রিপোর্টারস উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ) এর নতুন এক প্রতিবেদনে একথা বলা হয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
এতে বলা হয়, চীন বিশ্বব্যাপী সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে “নজিরবিহীন নিপীড়ন কর্মসূচি” চালাচ্ছে।
প্রতিবেদক ও নাগরিক সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সমস্যা উস্কে দেওয়ার অজুহাত দেখিয়ে চীন তাদেরকে গ্রেপ্তার করে আসছে।
মহামারীকালে সংবাদপত্রের ওপর বিধিনিষেধ আরও খারাপ পর্যায়ে পৌঁছেছে বলেও জানিয়েছে আরএসএফ।
উহানে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবেদন করায় অন্তত ১০ সাংবাদিক ও অনলাইন ভাষ্যকারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদের মধ্যে একজন হলেন সাবেক আইনজীবী ঝ্যাং ঝান।
২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের সময় উহানের জীবনযাত্রা নিয়ে স্থানীয় এক বাসিন্দার অনলাইন পোস্ট পড়ে ঝ্যাং ঝান সেখানে গিয়েছিলেন।
উহানে পৌঁছে তিনি কর্তৃপক্ষের হুমকির মুখেও রাস্তাঘাট ও হাসপাতালে যা যা দেখেছেন তা নিয়ে লাইভ সম্প্রচার এবং লেখালেখি করেন। তার প্রতিবেদনগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে শেয়ারও হয়।
পরে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয় যে, তিনি ‘ঝগড়া বাধানো ও সমস্যা উস্কে’ দিয়েছেন। তথ্য নিয়ন্ত্রণের সরকারি প্রচেষ্টা ক্ষুন্নকারী হিসাবে চীনে আন্দোলনকর্মী এবং হুইসেলব্লোয়ারদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ তোলার ঘটনা ঘটে হরহামেশাই।
চীন কর্তৃপক্ষ কীভাবে সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধকে কাজে লাগিয়ে একে শিনজিয়াং নিয়ে প্রতিবেদন করা উইঘুর সাংবাদিকদের গ্রেপ্তার করতে অজুহাত হিসাবে দাঁড় করিয়েছে তাও তুলে ধরা হয়েছে ৪২ পৃষ্ঠার আরএসএফ প্রতিবেদনে।
চীনের বিরুদ্ধে সংখ্যালঘিষ্ঠ উইঘুর অঞ্চলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ আছে। আর চীন ওই অঞ্চলের মানুষদেরকে বিচ্ছিন্নতাবাদী এবং ইসলামিপন্থি বলে অভিহিত করে আসছে।
অন্য আরও কোন কোন পন্থায় সাংবাদিকদের ওপর চীন নিপীড়ন চালায় তাও আরএসএফ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এর মধ্যে আছে- সাংবাদিকদের আক্রমণ করতে বিদেশে থাকা কূটনৈতিক মিশন ব্যবহার, সংবাদমাধ্যমের টুঁটি চিপে ধরা, বিভিন্ন বিষয়ের উপর সেন্সরশিপ, স্থানীয় সাংবাদিকদের জোর করে কমিউনিস্ট পার্টির আদর্শ পড়ানো, মুঠোফোনে প্রোপাগান্ডা অ্যাপ ডাউনলোড করানো এবং সাংবাদিকদের বহিষ্কার করা বা ভয় দেখানো।
গত এপ্রিলে বিবিসি’র এক সাংবাদিক উইঘুরদের ওপর চীনের আচরণ নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করার জন্য চীন কর্তৃপক্ষের চাপ এবং হুমকির মুখে বেইজিং ছেড়ে তাইপে-তে চলে যান।
বেইজিংয়ে ব্লুমবার্গ নিউজ ব্যুরোর এক সদস্য ২০২০ সাল থেকে আটক হয়ে আছেন। তার মামলা সংক্রান্ত আর কোনও তথ্যও পাওয়া যায়নি। তার বিরুদ্ধে জাতীয় নিরাপত্তা আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছে চীন কর্তৃপক্ষ। তাকে সর্বশেষ তার বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যেতে দেখা গেছে সাদা পোশাকের পুলিশ কর্মকর্তাদেরকে।
আরএসএফ ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্সে ২০২১ সালে চীনকে ১৮০টি দেশের মধ্যে ১৭৭ নম্বরে রেখেছে, যা উত্তর কোরিয়া থেকে মাত্র দুই ধাপ উপরে।