কাজাখস্তানে বিক্ষোভ কমেছে; বাড়ছে সাধারণ মানুষের উপর হয়রানি

কাজাখস্তানে উর্দিপরা সশস্ত্র নিরাপত্তা বাহিনীরা হাসপাতালের ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে আহতদের খোঁজ করছিল। এ সময় তারা ‘চিৎকার করে গণবিক্ষোভে অংশ নেওয়াদের খোঁজ করছিল’ বলে দাবি করেছে ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম বিবিসি।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Jan 2022, 10:46 AM
Updated : 21 Jan 2022, 10:46 AM

আহত এক বিক্ষোভকারী আসেল (কাল্পনিক নাম) সহিংসতায় গুলিবিদ্ধ হয়ে কাজাখস্তানের বৃহত্তম শহর আলমাতির একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় ঘটনাটি ঘটে। এ মাসের শুরুর দিকে কাজাখস্তানে গণবিক্ষোভের ঘটনাকে স্মরণ করে বিবিসিকে এসব কথা বলছিলেন আসেল।

আসেলের ভাষ্যমতে “উর্দিপরাদের একজন চিৎকার করে বলছিল, আবার যদি কেউ বাইরে আন্দোলনে যোগ দিতে যায় তাহলে আমরা তাদেরকে হত্যা করব।”

বন্দুকধারীরা বিশেষ পুলিশ বাহিনী বা নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্য বলে মনে করেছিলেন আসেল। সরকারবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নেওয়াদের হাসপাতাল থেকে আহত অবস্থায় গ্রেপ্তার করছিল তারা।

আসেলকেও গ্রেপ্তার করার চেষ্টা করছিল নিরাপত্তা বাহিনী। কিন্তু গুরুতর আহত হওয়ায় সে হাঁটতেও পারছিল না; তাই তাকে রেখেই চলে যায়।

জানুয়ারি শুরুতে জ্বালানী তেলের মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে যোগ দিয়েছিল আসেল। কাজাখস্তান বিশ্বের কয়েকটি তেল সম্পদশালী দেশের একটি। কিন্তু অধিকাংশ জনসংখ্যা এই সম্পদের অংশীদার হতে পারে না বলে জানিয়েছে বিবিসি।

তাই বিক্ষোভটি জ্বালানী তেলের মূল্যবৃদ্ধি দিয়ে শুর হলেও দ্রুত তা সরকার বিরোধী বিক্ষোভে রূপ নেয়। তাতে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা এবং লুটপাটের মত কার্যক্রম শুরু হয়। স্বাধীনতার ৩০ বছরে এটিকে সবথেকে রক্তক্ষয়ী বিক্ষোভ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

বিক্ষোভ সামাল দিতে কর্তৃপক্ষ অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ করেছে বলে অভিযোগ করেছে অনেকেই। সরকারি হিসেব অনুযায়ী বিক্ষোভে অন্তত ২২৫ জন নিহত হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে। আহতের কোন সংখ্যা না থাকলেও অন্তত ১০ হাজার জনকে আটকের কথাও জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

বিক্ষোভ দমানোর পর এবার বিক্ষোভে অংশ নেওয়াদের নির্যাতন, নিপীড়ন চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন আসেল। এমনকি সরকারবিরোধী বিক্ষোভে জড়িত এরকম অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে বলে উদ্বেগও প্রকাশ করেছেন তিনি।

কাজাখস্তানের প্রসিকিউটর-জেনারেলের কার্যালয় থেকে অন্তত ৭০০টি ফৌজদারি মামলা চালু করা হয়েছে। মামলাগুলোতে সন্ত্রাসবাদ, হত্যা ও সরকার উৎখাতের মত অভিযোগ রয়েছে।

এদিকে মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে,কাজাখ কর্তৃপক্ষ শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীসহ প্রত্যেকের উপর দমন চালানোর পাঁয়তারা করছে।

এমনকি বিক্ষোভকে সমর্থন করে যারা ফেইসবুকে পোস্ট দিয়েছে তাদেরকেও আটক করা হচ্ছে। আটকের পর তাদেরকে মারধর ও নির্যাতনের সম্মুখীন হতে হচ্ছে বলেও দাবি করে সংস্থাগুলো।

আলমাতির একজন মানবাধিকার কর্মী বাখিতঝান তোরেগোঝিনা বলেন, "কাউকেই নির্দোষ বলে মনে করছে না তারা"

“কর্তৃপক্ষের কাছে তারা সকলেই সম্ভাব্য সন্ত্রাসী এবং স্বীকারোক্তিমূলক জবাববন্দি আদায়ে তাদেরকে জোর করা হচ্ছে”।

তবে কর্তৃপক্ষ এসব অভিযোগ সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে।

কোনো আটক ব্যক্তিকে মারধর বা নির্যাতন করা হয়েছে এমন অভিযোগ কর্তৃপক্ষ স্পষ্টভাবে অস্বীকারও করেছে তারা।

আলমাতি পুলিশ বিভাগের সালতানাত আজিরবেক বিবিসিকে বলেন, “যারা সহিংসতায় জড়িত নয় তাদের চিন্তা করার কোন কারণ নেই’।

“সহিংসতায় জড়িত না থাকার প্রমাণ পেলে তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হবে”, যোগ করেন ঐ কর্মকর্তা।

বিবিসি জানায়, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে কাজাখস্তানে ২ জানুয়ারী থেকে শুরু হওয়া বিক্ষোভে পরে রাজনৈতিক নানা অসন্তোষ যোগ হয়ে তা বড় ধরনের দাঙ্গায় রূপ নিয়ে দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে।

‘দস্যু-সন্ত্রাসীরাই’ এই বিক্ষোভ-সংঘর্ষ,অস্থিরতার হোতা বলে অভিযোগ প্রেসিডেন্টের। কাজাখ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় এর আগে জানিয়েছিল, চলমান অস্থিরতায় ২৬ জন ‘সশস্ত্র অপরাধী’ এবং নিরাপত্তা বাহিনীর ১৮ জন সদস্য নিহত হয়েছে।

দেশকে স্থিতিশীল করতে প্রেসিডেন্ট সিএসটিও-র সহায়তা চেয়েছিলেন।সামরিক জোট সিএসটিও-তে রাশিয়া এবং সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত ৫টি দেশ আছে। রাশিয়ার নেতৃত্বাধীন কালেক্টিভ সিকিউরিটি ট্রিটি অর্গানাইজেশনের (সিএসটিও) প্রায় ২,৫০০ সেনা বিক্ষোভ শুরুর কয়েকদিনের মধ্যে কাজাখস্তানে পৌঁছেছেও।

পরবর্তীতে বিক্ষোভ কিছুটা হ্রাস পেতে থাকলে নিরাপত্তা বাহিনী সাধারণ মানুষকে হয়রানি করছে বলে অভিযোগ করছে বিভিন্ন গোষ্ঠী।