ক্ষয়ক্ষতি পর্যালোচনার জন্য সোমবার অস্ট্রেলিয়া ও নিউ জিল্যান্ড সেখানে পর্যবেক্ষণকারী বিমান পাঠিয়েছে বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ার প্রশান্ত মহাসাগর বিষয়ক মন্ত্রী জেড সেসেলা জানিয়েছেন, শনিবারের উদ্গিরণ ও সুনামিতে টোঙ্গায় ব্যাপক কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি বলে প্রাথমিক প্রতিবেদনগুলো থেকে ধারণা পাওয়া গেছে কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার পুলিশ সৈকতগুলো পরিদর্শন করে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার কথা জানিয়েছে।
অস্ট্রেলীয় রেডিও স্টেশনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “সেখানে উল্লেখযোগ্য কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি।”
তবে টোঙ্গা বিমানবন্দর তুলনামূলকভাবে ভালো অবস্থায় আছে, এমনটি মনে হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
তিনি জানান, টোঙ্গায় একজন ব্রিটিশ নারী নিখোঁজ হয়েছেন বলে জানা গেছে।
অস্ট্রেলিয়ায় টোঙ্গার মিশনের ডেপুটি প্রধান কার্টিস টুইহালানগিনগি জানিয়েছেন, পর্যবেক্ষণকারী বিমানগুলো সোমবার সন্ধ্যার মধ্যে ফিরে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। টোঙ্গা সরকার ত্রাণকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জানিয়ে তিনি সবাইকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়েছেন।
ত্রাণ সরবরাহ কার্যক্রমের মাধ্যমে কোভিড-১৯ মুক্ত দ্বীপটিতে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে, এমন আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন হয়ে আছে টোঙ্গা।
টুইহালানগিনগি টেলিফোনে রয়টার্সকে বলেন, “আমরা কোভিড-১৯ এর সুনামির মতো আরেকটা ঢেউ বয়ে আনতে চাই না।
“লোকজন যখন এ ধরনের বিশাল বিস্ফোরণ দেখে তারা সাহায্য করতে চায়,” বলেন তিনি।
বেসরকারিভাবে তহবিল সংগ্রহের উদ্যোগগুলো নিয়ে টোঙ্গার কূটনীতিকরা উদ্বিগ্ন, তাই একটি দুর্যোগ ত্রাণ তহবিলের ঘোষণা না আসা পর্যন্ত জনগণকে অপেক্ষা করার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
টোঙ্গায় পাঠানো সব ত্রাণ কোয়ারেন্টিন করতে হবে এবং কোনো বিদেশি কর্মীকে সম্ভবত বিমান থেকে নামার অনুমিত দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন তিনি।
হুঙ্গা-টোঙ্গা-হুঙ্গা হা’আপাই আগ্নেয়গিরিতে অগ্ন্যুৎপাতের পর সৃষ্ট সুনামি টোঙ্গার উপকূলগুলোতে আঘাত হানে এবং পুরো দ্বীপটির ফোন ও ইন্টারনেট লাইন বিচ্ছিন্ন করে দেয়।
সাগরতলের ক্যাবল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় আন্তর্জাতিক যোগাযোগ মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। এই ক্যাবল ঠিক করতে এক সপ্তাহেরও বেশি সময় লেগে যাবে বলে জানিয়েছেন তিনি। সবচেয়ে জরুরিভিত্তিতে কোন সহায়তা দরকার, তা ঠিক করতে বৈঠক করছে টোঙ্গার মন্ত্রিসভা।
টোঙ্গার টেলিফোন নেটওয়ার্ক ফের চালু হলেও ছাই বড় ধরনের স্বাস্থ্য উদ্বেগ হিসেবে দেখা দিয়েছে, এর কারণে পানিও দুষিত হয়ে পড়ছে।
টুইহালানগিনগি বলেন, “ছাই যে বিষাক্ত আর এর মধ্যে নিঃশ্বাস নেওয়া যে ক্ষতিকর এবং তাদের যে মাস্ক পরা উচিত, অধিকাংশ মানুষই তা নিয়ে সচেতন না।”
রাজধানী নুকু’য়ালোফা থেকে ২১ কিলোমিটার পশ্চিমে হিহিফো উপদ্বীপের হা’তাফু বিচ রিজোর্ট ‘পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে’ বলে মালিকরা ফেইসবুকে জানিয়েছেন।
রিজোর্টটির ব্যবস্থাপনায় থাকা পরিবারটি সুনামির হাত থেকে তাদের জীবন বাঁচাতে জঙ্গলে গিয়ে আশ্রয় নেন বলে জানান তারা।
তারা বলেছেন, “কানুকুপোলু গ্রামসহ পুরো পশ্চিম উপকূল বরাবর সবকিছু ধ্বংস হয়ে গেছে।”
ব্রিটিশ নারী অ্যাঞ্জেলা গ্লভার সুনামির একটি ঢেউয়ের তোড়ে ভেসে যান। তার স্বামী জেমস গ্লভার একটি গাছ ধরে কোনরকমে রক্ষা পেলেও তার স্ত্রী তাদের পোষা কুকুরগুলোসহ ভেসে যান।
কয়েক দশকের মধ্যে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বাসিন্দাদের অভিজ্ঞতায় এবারের অগ্ন্যুৎপাতের ঘটনাটি সবচেয়ে মারাত্মক ছিল বলে রেডক্রস জানিয়েছে। সৃষ্ট পরিস্থিতিতে সাড়া দেওয়ার জন্য তাদের আঞ্চলিক নেটওয়ার্ককে সচল করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে তারা।
রেডক্রস ও রেডক্রিসেন্টের প্রশান্ত অঞ্চলের প্রধান কেটি গ্রিনউড রয়টার্সকে জানান, সুনামিতে ৮০ হাজারের মতো মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
হুঙ্গা-টোঙ্গা-হুঙ্গা হা’আপাই আগ্নেয়গিরির শনিবারের উদ্গিরণের প্রভাব ফিজি, নিউ জিল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানেও অনুভুত হয়েছে। সুনামির কারণে সৃষ্ট উঁচু ঢেউয়ে পেরুর উত্তরাঞ্চলের উপকূলীয় সাগর তটে দুই ব্যক্তি ডুবে গেছেন।