ঠিক যেন শাহজাহান! ‘তাজমহল’ উপহার দিলেন স্ত্রীকে!

অমর প্রেমের কীর্তি আগ্রার তাজমহল। স্ত্রী মমতাজের প্রতি ভালবাসার স্বীকৃতিস্বরূপ সম্রাট শাহজাহানের গড়া যে নিদর্শন বিশ্বের বিস্ময় হয়ে আছে, এবার তারই এক ‘অনুকৃতি’ গড়ে স্ত্রীকে উপহার দিয়েছেন ভারতের মধ্যপ্রদেশের এক বাসিন্দা।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Nov 2021, 12:17 PM
Updated : 29 Nov 2021, 12:17 PM

এ কালের এই শাহজাহানের নাম আনন্দপ্রকাশ চৌকসিয়া। পেশায় ব্যবসায়ী। তার বাড়ি মধ্যপ্রদেশের বুরহানপুরে। সেখানেই তাজমহলের আদলে নিজের ভালবাসার এই প্রাসাদ গড়েছেন আনন্দ প্রকাশ।

মোগল সম্রাট শাহজাহান তার মৃত স্ত্রী মমতাজের স্মৃতিতে বানিয়েছিলেন তাজমহল। তবে আনন্দর তাজমহল কোনও সমাধি সৌধ নয়। জীবিত স্ত্রী মঞ্জুশার সঙ্গে এখানেই বাস করতে চান তিনি।

বিবিসি-কে আনন্দপ্রকাশ বলেছেন, “এই বাড়িটি আমার ভালবাসার স্মৃতি। আমার স্ত্রীর জন্য।” তবে কেবল স্ত্রী-ই নয়, বুরহানপুর শহরের জন্য এবং জনগণের জন্যও এই বাড়ি তার উপহার বলে জানিয়েছেন আনন্দ।

বাড়িটি বানাতে প্রায় ২ কোটি রূপি খরচ হয়েছে বলেও জানান তিনি। সিভিল ইঞ্জিনিয়াররা তাজমহলের একটি থ্রিডি ছবির ভিত্তিতে বাড়িটি তৈরি করেছেন। আনন্দপ্রকাশের আশা, তার বাড়িটি আগামী দিনে বুরহানপুরে যাওয়া পর্যটকদের কাছে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হবে।

ভারতীয় গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, আনন্দপ্রকাশ ও তার স্ত্রী তাজমহল দেখতে গিয়েছিলেন। তখনই আনন্দপ্রকাশ মনে মনে এর ‘রেপ্লিকা’ বানানোর সিদ্ধান্ত নেন। ফিরে এসে তাজমহলের স্থাপত্য নিয়ে পড়াশোনা করেন। নির্মাণশিল্পীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

শেষ পর্যন্ত তৈরি হয় বাড়িটি। এই বাড়ি ৯০ বর্গমিটার প্রশস্ত, তবে এর মূল কাঠামো ৬০ বর্গমিটার জুড়ে, উচ্চতা ২৯ ফুট। এতে অনেক মিনার রয়েছে। বাড়িটির দু'টি তলায় দু'টি করে শোবার ঘর। আছে রান্নাঘর, গ্রন্থাগার ও যোগাসনের ঘর।

বাড়িটি বানাতে সময় লেগেছে তিন বছর। বাড়ির ড্রয়িংরুমে আছে দৃষ্টিনন্দন সাজের মার্বেল পাথরের স্তম্ভ। আছে বক্রাকার সিঁড়িপথ এবং স্বর্ণালী সিলিং। আসল তাজমহলের মতো অন্ধকারে আনন্দের তাজমহলও দ্যুতি ছড়াবে। কারণ বাড়িতে আনন্দ আলোর ব্যবহারে এনেছেন অভিনবত্ব।

তাজমহলের আদলে ৫০ একর জায়গায় বিস্তৃত জমিতে এই তাজমহল গড়েছেন আনন্দ প্রকাশ। এ চত্বরে আছে একটি হাসপাতালও। বহু মানুষের ঢল নামছে বাড়িটি দেখার জন্য।

আনন্দ বলেন, “বাড়ির পাশ দিয়ে মানুষ হাঁটে। আর ছবি তোলে। বহু যুগল বিয়ে করার আগে এই বাড়িতে এসে ছবি তুলছেন। আমি তাতে বাধা দিই না। কারণ, এ শহরে আমরা সবাই ঘনিষ্ঠ সম্প্রদায়। এখানে সবাই সবাইকে চেনেন, জানেন। আমার বাড়ি সবার জন্যই উন্মুক্ত।”

তবে তিনি বলেন, “সব দর্শণার্থীর জন্য বাড়ির ভেতরে প্রবেশের অনুমতি নেই। কারণ, আমরা এখনও এই বাড়িতে বাস করি।” কিন্তু তারপরও মাঝেমধ্যে অতিথিদের ভেতরে ঢুকতে দেয় আনন্দের পরিবার। অতিথিরা ভেতরে গিয়ে বিলাসবহুল সাজসজ্জা দেখেন।

বিবিসি জানায়, এর আগে উত্তর প্রদেশের একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা ২০১৩ সালে স্ত্রীর স্মৃতির উদ্দেশে তাজমহলের প্রতিকৃতি বানিয়েছিলেন। তবে আনন্দপ্রকাশ তাজমহলের আদলে তার ‘ভালবাসার প্রতীক’ গড়া নিয়ে বলছেন ভিন্ন কথা।

তিনি বলেন, “বর্তমানে আমার দেশে মানুষে মানুষে প্রচুর হিংসা, ঘৃণা। মানুষ নানা ধর্ম, গোত্রে বিভক্ত। এরকম একটি সময়ে আমি কেবল আমার স্ত্রী নয়, বরং সবার জন্যই ভালবাসা ছড়িয়ে দিতে চেয়েছি।”

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল বিজেপি সরকার ধর্মীয় রেখায় ভারতকে মেরুকরণ করছেন এবং অসহিষ্নুতা ছড়িয়ে দিচ্ছেন বলে বিস্তর অভিযোগ আছে। এমনকী ২০১৭ সালে তাজমহল নিয়েও আলোচনা শুরু হয়। তখন বিজেপি’র একজন আইনপ্রণেতা এই অমর কীর্তিকে ‘দেশদ্রোহীদের’ নির্মিত ‘ভারতীয় সংস্কৃতির কলঙ্ক’ বলে অভিহিত করেছিলেন।

এমন প্রেক্ষাপটে আনন্দ প্রকাশ চৌকসিয়া তার বাড়িটিকে ভালবাসা ছড়িয়ে দেওয়ার অনুপ্রেরণা হিসেবেই দেখাতে চান। তার ভাষায়, “এই বাড়ি হল ভালবাসার প্রতীক, যা সব সামাজিক ভেদাভেদ এবং রাজনৈতিক শোরগোলের উর্র্ধ্বে।”