কোভিড: ওমিক্রনের ঊর্ধ্বগতি, ফ্রান্সে কঠোর বিধিনিষেধ

করোনাভাইরাসের অতি সংক্রামক ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন নিয়ে উদ্বেগে বিধিনিষেধ আরও কঠোর করার ঘোষণা দিয়েছে ফ্রান্স।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Dec 2021, 09:45 AM
Updated : 28 Dec 2021, 09:45 AM

৩ জানুয়ারি থেকে দেশটিতে বাড়ি থেকে কাজ করার সুবিধা যাদের আছে তাদের জন্য তা বাধ্যতামূলক হচ্ছে; চার দেয়ালের ভেতর যে কোনো অনুষ্ঠানে উপস্থিতির সংখ্যাও ২ হাজারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে।

শনিবার ফ্রান্সে এক লাখের বেশি কোভিড রোগী শনাক্ত হওয়ার পর বিধিনিষেধ কঠোর করার এ ঘোষণা এল।

মহামারী শুরুর পর দেশটিতে আর কখনোই একদিনে এত রোগী শনাক্ত হয়নি বলে জানিয়েছে বিবিসি।

বিধিনিষেধে কড়াকড়ি আরোপ হলেও ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী নববর্ষের প্রাক্কালে কারফিউ দেননি।

সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির কারণে ইউরোপের অন্যান্য দেশেও বিধিনিষেধ কঠোর হচ্ছে; মহাদেশজুড়ে ওমিক্রনের বিস্তারও বাড়ছে।

ভ্যারিয়েন্টটি ডেল্টার তুলনায় ‘কম মারাত্মক’ এবং আক্রান্তদের হাসপাতালে ভর্তির হার ৩০ শতাংশ থেকে ৭০ শতাংশ কম হতে পারে বলে বিভিন্ন গবেষণায় ইঙ্গিত মিললেও রোগী সংখ্যা বাড়লে তা হাসপাতালগুলোর উপরও চাপ বাড়াবে বলে আশঙ্কা রয়েছে।

মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর নতুন বিধিনিষেধের কথা জানাতে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হওয়া ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী জঁ ক্যাসটেক্স সাংবাদিকদের বলেছেন, চলতি মহামারীকে ‘শেষ নেই এমন চলচ্চিত্র’ মনে হচ্ছে।

আক্রান্ত রোগীর ‘বিশাল ঢেউ’ দেখা যেতে পারে সতর্ক করে দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, ফ্রান্সে প্রতি দুইদিনে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দ্বিগুণ হচ্ছে।

নতুন নিয়ম অনুযায়ী, দেশটিতে চার দেওয়ালের বাইরের জমায়েতেও ৫ হাজারের বেশি মানুষ থাকতে পারবে না।

দূরপাল্লার পরিবহনে খাওয়া ও তরল কিছু পান করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নাইটক্লাবগুলো বন্ধই থাকছে; ক্যাফে ও বারে কেবল টেবিলে বসে খাওয়ার অনুমোদন থাকছে।

ঘরে থেকে কাজ করা কর্মীদের সপ্তাহে অন্তত তিনদিন এভাবেই কাজ চালাতে হবে; শহরের কেন্দ্রস্থলে বাধ্যতামূলক মাস্ক পরতে হবে।

বুস্টার ডোজ নেওয়ার সময়সীমাও দ্বিতীয় ডোজের পর চার মাস থেকে কমিয়ে তিন মাস করেছে ফ্রান্সের সরকার।

পার্লামেন্টে অনুমোদন মিললে ১৫ জানুয়ারি থেকে দেশটিতে জনসমাগম হয় এমন স্থানে প্রবেশে বাধ্যতামূলক ভ্যাকসিন পাস দেখাতে হবে। অন্যান্য দেশে এই ধরনের পাসের ক্ষেত্রে শনাক্তকরণ পরীক্ষায় ‘নেগেটিভ’ ফল দেখালেও চলে, তবে ফ্রান্সে যে পাস আনার পরিকল্পনা হচ্ছে, তাতে শনাক্তকরণ পরীক্ষার ফলে কাজ হবে না; টিকা নিয়েছে এমন প্রমাণপত্রই লাগবে।

বিধিনিষেধ কঠোর করা হলেও ফ্রান্সে ৩ জানুয়ারি থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হচ্ছে।

সরকারি হিসাব অনুযায়ী, দেশটিতে এখন প্রতিদিন ৭০ হাজারের বেশি কোভিড রোগী শনাক্ত হচ্ছে।

সোমবার এক হাজার ৬০০র বেশি কোভিড রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে বলে জানিয়েছে ফ্রান্সের জনস্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ। সবমিলিয়ে দেশটিতে এখন হাসপাতালে ভর্তি কোভিডে আক্রান্তের সংখ্যা ১৭ হাজার।

সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি মোকাবেলায় ইউরোপের অন্যান্য দেশকেও নতুন নতুন বিধিনিষেধ দিতে হচ্ছে।

জার্মানিতে জনসমাগমের উপর বিধিনিষেধ আরোপ হয়েছে; বেশ কয়েকটি রাজ্যে জিম, সুইমিং পুল, নাইটক্লাব ও সিনেমা হল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। টিকা নেওয়ারা কোথাও একত্রিত হলেও সেখানে ১০ জনের বেশি জমায়েত হতে পারবে না- এমন নিয়ম জারি হয়েছে।

সোমবার বুৎজেন শহরে নতুন এসব বিধিনিষেধের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে অন্তত ১০ পুলিশ আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো। প্রায় ১০০ বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গ্রিসে ৩ জানুয়ারি থেকে বার ও রেস্তোরাঁ মধ্যরাতের আগেই বন্ধ এবং টেবিলে সর্বোচ্চ ৬ জনের বেশি বসা যাবে না এমন নিয়ম জারি করতে যাচ্ছে দেশটির সরকার।

৫৮ লাখ জনসংখ্যার দেশ ডেনমার্কে এখন প্রতি এক লাখে এক হাজার ৬১২ জনের দেহে ভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত হচ্ছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে কোভিডে ৭ জনের মৃত্যুও হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় দেশটি বার ও রেস্তোরাঁ খোলা রাখার সময় কমিয়ে দিয়েছে, সাংস্কৃতিক কেন্দ্রগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

ডিসেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত আইসল্যান্ডে কখনোই দিনে ২০০র বেশি রোগী পাওয়া যায়নি; অথচ সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে ৬৭২ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি রুখতে দেশটি জনসমাগমের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ কঠোর করেছে।