কর্মক্ষেত্র থেকে দ্রুত হারিয়ে যাচ্ছে আফগান নারীরা

আফগানিস্তানে তালেবান শাসন ফিরে আসার পর দেশটিতে কর্মক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ দ্রুত কমে যাচ্ছে। নানা বিধিনিষেধে নারীদের অধিকার খর্ব হচ্ছে। সংকুচিত হচ্ছে দেশটির অর্থনীতি।

>>রয়টার্স
Published : 20 Jan 2022, 02:13 PM
Updated : 20 Jan 2022, 02:13 PM

রাজধানী কাবুলে একটি ছোট পোশাক কারখানার মালিক ২৯ বছরের সোহাইলা নূরি। তার কারখানায় স্কার্ফ, বড় ও ছোটদের নানা ধরনের পোশাক তৈরি করা হয়।

সেখানে এখন প্রায় ৩০ জন নারী কর্মী কাজ করেন। গত বছর অগাস্টে তালেবান ক্ষমতায় আসার পর সোহাইলা দেখতে পান, তার কারখানায় নারীকর্মীর সংখ্যা দ্রুত কমে যাচ্ছে। কারণ, তালেবানের ভয়ে তারা কাজে আসা বন্ধ করে দিচ্ছেন।

তালেবান ক্ষমতায় আসার আগে সোহাইলার তিনটি আলাদা আলাদা কারখায় ৮০ জনের বেশি কর্মী ছিল, যাদের মধ্যে বেশিরভাগই ছিলেন নারী।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে তিনি বলেন, ‘‘আগে আমাদের হাতে অনেক কাজ ছিল। আমরা নানা ধরনের কাজের অর্ডার পেতাম। হাতে অর্থ থাকত। সহজেই প্রধান দর্জি এবং অন্যান্য কর্মীদের বেতন দিতে পারতাম। কিন্তু এখন আমাদের হাতে কোনও অর্ডার নেই।”

যে করে হোক নিজের ব্যবসা চালিয়ে নিতে বদ্ধপরিকর সোহাইলা। যাতে তিনি অন্যদের বিশেষ করে নারীদের কর্মসংস্থান করতে পারেন।

গত বছর অগাস্টে আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করে তালেবান। যার জেরে দেশটির জন্য বরাদ্দ কোটি কোটি ডলারের বিদেশি সাহায্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। জনগণের হাতে মৌলিক প্রয়োজন মেটানোর মত অর্থও নেই। সোহাইলার মতো ছোট উদ্যোক্তাদের টিকে থাকতে রীতিমত লড়াই করতে হচ্ছে।

তালেবান ক্ষমতায় আসার পর বলেছে, শরিয়া আইনে নারীদের যতটুকু কাজ করতে দেওয়ার কথা বলা আছে, তারা কেবল মাত্র ততটুকু কাজের অনুমতি দেবে।

আগেরবার ক্ষমতায় থাকার সময় তালেবান নারীদের উপর খুবই কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল। যা না মানলে কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা ছিল। তালেবান আবার ক্ষমতায় আসার পর অনেক নারী শাস্তির ভয়ে নিজেদের ঘরবন্দি করে ফেলেছেন, বাইরে কাজে বের হচ্ছেন না।

তালেবান ক্ষমতায় আসার পর অর্থনীতি সংকোচনের ধাক্কা পুরো আফগানিস্তান জুড়ে লেগেছে। বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার পূর্বানুমান, আগামী কয়েক মাসে দেশটির প্রায় সব নাগরিক দারিদ্র সীমার নিচে চলে যাবে। যার জন্য সবচেয়ে বেশি ভুগতে হবে দেশটির নারীদের।

ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশনের (আইএলও) আফগানিস্তান বিষয়ক জ্যেষ্ঠ সমন্বয়ক রামিন বেহজাদ বলেন, ‘‘আফগানিস্তানে যে সংকট চলছে তাতে কর্মক্ষেত্রে নানা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়া দেশটির নারীদের অবস্থা এরই মধ্যে আরও খারাপ হয়ে গেছে।”

“নারীদের জন্য নতুন করে যেসব বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তাতে যেসব ক্ষেত্রে আঘাত লাগছে তার অন্যতম হচ্ছে কর্মক্ষেত্র। কিছু কিছু অর্থনৈতিক এলাকায় সেই আঘাত বাড়ি বাড়িও লাগছে।”

বুধবার প্রকাশিত আইএলও-র প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২১ সালের তৃতীয় ত্রৈমাসিকে আফগানিস্তানে নারীদের কর্মক্ষেত্রে অংশগ্রহণ ১৬ শতাংশ কমে গেছে। পুরুষদের বেলায় যেটা ৬ শতাংশ। বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে ২০২২ সালের মাঝামাঝিতে নারীদের অংশগ্রহণ ২১ শতাংশ কমে যাবে।

সোহাইলার কারখানায় এখনও যারা কাজ করছেন, তাদের কাছে সামান্য অর্থ উপার্জনের তাগিদ অন্যান্য উদ্বেগকে ছাপিয়ে গেছে। তাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হলেও তারা কাজ করে যাচ্ছেন।

লাইলুমা ‍নামে এক নারীকর্মী বলেন, ‘‘আমাদের বেশিরভাগের পরিবার আমাদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগে থাকে। আমরা সময়মত বাড়িতে না পৌঁছালে তারা ক্রমাগত ফোন দিতে থাকে। কিন্তু এরপরও আমরা সবাই কাজ করতে চাই....কারণ, আমাদের আর্থিক সংকট রয়েছে।”

আরেক কর্মী সালেহার পরিবারে সেই একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তিনি বলেন, ‘‘আমার মাসিক আয় এক হাজার আফগানি। আমার পরিবারে আমিই একমাত্র উপার্জন করি। দুর্ভাগ্যজনকভাবে তালেবান ক্ষমতায় আসার পর বলতে গেলে আমাদের কোনও আয় নেই।”