সুদানে অভ্যুত্থান: সাহায্য বন্ধ করল বিশ্ব ব্যাংক, জোরদার হচ্ছে আন্দোলন

সুদানে সামরিক অভ্যুত্থানের জেরে দেশটিতে সাহায্য স্থগিত করেছে বিশ্ব ব্যাংক। ওদিকে, অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামা বিক্ষোভকারীদের প্রতি জনসমর্থন আরও বেড়ে জোরদার হচ্ছে আন্দোলন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Oct 2021, 06:23 PM
Updated : 27 Oct 2021, 06:23 PM

গত সোমবারের অভ্যুত্থানে সুদানের বেসামরিক সরকার উৎখাত এবং রাজনৈতিক নেতারা বন্দি হওয়ার ঘটনা দেশজুড়ে বিক্ষোভ উস্কে দিয়েছে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক নিন্দা-সমালোচনা শুরু হয়েছে।

‘অসাংবিধানিকভাবে’ ক্ষমতা দখলের প্রতিবাদে আফ্রিকান ইউনিয়নও (এইউ) এই জোটে সুদানের সদস্যপদ স্থগিত করেছে। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র ৭০ কোটি ডলারের সাহায্য বন্ধ করেছে সুদানে।

সুদানের বিরুদ্ধে এইউ এবং বিশ্ব ব্যাংকের নেওয়া পদক্ষেপ দেশটিতে বেসামরিক সরকার পুনর্বহাল করার জন্য অভ্যুত্থানের নেতা জেনারেল আব্দেল ফাত্তাহ আল-বুরহানের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করেছে।

বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড মালপাস ওয়াশিংটন থেকে এক বিবৃতিতে বলেছেন, “সুদানের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আমি খুবই উদ্বিগ্ন। দেশটির আর্থ-সামাজিক ‍পুনরুজ্জীবন ও উন্নয়নের ওপর এই পরিস্থিতির যে নাটকীয় প্রভাব পড়তে পারে তা নিয়ে আমি শঙ্কায় আছি।”

“আমরা আশা করি সুদানে উত্তরণ প্রক্রিয়ায় সততা এবং শান্তি ফিরে আসবে, যাতে দেশটি আবার অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে যাত্রা শুরু করতে পারে এবং আন্তর্জাাতিক অর্থনৈতিক অঙ্গনে সঠিক জায়গা করে নিতে পারে।”

বিবিসি জানায়, গত মার্চেই সুদান বিশ্ব ব্যাংক থেকে ২শ’ কোটি ডলার অনুদান পেয়েছিল। ঋণ পুরোপুরি পরিশোধ করতে পারায় প্রায় ৩০ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো দেশটি এই অনুদান পায়।

খার্তুমে বিরল এক সফরে গিয়ে বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন, বছরের পর বছরের গভীর সংকটের পর সুদানে কিছুটা অর্থনৈতিক অগ্রগতি হচ্ছে। কিন্তু এই সাফল্যের মুখ দেখা সুদান আবারও নিমজ্জিত হয়েছে সংকটের গহ্বরে।

সুদানের জেনারেল বুরহান মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে অভ্যুত্থানের কারণ জানিয়ে বলেছেন, দেশে গৃহযুদ্ধ ঠেকাতেই সেনাবাহিনী ক্ষমতা নিয়েছে। তিনি জোরj দিয়ে এও বলেছেন যে, সুদান এখনও গণতন্ত্রের পথে এগুচ্ছে, ২০২৩ সালে নির্বাচন হবে।

কিন্তু তার এই যুক্তি এবং হঠাৎ করেই ক্ষমতা দখল অনেকেই মেনে নিতে পারছে না। অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে সুদানে বুধবার তৃতীয়দিনের মতো বিক্ষোভ চলেছে। এদিন রাজধানী খার্তুমে বিক্ষিপ্তভাবে বিক্ষোভ হয়েছে।

বুধবারের বিক্ষোভে নতুন করে কোনও রক্তক্ষয় না ঘটলেও এর আগের দিনগুলোর বিক্ষোভে অন্তত ১০ জনের প্রাণহানির খবর এসেছে। রাস্তায় নামা বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে যোগ দিচ্ছে চিকিৎসক, পাইলট এবং তেল কোম্পানির কর্মীরা। সুদানের ব্যাংকিং অ্যাসোসিয়েশনের কর্মীরাও বিক্ষোভে সমর্র্থন দিচ্ছে।

বিবিসি-কে অ্যাসোসিয়েশনের এক মুখপাত্র বলেন, “আমরা সামরিক পদক্ষেপ এবং কোনওরকম স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে দৃঢ় প্রত্যয়ে উঠে দাঁড়িয়েছি।”

সুদানের দীর্ঘদিনের প্রেসিডেন্ট ওমর আল বশিরকে ২০১৯ সালে সরিয়ে দেওয়ার পর সামরিক বাহিনী ও বেসামরিক গোষ্ঠীগুলোর নড়বড়ে এক ক্ষমতা ভাগাভাগির চুক্তির মধ্য দিয়ে গত দুই বছর ধরে পরিচালিত হয়ে আসছিল পূর্ব আফ্রিকার দেশটি।

সেপ্টেম্বরে বশিরের অনুগত সেনাদের ব্যর্থ এক অভ্যুত্থান চেষ্টার পর থেকে সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বেসামরিক নিয়ন্ত্রিত জোট ফোর্সেস অব ফিডম অ্যান্ড চেইঞ্জের (এফএফসি) সংস্কার এবং মন্ত্রিসভায় রদবদলের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। অন্যদিকে, বেসামরিক নেতারা এ দাবিগুলোকে দেখে আসছিলেন সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাদের ‘ক্ষমতা দখলের উচ্চাকাঙ্ক্ষা’ হিসেবে।

শুক্রবার এক বক্তৃতায় দেশটির বেসামরিক প্রধানমন্ত্রী আবদাল্লা হামদক চলমান রাজনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণে একটি রোডম্যাপ দিয়েছিলেন এবং সমাধানে পৌঁছাতে ব্যর্থ হলে তা দেশের ভবিষ্যৎকে ভয়াবহ অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেবে বলে হুঁশিয়ার করেছিলেন।

এর মধ্যেই এফএফসি জোটে থাকা সামরিক বাহিনীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত একটি অংশ গত শনিবার বিক্ষোভের ডাক দেয়। তাতে সাড়া দিয়ে কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী রাজধানী খার্তুমে প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের সামনে জড়ো হয়ে  ‘ভুখা সরকারের’ অপসারণের দাবিতে স্লোগান দেয় এবং সশস্ত্র বাহিনী ও সুদানের যৌথ সামরিক-বেসামরিক সার্বভৌম পরিষদের প্রধান জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ অল-বুরহানকে ‘অভ্যুত্থানের মাধ্যমে’ ক্ষমতা নেওয়ার আহ্বান জানায়।

কয়েক ডজন বাসে চেপে খার্তুমের কেন্দ্রস্থলে আসা এ বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সেদিন বেসামরিক নেতৃত্বের সমর্থকদের সংঘর্ষও হয়।