অ্যাসাঞ্জকে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দিতে ব্রিটিশ আদালতের সায়

গুপ্তচরবৃত্তি ও সরকারি কম্পিউটার হ্যাক করার অভিযোগে বিচারের জন্য উইকিলিকস প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দেওয়ার পথ খুললো ব্রিটিশ আদালতের রায়ে।    

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Dec 2021, 12:30 PM
Updated : 10 Dec 2021, 03:20 PM

অ্যাসাঞ্জের মানসিক স্বাস্থ্য পরিস্থিতি এবং যুক্তরাষ্ট্রে হস্তান্তর করা হলে তার ‘আত্মহত্যা করার’ ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে জেলা আদালত গত এপ্রিলে তার প্রত্যর্পণ আটকে দিয়েছিল। ওই আদেশের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে আপিল করে জয় পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

রয়টার্স লিখেছে, হাই কোর্টের এই রায়ের ফলে অ্যাসাঞ্জকে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে প্রত্যর্পণের আয়োজন আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল।

হাই কোর্টের বিচারক টিমোথি হলরোয়েড বলেছেন, ওয়াশিংটনের তরফ থেকে যেসব ‘আশ্বাসে’দেওয়া হয়েছে, তাতে তিনি সন্তুষ্ট।

ওই প্রতিশ্রুতিতে বলা হয়েছে, অ্যাসাঞ্জকে কলোরাডোয় তথাকথিত হাই সিকিউরিটি জেলে পাঠানো হবে না। অস্ট্রেলিয়ায় তার সাজার রায় হওয়ায় সাজা খাটার জন্য তাকে সেখানেও পাঠানো হবে না।

অস্ট্রেলীয় বংশোদ্ভূত ৫০ বছর বয়সী জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে মার্কিন সেনাবাহিনীর বিপুল পরিমাণ গোপন নথি ও কূটনৈতিক বার্তা ফাঁস করার ১৮টি অভিযোগ এনেছে যুক্তরাষ্ট্র। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাকে কয়েক দশক কারাগারে কাটাতে হতে পারে।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন উইকিলিকস প্রতিষ্ঠাতা। গত আড়াই বছরের বেশি সময় ধরে লন্ডনের বেলমার্শ কারাগারে আছেন তিনি।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, অ্যাসাঞ্জকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠাতে হলে এখনও কয়েকটি বাধা রয়েছে। এ আইনি লড়াই শেষ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টে গড়াবে।

অ্যাসাঞ্জের প্রেমিকা স্টেলা মরিস এরইমধ্যে জানিয়েছেন, তাদের আইনিজীবীরা হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন।

তিনি বলেছেন, “জুলিয়ানকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিল যে দেশ, সেখানে পাঠানো কতোটা ন্যায্য, কতোটা সঠিক? আমরা যত দ্রুত সম্ভব এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করব।”

আর প্রতিষ্ঠানবিরোধী অবস্থানের জন্য নায়কে পরিণত হওয়া অ্যাসাঞ্জের সমর্থকরা বলছেন, আফগানিস্তান এবং ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের করা ভুলগুলো প্রকাশ করে দেওয়ার কারণে তাকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে।

অ্যাসাঞ্জের প্রতিষ্ঠিত উইকিলিকস ২০১০ সালে পেন্টাগন ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের লাখ লাখ সামরিক ও কূটনৈতিক গোপন নথি ফাঁস করে দিয়ে বিশ্বজুড়ে হৈ চৈ ফেলে দিয়েছিলেন।

ওই সব নথির মধ্যে মার্কিন বাহিনীর বিরুদ্ধে আফগান যুদ্ধ সম্পর্কিত ৭৬ হাজার এবং ইরাক যুদ্ধ সম্পর্কিত আরো ৪০ হাজার নথি ছিল, যা যুক্তরাষ্ট্র সরকার ও পেন্টাগনকে চরম বেকায়দায় ফেলে দেয়।

ওই বছরই মার্কিন সেনাবাহিনীর একটি ভিডিও প্রকাশ করে উইকিলিকস। সেখানে ২০০৭ সালে বাগদাদে অ্যাপাচি হেলিকপ্টার থেকে হামলা চালিয়ে রয়টার্সের দুজন সংবাদকর্মীসহ এক ডজন মানুষকে হত্যা করতে দেখা যায়।

অ্যাসাঞ্জের ফাঁস করা গোপন নথিতে নাম থাকা গুপ্তচরদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে জানিয়ে রয়টার্স লিখেছে, যুক্তরাষ্ট্রের আইনজীবী এবং পশ্চিমা নিরাপত্তা কর্মকর্তারা তাকে অত্যন্ত অনমনীয় এবং বিপজ্জনক শত্রু মনে করেন।

অ্যাসাঞ্জকে বিচারের মুখোমুখি করতে যুক্তরাষ্ট্র শুরু থেকেই তাকে হস্তান্তরের জন্য চাপ দিয়ে করে আসছে। তবে অ্যাসাঞ্জ  এর বিরুদ্ধে লন্ডন আদালতে আইনি লড়াই চালিয়ে আসছেন এবং এ মামলাকে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ হিসেবে বর্ণনা করে আসছেন।

অ্যাসাঞ্জ সমর্থকরা তার প্রশংসা করে বলেন, তার ফাঁস করা নথিগুলো আধুনিক রাষ্ট্রের ক্ষমতার অপব্যবহারকে প্রকাশ্যে এনেছে।

কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের কৌসুলিরা বলছেন, অ্যাসাঞ্জ গোপন নথি ফাঁস করে অনেকের জীবন বিপদের মুখে ঠেলে দিয়েছেন। সেকারণেই যুক্তরাষ্ট্র তার হস্তান্তর চাইছে।

সুইডেনে যৌন নিপীড়নের এক মামলায় ২০১১ সালে গ্রেপ্তার হওয়ার পর লন্ডনের আদালত থেকে জামিন পোয়েছিলেন অ্যাসাঞ্জ। কিন্তু সুইডেনের হাতে তুলে দেওয়া হতে পারে, এই আশঙ্কায় ২০১২ সালে তিনি পালিয়ে লন্ডনে একুয়েডর  দূতাবাসে আশ্রয় নেন। সুইডেনের সেই মামলা পরে খারিজ হয়ে যায়। 

সাত বছর সেখানে কাটানোর পর ২০১৯ সালের এপ্রিলে আবার গ্রেপ্তার হন অ্যাসাঞ্জ। জামিনের শর্ত ভঙ্গের জন্য ২০১৯ সালের মে মাসে তাকে ৫০ সপ্তাহের জেল দেওয়া হয়। তখন থেকেই তিনি বেলমার্শ কারাগারে আছেন।

কারাগারে থাকা অবস্থাতেই দীর্ঘদিনের প্রেমিকা স্টেলা মরিসকে বিয়ে করার অনুমতি পান অ্যাসাঞ্জ। দক্ষিণ আফ্রিকান বংশোদ্ভূত আইনজীবী স্টেলা মরিসের সঙ্গে তার পরিচয় হয় ২০১১ সালে, যখন তিনি প্রথমবার কারাগারে গেলেন। ২০১৯ সালে জামিনের শর্ত ভঙ্গের অভিযোগে জেলে যাওয়ার পর তাদের প্রেমের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে।