলের মাধ্যমে ‘রেড নোটিস’ জারি করেছিল মাইকোলা আজারভের বিরুদ্ধে।

এ ছাড়া ইউক্রেনের জাতীয় নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা কাউন্সিলের সাবেক উপ-প্রধান ভলোদিমির সিভকোভিচের নামও এসেছে। রুশ গোয়েন্দাদের সঙ্গে কাজ করার অভিযোগে এ সপ্তাহে তার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।

অন্যরা হলেন- সেরহি আরবুজভ এবং আন্দ্রি ক্লুয়েভ, তারা দুজনেই প্রেসিডেন্ট ইয়ানুকোভিচের অধীনে উপ-প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

ইউক্রেইনে হামলার আশঙ্কার মধ্যেই শুক্রবার জেনেভায় জরুরি বৈঠকে বসেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন এবং রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ।

এর আগে বৃহস্পতিবার ব্লিংকেন সতর্ক করে দিয়ে বলেছিলেন, রাশিয়ার কোনো বাহিনী ইউক্রেইন সীমান্ত অতিক্রম করলে মারাত্মক পরিণতি ভোগ করতে হবে।

ইউক্রেইন নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে সৃষ্ট উত্তেজনা প্রশমনের কূটনৈতিক চেষ্টাতেই ব্লিনকেন এ সপ্তাহে ইউরোপ সফর করছেন।

ইউক্রেইনে রাশিয়া কোনোরকম আগ্রাসনের চেষ্টা করলে দেশটির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ নিয়ে মিত্রদেশগুলোর সমর্থন আদায় করাও তার এ সফরের লক্ষ্য।