সুদানে প্রধানমন্ত্রীকে পুনর্বহাল করেছে সামরিক বাহিনী

সুদানে সামরিক অভ্যুত্থানের পর কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা সহিংস প্রতিবাদের মুখে ক্ষমতাচ্যুত আবদাল্লাহ হামদককে ফের প্রধানমন্ত্রী পদে বহাল করেছে দেশটির সেনাবাহিনী।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Nov 2021, 07:19 AM
Updated : 22 Nov 2021, 07:19 AM

রোববার হামদককে পুনর্বহাল করার পর সব রাজনৈতিক বন্দিদেরও মুক্তি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সামরিক বাহিনী, কিন্তু সেনাবাহিনী জড়িত আছে এমন যেকোনো চুক্তি প্রত্যাখ্যানের দাবিতে বিপুল সংখ্যক লোক রাস্তায় অবস্থান নিয়েছে বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

সামরিক নেতা আবদেল ফাত্তাহ আল বুরহানের সঙ্গে হওয়া এক চুক্তি অনুযায়ী, অন্তবর্তী সময়কালের জন্য হামদক টেকনোক্র্যাটদের নিয়ে গঠিত একটি বেসামরিক সরকারের নেতৃত্ব দিবেন।

২০১৯ সালে গণঅভ্যুত্থানের মুখে সুদানের দীর্ঘদিনের একনায়ক ওমর আল বশির ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর হামদক প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন। কিন্তু গত মাসের সামরিক অভ্যুত্থানে পদ হারান। 

বশির ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে পূর্ণ বেসামরিক শাসনের দাবি জানিয়ে আসা সুদানের গণতন্ত্রপন্থি গোষ্ঠীগুলো এই চুক্তির বিরোধিতা করছে। ২৫ অক্টোবরের সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে শুরু হওয়া প্রতিবাদ চলাকালে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে বহু বিক্ষোভকারী নিহত হওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে আছে তারা।

এই প্রতিবাদ বিক্ষোভে যাকে ‘নায়ক’ হিসেবে বিবেচনা করা হতো চুক্তির পর সেই হামদক কিছু অংশের কাছে ‘ভিলেনে’ পরিণত হয়েছেন। 

চুক্তি ঘোষণার পরপরই বিক্ষোভকারীরা শ্লোগান দেওয়া শুরু করে, “হামদক বিপ্লব বিক্রি করে দিয়েছেন।”

বিক্ষোভের নেতৃস্থানীয় গোষ্ঠী সুদানিজ প্রফেশনাল অ্যাসোসিয়েশন (এসপিএ) এই চুক্তিকে ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ বলে অভিহিত করেছে। 

রাজধানী খার্তুমে পূর্বনির্ধারিত সমাবেশগুলোতে লাখো লোক জড়ো হয়। খার্তুমের পার্শ্ববর্তী শহর ওমদুরমান ও বাহরিতেও একই চিত্র দেখা গেছে।

“হামদক আমাদের হতাশ করেছে। আমাদের একমাত্র বিকল্প রাস্তার আন্দোলন,” খার্তুমে বলেছেন বিক্ষোভকারী ওমর ইব্রাহিম (২৬) ।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে নিরাপত্তা বাহিনী কাঁদুনে গ্যাস ও বুলেট ছুড়েছে।

সুদানের চিকিৎসকদের কেন্দ্রীয় কমিটি জানিয়েছে, ওরদুরমানে ১৬ বছর বয়সী একজন বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, নরওয়ে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কানাডা ও সুইজারল্যান্ড হামদককে পুনর্বহালকে স্বাগত জানিয়েছে এবং এক যৌথ বিবৃতিতে রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। জাতিসংঘও রোববারের চুক্তিটিকে স্বাগত জানিয়েছে। 

পশ্চিমা শক্তিগুলো গত মাসের সামরিক অভ্যুত্থানের নিন্দা করে সুদানের জন্য ঘোষিত অর্থনৈতিক সহায়তা স্থগিত করে। সুদান গভীর একটি অথনৈতিক সংকট থেকে বের হওয়ার চেষ্টায় আছে।

অভ্যুত্থানের পর সুদানে সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়। এই প্রতিবাদের সঙ্গে জড়িত চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, বিক্ষোভ দমনে নিরাপত্তা বাহিনী ক্রমবর্ধমান দমনপীড়ন চালাচ্ছে এবং এ পর্যন্ত ৪১ জন বেসামরিককে হত্যা করেছে।

আরও হতাহত হওয়া বন্ধ করতেই তিনি চুক্তিতে সম্মত হয়েছেন বলে হামদক জানিয়েছেন।

রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভশনে সম্প্রচারিত চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে হামদক বলেন, “সুদানিদের রক্ত মূল্যবান। আসুন আমরা রক্তপাত বন্ধ করে তরুণ্যের শক্তিকে নির্মাণ ও উন্নয়নের দিকে চালিত করি।”

চুক্তিতে সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে বলে জেনারেল বুরহান জানিয়েছেন।

“আমাদের সবার সম্মতি অনুযায়ী ন্যাশনাল কংগ্রেস পার্টি ছাড়া আমরা আর কাউকে বাদ দিতে চাই না,” বশিরের সাবেক ক্ষমতাসীন দলের নাম উল্লেখ করে বলেছেন তিনি।

কিন্তু চুক্তিতে ফোর্সেস অব ফ্রিডম এন্ড চেঞ্জ (এফএফসি) এর কোনো উল্লেখ নেই। বেসামরিক এই জোটটি অভ্যুত্থানের আগে সামরিক বাহিনীর সঙ্গে ক্ষমতার অংশীদার ছিল। চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বশিরের অনেক রাজনৈতিক মিত্রও উপস্থিত ছিলেন বলে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। 

এফএফসি বলেছে, তারা সামরিক বাহিনীর সঙ্গে করা কোনো চুক্তির স্বীকৃতি দেবে না।

এফএফসি জোটের নেতৃস্থানীয় দল সুদানিজ কংগ্রেস পার্টি সামরিক বাহিনীর সঙ্গে চুক্তিতে হামদকের যোগ দেওয়াকে ‘অবৈধ ও অসাংবিধানিক’ অভিহিত করে চুক্তিটি সামরিক অভ্যুত্থানকে রাজনৈতিক ছায়ায় ঢাকছে বলে অভিযোগ করেছে।  

প্রতিবাদ চালিয়ে যাওয়া বেশ কয়েকটি প্রতিরোধ কমিটি বিবৃতি দিয়ে সামরিক বাহিনীর সঙ্গে চুক্তি প্রত্যাখ্যান করার কথা জানিয়েছে।

বশির ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ক্ষমতা ভাগাভাগির চুক্তি অনুযায়ী হামদক প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েছিলেন। কিন্তু গত মাসের সামরিক অভ্যুত্থানের পর হামদককে গৃহবন্দি করা হয় এবং তার সরকারের শীর্ষ পদগুলোতে থাকা বেসামরিকদের আটক করে সেনাবাহিনী। 

আরও পড়ুন: