ডাউনিং স্ট্রিটের বাগানে লকডাউনের পান পর্বে ‘আমন্ত্রিত ছিলেন ১০০ জন’

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে গতবছর লকডাউনের সময় এক পার্টির আয়োজন হয়েছিল ডাউনিং স্ট্রিটের বাগানে, যেখানে শখানেক অতিথিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল বলে তথ্য আসছে এখন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Jan 2022, 06:51 AM
Updated : 11 Jan 2022, 07:53 AM

মঙ্গলবার বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, যুক্তরাজ্যে প্রথম লকডাউনের মধ্যে গত বছর ২০ মে ওই পার্টিতে অতিথিদের নিজ নিজ পানীয় সঙ্গে করে নিয়ে আসতে বলা হয়েছিল।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন সস্ত্রীক ওই পার্টিতে উপস্থিত ছিলেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা বিবিসিকে জানিয়েছেন। অবশ্য বরিস জনসন এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

লন্ডন মহানগর পুলিশ বলেছে, ওই ঘটনায় কোভিড বিধি ভঙ্গের অভিযোগ নিয়ে গণমাধ্যমে খবর আসার প্রেক্ষাপটে তারা সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।

যুক্তরাজ্যের আইটিভি নিউজ একটি ইমেইল প্রকাশ করেছে, যেখানে অতিথিদের ‘সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে’ সেই সন্ধ্যায় ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটের বাগানে পান পর্বে অংশ নেওয়ার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

বিবিসি লিখেছে, লন্ডনে লকডাউনের কঠোর বিধিনিষেধ জারি থাকা অবস্থায় পার্টিতে আমন্ত্রণের ওই ইমেইল পাঠানো হয়। ১২ দিন পর ১ জুন ইংল্যান্ডে যখন বিধিনিষেধ কিছুটা শিথিল করা হল, তখনও ঘরের বাইরে একসঙ্গে সর্বোচ্চ ছয়জনের জমায়েতের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।

ইংল্যান্ডের প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টি বলছে, সেদিনের পার্টিতে বরিস জনসনের উপস্থিতি প্রমাণিত হলে তা প্রধানমন্ত্রীকে দারুণভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করবে।

তবে ডাউনিং স্ট্রিট এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে বলা হয়েছে, ২০২০ সালে বিধিনিষেধের মধ্যে অনুষ্ঠিত অন্যান্য জমায়েতের মত ২০ মের ওই পার্টিও নিরপেক্ষ তদন্ত প্রক্রিয়ার আওতায় থাকবে।

ইংল্যান্ডের আরেকটি রাজনৈতিক দল লিবারেল ডেমোক্রেট পার্টি এ বিষয়ে পুলিশি তদন্তের দাবি তুলেছে।

মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র জানিয়েছেন, গত বছর ২০ মে ডাউনিং স্ট্রিটে স্বাস্থ্যবিধি ভঙ্গের অভিযোগ নিয়ে যেসব খবর গণমাধ্যমে এসেছে, সে বিষয়ে তারা অবগত এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সঙ্গে তারা যোগাযোগ রাখছেন।

 

প্রধানমন্ত্রীর সাবেক উপদেষ্টা ডমিনিক কামিংসের একটি ব্লগে গত সপ্তাহে প্রথম সেই পানের পার্টির বিষয়টি প্রকাশ পায়।

এরপর আইটিভি নিউজ ওই ইমেইলটি প্রকাশ করে, যা পার্টির আমন্ত্রণ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী জনসনের মুখ্য ব্যক্তিগত সহকারী মার্টিন রেনল্ডের পক্ষ থেকে পাঠানো হয়েছিল।

ইমেইলের বিষয়বস্তুর ঘরে লেখা ছিলো ‘সামাজিক দূরত্ব মেনে পান পর্ব! [দাপ্তরিক-স্পর্শকাতর- শুধু নম্বর ১০ এর জন্য]”।

ইমেইলে বলা হয়, “অত্যন্ত ব্যস্ত একটি সময় পার করার পর আমরা ভাবছি, আজ সন্ধ্যায় ১০ নম্বরের বাগানে সামাজিক দূরত্ব মেনে খানিকটা পানের মধ্য দিয়ে চমৎকার এই আবহাওয়া উপভোগ করতে পারলে দারুণ হয়। সন্ধ্যা ৬টায় আমাদের সঙ্গে যোগ দিন, অনুগ্রহ করে নিজের পানীয় সঙ্গেই আনবেন।”

ওই পার্টির দিনই, ইংল্যান্ডের তৎকালীন সাংস্কৃতিক মন্ত্রী অলিভার ডডেন ডাউনিং স্ট্রিট থেকে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে ব্রিফ করেন। সেখানে তিনি ২৪ ঘণ্টায় যুক্তরাজ্যে কোভিডে আরও ৩৬৩ জনের মৃত্যুর খবর দেন।

ওই ব্রিফিংয়ে জনগণের উদ্দেশে তিনি বলেন, বাড়ির বাইরে জনসমাগম স্থানে কারও সঙ্গে দেখা করতে হলে দুজনের মধ্যে অন্তত দুই মিটার দূরত্ব রাখতে হবে।

দুইজন প্রত্যক্ষদর্শী বিবিসিকে বলেছেন, ডাউনিং স্ট্রিটের বাগানে সেদিনের পার্টিতে তারা প্রধানমন্ত্রী জনসন ও তার স্ত্রী ক্যারিকে দেখেছেন।

অন্য সূত্রের বরাত দিয়ে বিবিসি লিখেছে, ডাউনিং স্ট্রিটের একধিক সদস্য ওই পান পর্বের আয়োজন নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছিলেন। তাদের একজন ইমেইলের ভাষা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। আরেকজন বলেছেন, “আমার মনে আছে, লোকজন বলাবলি করছিল, ‘কী হচ্ছে এসব?’”

 

ওই পান পর্বের জন্য বাগানে একটি বড় টেবিল বসানো হয়েছিল। সে সময়ে ডাউনিং স্ট্রিটের এক কর্মীকে আরেক কর্মীর পাঠানো একটি বার্তা দেখার সুযোগ পাওয়ার কথা জানিয়েছে বিবিসি।

সেখানে বলা হয়েছে, “মার্টিন (রেনলডস) কেন বাগানে এমন জমায়েতে উৎসাহ দিচ্ছে?” আরেকজন জানতে চেয়েছেন, “আসলেই এটা হচ্ছে?”

ওই দিন এক টুইটে লন্ডন মেট্রেপলিটন পুলিশ জনগণকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছিল, ঘরের বাইরে কেবল পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেই অবসর কাটানো বা শরীরচর্চা করা যাবে। অন্য বাড়ির কেবল একজন তাদের সঙ্গে সময় কাটাতে পারবে। সেদিন লন্ডনে তাপমাত্রা ছিলো ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

কোভিড-১৯ ব্রেভড ফ্যামিলিস ফর জাস্টিস গ্রুপের মুখপাত্র হানাহ ব্র্যাডি বলেন, ডাউনিং স্ট্রিট থেকে ওই মেইল পাঠানোর চার দিন আগে তার বাবা মারা যান।

“এরকম পরিস্থিতে সবারই বোঝা উচিত যে এরকম ফুর্তির অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া ঠিক না। যারা এই দেশটা চালাচ্ছেন, তারা কীভাবে ভাবতে পারলেন যে এটা করা ঠিক হচ্ছে?”

 

আলাদা একটি ঘটনায় গত মাসে যুক্তরাজ্যের গার্ডিয়ান একটি ছবি প্রকাশ করে, যেটা ২০২০ সালের ১৫ মে, অর্থাৎ সেই পার্টির ঠিক পাঁচ দিন আগে তোলা। সেখানে দেখা যায় প্রধানমন্ত্রী জনসন, তার স্ত্রী এবং ১৭ জন কর্মকর্তা ডাউনিং স্ট্রিটের বাগানে উপস্থিত।

জনসন দাবি করেছেন, ১৫ মের বিষয়টি কোনো অনুষ্ঠান ছিল না। যারা উপস্থিত ছিলেন, তারা সবাই “কাজের জন্য গিয়েছিলেন, কাজ নিয়েই আলোচনা হচ্ছিল।”

২০২০ সালে করোনাভাইরাসের বিধিনিষেধের মধ্যে সরকারি ভবনগুলোতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বিধিভঙ্গের যেসব অভিযোগ উঠেছে, সেগুলো তদন্তের জন্য গত ডিসেম্বরে যুক্তরাজ্যের কেবিনেট সেক্রেটারি সিমন কেইসকে দায়িত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী জনসন।

তার নিজের কার্যালয়েই ওই ধরনের একটি আয়োজন হয়েছিল- এমন ইঙ্গিত মেলার পর সিমন কেইস তদন্ত থেকে সরে দাঁড়ান এবং আরেক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা সু গ্রেকে তদন্তের দায়িত্ব হস্তান্তর করা হয়।

পশ্চিম লন্ডনে একটি টিকা কেন্দ্র পরিদর্শনের সময় গত ২০ মে প্রশ্ন করা হলে জনসন বলেন, “আপনারা যেমনটি জানেন, এর সব কিছুই এখন সু গ্রের অধীনে চলমান যথাযথ তদন্ত প্রক্রিয়ার একটি অংশ।”

তবে লেবার পার্টির উপ নেতা অ্যানজেলা রাইনার বলেছেন, “যে নিয়মগুলো বরিস জনসন আমাদের ওপর চাপাচ্ছেন, সেগুলো মেনে চলার বিষয়ে তার নিজের কোনো চেষ্টা নেই, সেটাই তিনি ধারাবাহিকভাবে দেখিয়ে আসছেন।”

কনজারভেটিভ পার্টির এমপি ফিলিপ ডিউন বিবিসিকে বলেন, যে সু গ্রেকে প্রকাশ করতে হবে আসলে কী ঘটেছিল। যদি কোনো বিধিভঙ্গ হয়ে থাকে, তাহলে জড়িতদের অবশ্যই এর খেসারত দিতে হবে।