ওমিক্রনে হাসপাতালে ভর্তি বাড়লেও শিশুদের জন্য ‘বাড়তি ঝুঁকি নেই’

ওমিক্রন আক্রান্ত হয়ে শিশুদের হাসপাতালে ভর্তির হার নিয়ে উদ্বেগ থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকরা বলেছেন, করোনাভাইরাসের নতুন এই ধরনকে কম বয়সীদের ক্ষেত্রে এখনও ‘গুরুতর হুমকি হয়ে উঠতে দেখা যায়নি’।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Dec 2021, 08:15 AM
Updated : 29 Dec 2021, 08:15 AM

বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের আগের ধরন ডেল্টার চেয়ে ওমিক্রনে আক্রান্ত শিশুরা কম অসুস্থ হচ্ছে। এর আগে বয়স্কদের ক্ষেত্রেও এমনটা দেখা গেছে।

যুক্তরাষ্ট্রে প্রাপ্ত বয়স্কদের তুলনায় ওমিক্রন আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা দ্বিগুণের বেশি হয়ে উঠেছে। ডিসেম্বরে বেশ কিছু রাজ্যে কোভিড- ১৯ আক্রান্ত হয়ে শিশুদের হাসপাতালে ভর্তির হার প্রায় ৫০ শতাংশ বেড়েছে।

গত সপ্তাহে নিউ ইয়র্ক সিটিতে কোভিডে আক্রান্ত ৬৮ শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, যা আগের দুই সপ্তাহের চেয়ে চারগুণ বেশি।

চিলড্রেনস হসপিটাল অব ফিলাডেলফিয়ার গবেষক ড. ডেভিড রুবিন বলেন, “আমার মনে হয় গুরুত্ব দিয়ে যে কথাটা বলতে হবে, তা হচ্ছে- অবস্থা সঙ্কটাপন্ন হয়ে ওঠার ঘটনা কম এবং গুরুতর অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকিও কম দেখা যাচ্ছে।”

নিউ ইয়র্ক টাইমস লিখেছে, কোভিড আক্রান্ত শিশুদের হাসপাতালে ভর্তির উর্ধ্বগতির জন্য ডেল্টা ও ওমিক্রনের বিস্তারের পাশাপাশি ৫ বছরের বেশি বয়সীদের টিকা দেওয়ার হার কম থাকার বিষয়টিকে সামনে আনছেন বিশেষজ্ঞরা।

এখন পর্যন্ত কম বয়সী শিশুদের করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়ার যোগ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়নি। কেবলমাত্র ১৬ বছর এবং তার বেশি বয়সীদের টিকার বুস্টার ডোজ বা তৃতীয় ডোজ দেওয়া হচ্ছে।  

বয়স্কদের তুলনায় মোটাদাগে কম সুরক্ষিত থাকার কারণেই শিশুরা বেশি সংক্রমিত হচ্ছে বলে চিকিৎসকরা মনে করছেন।

‘আমেরিকান অ্যাকাডেমি অব পেডিয়াট্রিকস’ এর তথ্য অনুযায়ী, গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রে এক লাখ ৯৯ হাজার শিশুর কোভিড শনাক্ত হয়েছে, আগের মাসের শুরুর তুলনায় যা ৫০ শতাংশ বেশি।

অ্যাকাডেমির তথ্য অনুযায়ী, মহামারী শুরুর পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ১০ শিশুর মধ্যে গড়ে একটি শিশুর করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষার ফল পজেটিভ এসেছে। 

নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, বয়স্কদের তুলনায় সংক্রমিত শিশুদের গুরুতর অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি ‘অনেক কম’ দেখা যাচ্ছে এখন পর্যন্ত। তবে গত সপ্তাহে পুরো যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে গড়ে প্রতিদিন ১২০০ শিশু করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।

‘ডিপার্টমেন্ট অব হেলথ অ্যান্ড হিউম্যান সার্ভিসেস’ এর তথ্য অনুযায়ী গত নভেম্বরে এই সংখ্যা ছিল ৮০০। হাসপাতালে আসা এসব শিশুর বেশ কয়েকজন অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়েও এসেছে।

কোভিড আক্রান্ত শিশুদের হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার পেছনে করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন কতটা দায়ী তা এখনও স্পষ্ট নয়। ‘সেন্টারস ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন’ মঙ্গলবার যে তথ্য দিয়েছে, তাতে কোভিড শনাক্তদের মধ্যে ওমিক্রন আক্রান্তের হার দুই সপ্তাহ আগের ৭৩ শতাংশ থেকে ৫৯ শতাংশে নেমে এসেছে।

‘পলিসিল্যাব কোভিড- ১৯’ পূর্বাভাস মডেল এর গবেষণায় নেতৃত্ব দেওয়া ড. ডেভিড রুবিন জানান, সাম্প্রতিক তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে ওমিক্রনের আধিপত্য বিস্তার করা দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলীয় পেনসিলভানিয়ায় শিশুদের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে ভর্তির হার আগের তুলনায় অর্ধেকে নেমে এসেছে এবং গত মাসজুড়েও তা কমেছে।

তিনি জানান, পুরো দেশেই মৌসুমি সর্দি-জ্বরের সময় হাসপাতালে শিশু ভর্তির সর্বোচ্চ হারের তুলনায় কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে শিশুদের হাসপাতালে ভর্তির হার এখনও কম।    

ডেভিড রুবিন বলেন, “আমরা টিকা নেওয়া এবং না নেওয়া উভয় শিশুর মাঝেই সংক্রমণ বেশি দেখছি। তাই ওমিক্রনের কারণে শিশুদের অস্বাভাবিক ঝুঁকি তৈরি হয় এমন বার্তা দেওয়ার ক্ষেত্রে অত্যন্ত সতর্ক হওয়া উচিত।”

‘বোস্টন চিলড্র্রেনস হসপিটালে’ কোভিড আক্রান্ত শিশু ভর্তির সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়েনি জানিয়ে এ হাসপাতালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. রিক ম্যালে বলেন, “এ বিষয়ে সতর্ক হওয়ার মতো অনেক বিষয় আছে।”

তিনি জানান, কয়েক মাস আগে দিনে ৬৫ জন শিশুও হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। আর এখন সংক্রমণ ঊর্ধ্বগতির মধ্যেও হাসপাতালে ভর্তির হার দৈনিক ৫০ এর নিচে রয়েছে।

হিউসটনের টেক্সাস চিলড্রেনস হসপিটালে সম্প্রতি ভর্তি হওয়া শিশুদের ৯০ শতাংশেরও বেশি ওমিক্রন সংক্রমিত হলেও গুরতর অসুস্থদের চিকিৎসার উন্নতি এবং টিকা দেওয়ার হার বাড়ায় বেশিরভাগ শিশুর শারীরিক অবস্থা সঙ্কটাপন্ন হয়ে উঠবে না বলে আশা প্রকাশ করেছেন হাসপাতালের প্রধান প্যাথলজিস্ট ড. জেমস ভার্সালোভিক।

তিনি বলেন, “আমি অবশ্যই উদ্বিগ্ন, কিন্তু একই সঙ্গে আমি আশাবাদী যে, আমরা ওমিক্রনের প্রভাবকে সামাল দিতে পারব।”

আরও পড়ুন