লিথুনিয়ার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক সীমিত করল চীন

তাইওয়ানকে ডি ফ্যাক্টো দূতাবাস খুলতে দেওয়ায় লিথুনিয়ার প্রতি ক্ষুব্ধ চীন এবার বাল্টিক দেশটির সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক সীমিত করার ঘোষণা দিয়েছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Nov 2021, 12:08 PM
Updated : 21 Nov 2021, 12:08 PM

বেইজিং স্বশাসিত তাইওয়ানকে নিজেদের একটি বিচ্ছিন্ন প্রদেশ হিসেবে দেখে। দ্বীপটিকে কেউ রাষ্ট্রের মর্যাদা দিক তা যেমন চায় না চীন, তেমনি যে অল্প কয়েকটি দেশ তাইওয়ানের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক সম্পর্ক রেখেছে তা সীমিত বা ছিন্ন করতেও চাপ দিয়ে যাচ্ছে তারা।

কয়েক মাস আগে লিথুনিয়া যখন তাদের ভূখণ্ডে তাইওয়ানকে কার্যালয় খোলার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে বলে জানায় তখনই চীন এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিল। অগাস্টে তারা দেশটি থেকে তাদের রাষ্ট্রদূতকেও ফিরিয়ে আনে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ইউরোপের অন্যত্র এবং যুক্তরাষ্ট্রে তাইওয়ানের যেসব কার্যালয় রয়েছে সেগুলোতে সরাসরি তাইওয়ানের নাম ব্যবহার করা হয়নি, তাইপের নামে কার্যালয় খোলা হয়েছে।

কিন্তু বৃহস্পতিবার লিথুনিয়ায় যে দপ্তরটি খোলা হয়েছে, সেটিতে ‘তাইওয়ান’ নামই ব্যবহৃত হয়েছে।

এর প্রতিক্রিয়ায় দেওয়া কড়া এক বিবৃতিতে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, লিথুনিয়া চীনের তাইওয়ান সংক্রান্ত অবস্থান ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মৌল নীতিগুলোকে অবজ্ঞা করেছে।

“তাদের এই পদক্ষেপ চীনের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতাকে ক্ষুণ্ন করেছে এবং মোটাদাগে চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেছে, আন্তর্জাতিকভাবে খারাপ নজির সৃষ্টি করেছে,” বলেছে তারা। 

বেইজিং জানিয়েছে, তারা লিথুনিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক শার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স পর্যায়ে নামিয়ে এনেছে, যা রাষ্ট্রদূত পর্যায়ের নিচে।

“আমরা লিথুনিয়াকে শিগগিরই তাদের ভুল সংশোধন করতে এবং তারা ভুলেও যেন জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় চীনা জনগণের দৃঢ় আকাঙ্ক্ষা ও সংকল্পকে খাটো করে না দেখে সে আহ্বান জানাচ্ছি,” বিবৃতিতে এমনটাই বলা হয়েছে।

তাইওয়ান যা-ই করুক না কেন, তারা যে চীনের অংশ তা কখনোই বদলাবে না, বলেছে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

লিথুনিয়া জানিয়েছে, তারা চীনের এ পদক্ষেপে ‘দুঃখ পেয়েছে’।

“লিথুনিয়ায় তাইওয়ানের প্রতিনিধিত্ব স্বীকৃত হয়েছে অর্থনৈতিক স্বার্থ বিবেচনায়। লিথুনিয়া তার ‘এক চীন’ নীতিতেই অটল আছে, পাশাপাশি তার অধিকার রয়েছে তাইওয়ানের সঙ্গে সম্পর্ক বিস্তৃত করার, যেমনটা অন্য অনেক দেশই করছে,” বলেছে লিথুনিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

তাইওয়ান বলেছে, তারা একটি স্বাধীন দেশ, যার নাম চীন প্রজাতন্ত্র (তাইওয়ানের আনুষ্ঠানিক নাম)। গণপ্রজাতন্ত্রী চীন (চীনের আনুষ্ঠানিক নাম) কখনো তাদের শাসন করেনি, যে কারণে তাদেরকে নিয়ে কথা বলার অধিকারও চীনের নেই।

তাইওয়ানের মূল ভূখণ্ড বিষয়ক কাউন্সিল চীনের ‘অভদ্রতা ও অহংকারী মনোভাবের’ নিন্দা জানিয়েছে। বলেছে, চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয় নয় এমন কোনো বিষয়ে মন্তব্যের অধিকার নেই বেইজিংয়ের; লিথুনিয়ার সঙ্গে তাইওয়ানের সম্পর্কের বিষয়টি পুরোপুরিই লিথুনিয়া ও তাইওয়ানের বিষয়, অন্য কারও নয়।  

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে তাইপের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিভিন্ন দেশের দহরম মহরম বেশি দেখা যাচ্ছে; এর পাল্টায় চীনও স্বশাসিত দ্বীপটির ওপর কূটনৈতিক ও সামরিক চাপ বাড়াচ্ছে।

এখন তাইওয়ানের সঙ্গে মাত্র ১৫টি দেশের আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। চলতি মাসের শেষদিকে হন্ডুরাসে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর এ সংখ্যা ১৪তে নেমে আসতে পারে।

মধ্য আমেরিকার দেশটির প্রধান প্রধান বিরোধী দলগুলো যে প্রার্থীকে সমর্থন দিয়েছে সেই জিওমারা কাস্ত্রো বলেছেন, ক্ষমতায় গেলে তিনি চীনের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক স্থাপন করবেন।