রাশিয়ার সাহায্য চাওয়ার পর কাজাখস্তানে ফের সংঘর্ষ

সরকারবিরোধী বিক্ষোভে পর্যদুস্ত কাজাখস্তানের ‘স্থিতিশীলতা’ নিশ্চিতে সহায়তা করতে দেশটিতে রাশিয়া নেতৃত্বাধীন সামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হচ্ছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Jan 2022, 08:01 AM
Updated : 6 Jan 2022, 09:42 AM

দেশজুড়ে বিক্ষোভের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ার পর কাজাখ প্রেসিডেন্ট কাসেম জোমার্ট তোকায়েভ কালেকটিভ সিকিউরিটি ট্রিটি অর্গানাইজেশনের (সিএসটিও) সাহায্য চাওয়ার পর রুশ নেতৃত্বাধীন বাহিনী মোতায়েনের এ সিদ্ধান্ত হয় বলে জানিয়েছে বিবিসি।

রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বৃহস্পতিবার সকালে কাজাখস্তানের সবচেয়ে বড় শহর আলমাতিতে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের কথাও জানানো হয়েছে।

পুলিশ বলছে, তাদের দপ্তরে হানা দেওয়ার চেষ্টা করা বেশ কয়েকজন দাঙ্গাকারীকে ‘নির্মূল’ করা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বৃহস্পতিবার সকালে নিরাপত্তা বাহিনীর কয়েক ডজন সদস্য ও বেশ কয়েকটি সাঁজোয়া যান আলমাতির প্রধান চত্বরে প্রবেশ করে, ওই চত্বরে তখন তৃতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ করছিলেন সরকারবিরোধী কয়েকশ মানুষ।

নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা বিক্ষোভকারীদের দিকে অগ্রসর হওয়ার সময় গুলির শব্দ শোনা যায়; তবে এরপর থেকে ওই এলাকার পরিস্থিতি শান্ত আছে।  

দেশটিতে প্রথম দিকে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে বিক্ষোভ শুরু হলেও পরে রাজনৈতিক নানান অসন্তোষও তাতে যুক্ত হয়।

প্রেসিডেন্ট তোকায়েভ এই বিক্ষোভ ও অস্থিরতাকে বিদেশে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ‘সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর’ কাজ বলে অ্যাখ্যা দিয়েছেন।  

তিনি দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করেছেন, যার ভেতর রাত্রিকালীন কারফিউর পাশাপাশি আছে গণজমায়েতে নিষেধাজ্ঞাও।

বৃহস্পতিবার ভোরের আগে টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভাষণে তোকায়েভ জানান, তিনি দেশকে স্থিতিশীল করতে সিএসটিও-র সহায়তা চেয়েছেন।

সামরিক জোট সিএসটিও-তে রাশিয়া এবং সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত ৫টি দেশ আছে।

বুধবার রাতের দিকেই সিএসটিও-র চেয়ারম্যান আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশেনিয়ান ফেইসবুকে দেওয়া এক পোস্টে কাজাখস্তানে ‘সীমিত সময়ের জন্য’ শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা কাজাখস্তানের পরিস্থিতি ‘নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ’ করছে। মধ্য এশিয়ার দেশটির কর্তৃপক্ষ ও বিক্ষোভকারীদর সংযত হওয়ার আহ্বান এসেছে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্রের কাছ থেকে।

১৯৯১ সালে স্বাধীনতা পাওয়ার পর কাজাখস্তানকে নেতৃত্ব দেওয়া দ্বিতীয় ব্যক্তি তোকায়েভ। ২০১৯ সালে যে নির্বাচনের মাধ্যমে তিনি প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন, তা গণতান্ত্রিক মানদণ্ডের তোয়াক্কা করেনি বলে অভিযোগ রয়েছে অর্গানাইজেশন ফর সিকিউরিটি অ্যান্ড কো-অপারেশন ইন ইউরোপের (ওএসসিই)।

তবে এখন দেশটির বিভিন্ন সড়কে যে ক্ষোভ-বিক্ষোভ দেখা যাচ্ছে, তার মূল ‘টার্গেট’ হচ্ছেন তোকায়েভের পূর্বসূরী নুরসুলতান নারাবায়েভ। প্রেসিডেন্ট পদ ছাড়ার পর তিনি কাজাখস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন; চলমান অসন্তোষ-অস্থিরতা নিরসনে বুধবার তাকে ওই দায়িত্ব থেকে বরথাস্ত করা হয়।

বিক্ষোভকারীদেরকে নাজারবায়েভের নাম ধরে স্লোগান দিতে শোনা গেছে, অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে কিছু লোককে সাবেক এ প্রেসিডেন্টের একটি ব্রোঞ্জের মূর্তি উপড়ে ফেলার চেষ্টা করতেও দেখা গেছে। মূর্তিটি এতদিন নাজারবায়েভের বাড়ির এলাকা তালদিকোরগানে দাঁড়িয়ে ছিল বলে জানাচ্ছে বিবিসি মনিটরিং।  

সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের তাড়া খেয়ে কাজাখস্তানের প্রধান বিমানবন্দরের কর্মীদের পালিয়ে যাওয়ার খবরও শোনা গেছে; বিক্ষোভকারীরা দেশটির বিভিন্ন সরকারি ভবনেও হামলা চালিয়েছে।

তারা আলমাতির মেয়রের কার্যালয়ে জড়ো হয় এবং সেখানেও তাণ্ডব চালায়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে ভবনটি থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখা গেছে, শোনা গেলে গুলির শব্দও।

শহরের পুলিশপ্রধান কানাত তাইমেরদেনভ বলেছেন, ‘চরমপন্থি ও র‌্যাডিকালরা’ ৫০০ বেসামরিক নাগরিকের ওপর হামলা ও কয়েকশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লুটতরাজ চালিয়েছে।

পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর আকতোবে বিক্ষোভকারীদের ওপর জলকামান ব্যবহৃত হয়েছে। কিছু কিছু এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনীও বিক্ষোভকারীদের পক্ষ নিয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

তবে মধ্য এশিয়ার দেশটিতে আসলেই কী ঘটছে, তার পরিষ্কার চিত্র পাওয়া মুশকিল বলে জানিয়েছে বিবিসি।

কাজাখস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সহিংসতায় আহত নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের সংখ্যা জানালেও ‘দেশজুড়ে ইন্টারনেট বন্ধ থাকায়’ বিক্ষোভকারীদের মধ্যে হতাহতের সংখ্যা জানাতে পারেনি পর্যবেক্ষক গোষ্ঠীগুলো।

বিক্ষোভ দমনে নিরাপত্তা বাহিনীর তৎপরতা ছাড়াও প্রশাসনের পক্ষ থেকে অন্যান্য পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছে। দেশটিতে তরলীকৃত পেট্রলিয়াম গ্যাসের সর্বোচ্চ মূল্য নির্ধারিত ছিল, তা তুলে নেওয়ার পরপরই রোববার থেকে বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ শুরু হয়। প্রশাসন পরে গ্যাসের মূল্য আগের অবস্থানেই নিয়ে যায়।

নাজারবায়েভকে সরিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী নেতৃত্বাধীন দেশটির পুরো সরকারও পদত্যাগ করেছে।