বিবিসি জানায়, গত সপ্তাহান্তে তামানা নারীদের কাজ ও শিক্ষা গ্রহণের অধিকার নিশ্চিত করার দাবিতে আরও বেশ কয়েকজন নারীর সঙ্গে একটি বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন। তালেবান বিক্ষোভকারীদের উপর পিপার স্প্রে ব্যবহার করেছে; এমনকি কাউকে কাউকে বৈদ্যুতিক শকও দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
পরবর্তীতে তামানাসহ আরও একজন নিখোঁজ হলে, তালেবান তাদেরকে ধরে নিয়ে গিয়েছে বলে দাবি করেছেন অনেকে।
গত বুধবার রাত ৮টার দিকে কয়েকজন অস্ত্রধারী তামানার ঘরে প্রবেশ করার চেষ্টা করে। বাড়িতে তামানা তার দুই বোনের সঙ্গে ছিলেন। তামানা দরজা খুলতে না চাইলে অস্ত্রধারীরা দরজায় লাথি মারতে থাকে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লাইভে এসে তামানাকে বলতে শোনা যায়, “আমাকে কেউ বাঁচান, তালেবান আমার ঘরে চলে এসেছে, আমি ও আমার বোনেরা বাসায় একা।”
তামানা তাদেরকে পরের দিন আসতে আহ্বান জানালেও তারা (তালেবান) তা শুনতে নারাজ। এরপর থেকেই তামানা নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানিয়েছে বিবিসি।
ভিডিওটি শেষ হওয়ার আগে পর্যন্ত তামানাকে সাহায্যের জন্য চিৎকার করতে শোনা গেছে।
তামানার প্রতিবেশীরা জানান, তারপর দুই দিন ধরে তামানা নিখোঁজ রয়েছেন।
এক প্রতিবেশী জানান, ‘‘তামানা দুই দুইদিন ধরে নিখোঁজ; আমি তার বাসায় গিয়েও তার খোঁজে পাইনি। ঘরে আমি কারো সাড়া পাইনি। দরজার সামনে তখনও বুটের একটি দাগ লেগে থাকতে দেখাছি।”
তামানাকে তার দুই বোনসহ তালেবান অস্ত্রধারীরা তুলে নিয়ে গেছে বলে প্রতিবেশীরা অভিযোগ করেছে।
অন্যান্য বিক্ষোভকারীদের উপরও লক্ষ্য রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে বিবিসি। একই রাতে পারাওয়ানা ইব্রাহিমখেল নামের আরেক বিক্ষোভকারী নিখোঁজ হয়েছেন।
গত বছর ১৫ অগাস্ট তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতা গ্রহণের পর দেশটির নারীদের তাদের নিজেদের ঘরে কয়েদির মত জীবন যাপন করতে হচ্ছে।
আফগানিস্তানের সংস্কৃতি অনুযায়ী কোথাও যদি কেবল নারীদের উপস্থিতি থাকে তাহলে সেখানে কোন পুরুষের প্রবেশ নিষেধ। তা সত্ত্বেও তামানাকে ধরে নিয়ে যাওয়ায় নারীরা তাদের নিরাপত্তা নিয়ে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে।
এদিকে, তালেবান ক্ষমতা গ্রহণের পর সকল নারী পুলিশ সদস্যদের চাকরি থেকে অব্যহতি দেয়া হয়েছে। এমনকি নারীদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্যও সেখানে কোন নারী পুলিশ সদস্যকে রাখা হয়নি।
তালেবানের পক্ষ থেকে কাউকে ধরে নিয়ে যাওয়ার কথা অস্বীকার করা হয়েছে বলে জানান বিবিসি।
জাতিসংঘে তালেবানের সম্ভাব্য মুখপাত্র হতে পারেন সুহাইল শাহিন। বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে গত বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, “তালেবান যদি কাউকে ধরে নিয়ে যায়, তাহলে তারা তা স্বীকার করবে। আর এরকম অভিযোগ আসলে তারা আদালতে যাবে এবং নিজেদের পক্ষে কথা বলবে…… এইটা একটি বৈধ পথ। অ্যাসাইলাম পাওয়ার প্রত্যাশায় এসব ভিডিও বানানো হচ্ছে।”
এদিকে পারিয়ানির এক বন্ধু ভিন্ন গল্পের কথা তুলে ধরেছেন।
একটি নিরাপদ জায়গা থেকে সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাকে আমি এখান থেকে পালাতে বলেছিলাম। এখানে থাকা তারা জন্য নিরাপদ নয়।
যখন আমি ঘরে ফিরলাম, তখন বিক্ষোভে যোগ দেওয়া আমার আরেক বন্ধু, তামানাকে তালেবান গ্রেপ্তার করেছে বলে জানায় এবং সে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও আপলোড করেছে বলে দেখায়।”
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তামানা নিখোঁজ রয়েছেন।
বিশ্বের অধিকাংশ দেশই তালেবানকে আফগানিস্তানের বৈধ শাসক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। পশ্চিমা বিশ্বের বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞার ফলে দেশটিতে তীব্র খাদ্য সংকট দেখা দেয়। ফলে দেশটির প্রায় অর্ধেক মানুষ ক্ষুধার্ত অবস্থায় জীবন যাপন করছে বলে বিবিসি তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে।
তালেবানের শাসনে আসা আফগানিস্তানই বিশ্বের একমাত্র দেশ যারা শিক্ষা গ্রহণে লৈঙ্গিক পরিচয়কে প্রাধান্য দিচ্ছে। এটিই তাদের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকার বৈধতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে যথেষ্ট।
ক্ষমতায় আসার পর তালেবান অন্যান্য দেশের স্বীকৃতি পেতে ও তাদের (তালেবানের) বিরুদ্ধে আরোপ করা নিষেধাজ্ঞাগুলো স্থগিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে।
অন্যদিকে, অধিকারের দাবিতে দেশটির নারীরা আন্দোলন চালিয়ে যেতে চেষ্টা করছে। যা তালেবানকে বেশ বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে। তামানা ও তার বন্ধুদেরই শুধু নয়, তালেবান আফগানিস্তানের নারীদেরকে সম্মিলিতভাবে শাস্তির আওতায় আনছে বলে খবর বিবিসির।
গত ২০ বছরে আফগানিস্তানের নারীরা স্বাধীনভাবে বাঁচতে সাংস্কৃতিক এবং পারিবারিক বিভিন্ন কুসংস্কারকে দূরে রাখার চেষ্টা করেছিল। তালেবান পুনরায় ক্ষমতায় ফিরে এসে সেসব অগ্রগতি ধ্বংস করে দিতে চাইছে।