ইউরোপে কোভিড বিধিনিষেধের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ

ইউরোপজুড়ে কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যার ঊর্ধ্বগতির মধ্যে লকডাউন সংক্রান্ত নতুন বিধিনিষেধ নেদারল্যান্ডসকে অশান্ত করে তুলেছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Nov 2021, 08:06 AM
Updated : 21 Nov 2021, 08:06 AM

দেশটির বন্দর শহর রটারডামে সহিংস বিক্ষোভ ও তা নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশের গুলি চালানোর পরের রাতেই হেগে বিক্ষোভকারীরা পুলিশের দিকে আতশবাজি ছুড়েছে, সাইকেলে আগুন দিয়েছে।

বাড়তে থাকা সংক্রমণ মোকাবেলায় দেওয়া নতুন বিধিনিষেধের বিরুদ্ধে অস্ট্রিয়া, ক্রোয়েশিয়া ও ইতালিতেও হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখিয়েছে বলে বিবিসি জানিয়েছে।

ইউরোপ মহাদেশে করোনাভাইরাস রোগী বাড়তে থাকায় ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

সংস্থাটির আঞ্চলিক পরিচালক ড. হ্যানস ক্লুগ সতর্ক করে বলেছেন, সংক্রমণ মোকাবেলায় কড়াকড়ি আরোপ করা না হলে আগামী বসন্তের আগে কোভিডে ইউরোপজুড়ে আরও পাঁচ লাখ মৃত্যু দেখা যেতে পারে।

“কোভিড-১৯ আবারও আমাদের অঞ্চলে মৃত্যুর এক নম্বর কারণ হয়ে উঠতে পারে। ভাইরাস মোকাবেলায় কী করতে হবে আমরা জানি, যেমন টিকা নেওয়া, মাস্ক পরা, কোভিড পাসের ব্যবহার,” বিবিসিকে এমনটাই বলেছেন তিনি।

ইউরোপের অনেক দেশেই এখন দৈনিক শনাক্তের নিত্যনতুন রেকর্ড দেখা যাচ্ছে। সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি মোকাবেলায় তাই অঞ্চলটির অনেক দেশের সরকারই নতুন নতুন বিধিনিষেধ আরোপ করছে। এসব বিধিনিষেধের বিরুদ্ধে একাধিক শহরে বিক্ষোভও হয়েছে।

নেদারল্যান্ডসের বেশ কয়েকটি শহরে শনিবার দ্বিতীয় রাতের মতো সহিংস বিক্ষোভ দেখা গেছে।

মাথা ঢাকা দাঙ্গাবাজরা হেগের বিভিন্ন সড়কে থাকা বাইসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে দাঙ্গা পুলিশ ঘোড়া, কুকুর ও ব্যাটন ব্যবহার করেছে। কর্তৃপক্ষ শহরটিতে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে, গ্রেপ্তার করা হয়েছে অন্তত সাত জনকে।

শহরটিতে রোগী বহনকারী একটি অ্যাম্বুলেন্সের জানালায় পাথর ছোড়ার ঘটনাও ঘটেছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। সহিংসতায় পুলিশের পাঁচ সদস্যও আহত হয়েছেন।

দেশটিতে সংক্রমণ মোকাবেলায় দেওয়া নতুন বিধিনিষেধের কারণে সমর্থকরা মাঠে গিয়ে ফুটবল খেলা দেখতে পারছেন না। শনিবার ওই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে সমর্থকরা মাঠের ভেতর ঢুকে পড়ায় দুটি ম্যাচ সাময়িক সময়ের জন্য স্থগিতও রাখতে হয়েছিল।

এর আগে শুক্রবার রাতে রটারডামে যে অরাজকতা হয়, শহরটির মেয়র পরে তাকে ‘উন্মত্ত সহিংসতা’ অ্যাখ্যা দেন।

‘পরিস্থিতি প্রাণসংহারী হয়ে ওঠায়’ সতর্কীকরণ গুলির পাশাপাশি বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করেও গুলি ছুড়তে হয়েছিল বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছিলেন পুলিশের এক মুখপাত্র।

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গুলিতে আহত অন্তত তিন বিক্ষোভকারী হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন । ঘটনার বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ।

কোভিড রোগীর রেকর্ড বৃদ্ধি দেখে গত শনিবার থেকে তিন সপ্তাহের আংশিক লকডাউন আরোপ করেছে নেদারল্যান্ডস।

নতুন বিধিনিষেধের কারণে দেশটির বার ও রেস্তোরাঁগুলো এখন রাত ৮টার মধ্যেই বন্ধ করে দিতে হচ্ছে; খেলার আসরগুলোতে লোকসমাগম নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

অস্ট্রিয়ায় নতুন লকডাউন ও আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির মধ্যে সবাইকে বাধ্যতামূলক টিকা নিতে হবে- এমন ঘোষণা দেওয়ার পর এর প্রতিবাদে ভিয়েনায় লাখো মানুষ বিক্ষোভ করেছে।

ইউরোপের প্রথম দেশ হিসেবে অস্ট্রিয়া টিকা নেওয়া বাধ্যতামূলক করেছে।

বিক্ষোভকারীরা জাতীয় পতাকা উড়িয়ে, ‘স্বাধীনতা’ লেখা ব্যানার নিয়ে ‘প্রতিরোধ গড়ে তোল’ স্লোগান এবং পুলিশের উদ্দেশ্যে দুয়োধ্বনি দেয়।

সোমবার থেকে দেশটিতে ২০ দিনের লকডাউন শুরু হচ্ছে; জরুরি পণ্যের দোকান ছাড়া সব দোকানপাট বন্ধ এবং মানুষজনকে বাড়ি থেকে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ক্রোয়েশিয়ার সরকারি খাতের কর্মীদের বাধ্যতামূলক টিকা নেওয়ার নির্দেশনার বিরুদ্ধে রাজধানী জাগরেবে বিক্ষোভে হাজারো মানুষের উপস্থিতি দেখা গেছে।

ইতালিতে কর্মক্ষেত্রে, বিভিন্ন অনুষ্ঠানস্থল ও গণপরিবহনে ‘গ্রিন পাস’ সনদ বাধ্যতামূলক করার প্রতিবাদে সার্কাস ম্যাক্সিমাস চ্যারিয়ট-রেসিং গ্রাউন্ডে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছে দেশটির কয়েক হাজার নাগরিক।

ফ্রান্সের নিয়ন্ত্রণে থাকা ক্যারিবীয় দ্বীপ গুয়াদালুপে সহিংসতা থামাতে অতিরিক্ত পুলিশ পাঠাতে হয়েছে।

ফ্রান্সের নিজস্ব ‘কোভিড পাসে’র বিরুদ্ধে দ্বীপটিতে টানা কয়েক রাত ধরে চলা সহিংসতার মধ্যে কয়েক ডজন দোকানে লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে; বিক্ষোভকারীরা অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আগুনও ধরিয়ে দিয়েছে।

সহিংসতায় জড়িতদের মধ্যে কেউ কেউ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের লক্ষ্য করে বুলেট ছুড়েছে জানিয়ে ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেরাল ডারমানো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন।