ডোকলামের কাছে নির্মাণকাজ জোরদার করছে চীন, বলছে উপগ্রহের ছবি

ভুটান ও চীন উভয় দেশই দাবিদার এমন একটি এলাকায় চীন তাদের বসতি নির্মাণ কাজের গতি বাড়িয়েছে; নির্মাণাধীন ৬টি স্থানে দোতলা ভবনসহ দুইশর বেশি স্থাপনা নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Jan 2022, 12:12 PM
Updated : 13 Jan 2022, 12:12 PM

এ স্থানগুলো বিরোধপূর্ণ ডোকলামের খুব কাছেই।

উপগ্রহের ছবি বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

যুক্তরাষ্ট্রের ডেটা অ্যানালিটিকস ফার্ম হকআই ৩৬০ রয়টার্সকে এ সংক্রান্ত উপগ্রহের ছবি ও বিশ্লেষণ সরবরাহ করেছে। দুই বিশেষজ্ঞ তাদের ওই ছবি ও বিশ্লেষণ যাচাইও করে দেখেছেন।

হকআইয়ের মিশন অ্যাপ্লিকেশনস ডিরেক্টর ক্রিস বিগার্স জানিয়েছেন, উপগ্রহ ব্যবহার করে ছবি তোলা কাপেলা স্পেস ও প্ল্যানেট ল্যাবের সরবরাহকৃত তথ্যউপাত্ত অনুযায়ী ২০২০ সালের শুরু থেকেই ভুটানের পশ্চিম সীমান্তঘেঁষা কয়েকটি জায়গায় চীনের নির্মাণ সংক্রান্ত কর্মকাণ্ড শুরু হয়। প্রথমদিকে তারা রাস্তা বানায় ও জায়গাগুলো পরিষ্কার করে।

২০২১ সালে এসে ওই কাজের গতি বেড়ে যায়। ভিত্তি স্থাপনের পর ছোট ছোট কিছু কাঠামো খাড়া হয়, এরপর ভবনের নির্মাণ কাজ আরম্ভ হয়, বলেন বিগারস।

“আমার কাছে, ২০২১ ছিল (তাদের) গতি বাড়ানোর সময়,” বলেছেন তিনি।

যে জায়গাগুলোতে নতুন এ নির্মাণকাজ চলছে, সে জায়গাগুলো নিয়ে গবেষণা করা দুই বিশেষজ্ঞ এবং কাপেলা স্পেসের ধারণ করা উপগ্রহের ছবি বলছে, ছয়টি বসতিই এমন এলাকায় হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে, যে এলাকা ঘিরে চীন ও ভুটানের মধ্যে বিরোধ বিদ্যমান।

“সীমান্ত সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে জনসমক্ষে কথা না বলাই ভুটানের নীতি,” রয়টার্সের করা প্রশ্নের জবাবে এমনটাই বলেছে ভুটানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে আর বিস্তারিত কিছু বলতে রাজিও হয়নি তারা। 

দুই বিশেষজ্ঞ এবং ভারতের প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত একটি সূত্র বলছে, চীনের নির্মাণকাজের গতি বলছে, নিজেদের উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে সুনির্দিষ্ট রূপ দিয়ে বেইজিং তাদের সীমান্ত সংক্রান্ত দাবি মেটাতে তৎপর। 

ছবি রয়টার্সের

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তাদের এ নির্মাণকাজ স্থানীয় জনসাধারণের কাজ ও জীবনযাত্রার অবস্থার উন্নতির জন্য।  

“নিজেদের ভূখণ্ডে সাধারণ নির্মাণকাজ চালানো চীনের সার্বভৌমত্বের মধ্যেই পড়ে,” বলেছে মন্ত্রণালয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যে গ্রামগুলো নির্মিত হচ্ছে, তা বেইজিংকে কৌশলগত সুবিধা দেবে।

যেসব স্থানে নির্মাণকাজ চলছে, সেগুলোর দূরত্ব ডোকলাম থেকে ৯ থেকে ২৭ কিলোমিটার। ২০১৭ সালে এই ডোকলামেই চীন ও ভারতের সেনারা দুই মাস মুখোমুখি অবস্থানে ছিল।

নির্মাণাধীন এই বসতিগুলো চীনকে দূরবর্তী অনেক এলাকার ওপর নজর ও নিয়ন্ত্রণ এবং নিরাপত্তা সংক্রান্ত কাঠামো প্রতিষ্ঠায় সুবিধা করে দেবে বলে ধারণা এক বিশেষজ্ঞ ও ভারতের প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত ওই সূত্রের।

এ বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মন্তব্য চাওয়া হলেও তাদের দিক থেকে সাড়া পাওয়া যায়নি।

৮ লাখেরও কম জনসংখ্যার ভুটার প্রায় ৪ দশক ধরে চীনের সঙ্গে ৪৭৭ কিলোমিটার সীমান্ত নিয়ে সমঝোতায় পৌঁছাতে দরকষাকষি করে যাচ্ছে। এই সীমান্ত সংকটের সমাধান কেবল ভুটানের ভৌগোলিক অখণ্ডতার জন্যেই গুরুত্বপূর্ণ নয়, ভারতের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।

ভারত ভুটানের প্রধান মিত্র ও অর্থনৈতিক অংশীদার।

ভুটানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০২১ সালের এপ্রিলে দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত নিয়ে হওয়া সর্বশেষ আলোচনায় ভুটান ও চীন বিরোধ মেটানোর প্রক্রিয়ার গতি বাড়াতে সম্মত হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে আর বিস্তারিত কিছু বলতে রাজি হয়নি তারা।