ইউক্রেইন নিয়ে মস্কোকে নেটোর সতর্কবার্তা, পাল্টা হুঁশিয়ারি পুতিনের

ইউক্রেইনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার যে কোনো নতুন সামরিক আগ্রাসনের জন্য মস্কোকে চড়া মূল্য দিতে হবে বলে সতর্ক করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট নেটো।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Dec 2021, 08:04 AM
Updated : 1 Dec 2021, 08:04 AM

ইউক্রেইন সীমান্তে রাশিয়ার বিপুল সৈন্য সমাবেশের সম্ভাব্য উদ্দেশ্য নিয়ে পশ্চিমা সামরিক জোটটির বৈঠকের মধ্যেই মঙ্গলবার তারা এ সতর্কবার্তা দেয় বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

এ বার্তার প্রতিক্রিয়ায় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন নেটো যদি মস্কোতে কয়েক মিনিটের মধ্যে আঘাত হানতে সক্ষম এমন ক্ষেপণাস্ত্র ইউক্রেইনে বসায় তাহলে রাশিয়াও পাল্টা ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে।

সাবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্র ইউক্রেইন এখন ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও নেটোতে ঢুকতে আগ্রহী; সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রতিবেশী এ দেশটিকে নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে পশ্চিমাদের সম্পর্ক স্নায়ুযুদ্ধ পরবর্তী সবচেয়ে খারাপ পর্যায়ে গেছে। 

“ইউক্রেইন রাষ্ট্রের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে রাশিয়া যদি ফের একবার শক্তির প্রয়োগ ঘটায়, তাহলে এর জন্য তাদের চড়া মূল্য দিতে হবে,” সাংবাদিকদের এমনটাই বলেছেন নেটো মহাসচিব জেনারেল জেনস স্টল্টেনবার্গ।

একই সুরে কথা বলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেনও।

তিনি বলেন, “উত্তেজনা বাড়াবে রাশিয়ার এমন যে কোনো পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য গভীর উদ্বেগের হবে. আর নতুন করে কোনো আগ্রাসন চালানো হলে তার পরিণতি হবে ভয়াবহ।”

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ইউক্রেইনকে ঘিরে উত্তেজনার পারদ চড়ছে। রাশিয়া, ইউক্রেইন ও নেটো সবাই সামরিক মহড়া করেছে এবং কারা মূল আগ্রাসনকারী তা নিয়ে একে অপরকে দোষারোপও করে চলেছে।

পুতিন এ প্রসঙ্গে আগের চেয়েও কড়া বক্তব্যে ইউক্রেইন নিয়ে মস্কোর ‘লাল দাগের’ সীমা উল্লেখ করে বলেছেন, নেটো যদি প্রতিবেশী দেশের মাটিতে অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থাপনা মোতায়েন করে তাহলে বাধ্য হয়ে রাশিয়াকে পাল্টা ব্যবস্থা নিতে হবে।

“হামলা চালাতে সক্ষম এমন ব্যবস্থাপনা ইউক্রেইনের ভূখণ্ডে থাকলে ক্ষেপণাস্ত্রের মস্কোতে উড়ে আসতে ৭ থেকে ১০ মিনিট লাগবে, আর যদি হাইপারসনিক অস্ত্র মোতায়েন করা হয় তাহলে লাগবে ৫ মিনিটি। ব্যাপারটি কেবল কল্পনা করে দেখুন।

“এরকম পরিস্থিতিতে আমরা কী করবো? যারা আমাদের এভাবে হুমকি দেবে তাদের জন্য আমাদেরও তখন একই ধরনের কিছু একটা ব্যবস্থা নিতে হবে। আর আমরা সেটা এখনই পারি,” রুশ হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের সাম্প্রতিক পরীক্ষার দিকে ইঙ্গিত করে বলেন পুতিন। 

রুশ প্রেসিডেন্ট জানান, তাদের হাইপারসনিক অস্ত্রটি শব্দের ৯ গুণ গতিতে উড়ে গিয়ে লক্ষ্যে আঘাত হানতে সক্ষম।

রাশিয়ার ক্রমবর্ধমান হুমকি নিয়ে লাটভিয়ার রাজধানী রিগাতে মঙ্গলবার থেকে নেটোর পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের দুদিনের বৈঠক শুরু হয়েছে। এ বৈঠকে ব্লিনকেন জোটের অপর ২৯ দেশকে রাশিয়ার পদক্ষেপ নিয়ে ওয়াশিংটনের গোয়েন্দা মূল্যায়ন অবহিত করবেন।

এদিকে ইউক্রেইনের প্রধানমন্ত্রী ডেনিস স্মাইহল রাশিয়ার বিরুদ্ধে কিয়েভের নির্বাচিত সরকারকে উৎখাতচেষ্টার অভিযোগ এনেছেন। ক্রেমলিন এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে।

গত সপ্তাহে ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভ্লদিমির জেলেনস্কিও অভ্যুত্থানের চেষ্টা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছিলেন; এর জন্য একদল রুশ ও ইউক্রেইনের নাগরিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেও সরাসরি মস্কোকে দোষারোপ করেননি তিনি।

স্মাইহল বলেছেন, ইউক্রেইন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে আরও অস্ত্র চাইতে পারে।

কিয়েভের এমন পদক্ষেপের ব্যাপারেই পুতিন সুনির্দিষ্টভাবে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

২০১৪ সালে রাশিয়া ইউক্রেইনের কাছ থেকে ক্রিমিয়ার দখল নেয়, তারা দেশটির উত্তরে সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইরত বিদ্রোহীদেরও সহযোগিতা করে আসছে। ইউক্রেইনের উত্তরাঞ্চলে সংঘাত এরই মধ্যে ১৪ হাজারের মতো মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে বলে জানিয়েছে কিয়েভ।

মে মাসে রাশিয়া ইউক্রেইন সীমান্তে এক লাখের মতো সৈন্য মোতায়েন করে; ক্রিমিয়া দখলের পর ইউক্রেইন সীমান্তে আর একসঙ্গে এত রুশ সেনা দেখা যায়নি বলে জানান পশ্চিমা কর্মকর্তারা।

সীমান্তের কাছে এখনও ৯০ হাজারের বেশি রুশ সেনা অবস্থান করছে বলে জানিয়েছে ইউক্রেইন।  

এই সৈন্য সমাবেশকে ইউক্রেইন দেখছে হামলার পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে; যে ধারণাকে উড়িয়ে দিয়েছে মস্কো। তারা বলছে, তারা কাউকে হুমকি দেয় না এবং নিজেদের ভূখণ্ডে যখন খুশি সেনা মোতায়েন অধিকার তাদের রয়েছে।

এ সৈন্য সমাবেশ নিয়ে নেটোর মতো জার্মানি ও যুক্তরাজ্যও রাশিয়াকে সতর্ক করে দিয়েছে।

“রাশিয়ার ক্ষতিকর কার্যকলাপের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক সাথীদের পাশে দাঁড়াবো আমরা,” বলেছেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রাস।

জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেইকো মাস বলেছেন, “ইউক্রেইনের প্রতি নেটোর সমর্থন অব্যাহত থাকবে। কোনো ধরনের আগ্রাসন হলে রাশিয়াকে চড়া মূল্য দিতে হবে।”