জাপানের আইন অনুযায়ী, রাজপরিবারের কোনো মেয়ে যদি সাধারণ ঘরের কাউকে বিয়ে করেন, তাহলে তাকে পদবী ছাড়তে হয়। তবে রাজপরিবারের পুরুষ সদস্যদের জন্য এ ধরনের কোনো বিধান নেই।
দীর্ঘদিনের প্রেমিককে জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নিতে কেবল মর্যাদা বিসর্জন দেননি মাকো, তিনি রাজপরিবারের বিয়েতে যে যে আচার-অনুষ্ঠান হয় সেগুলোও বাদ দিয়েছেন।
পরিবার ছাড়ার সময় রাজপরিবারের নারী সদস্যদের এককালীন অর্থ দেওয়ার রীতি আছে, মাকো ওই অর্থও নেননি বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বিবিসি।
এর মাধ্যমে তিনি হলেন জাপানের রাজপরিবারের প্রথম নারী সদস্য যিনি অর্থ, আচার-অনুষ্ঠান দুটোই পরিত্যাগ করলেন।
মাকো যখন থেকে কুমুরোর সঙ্গে তার সম্পর্কের কথা ঘোষণা করেছেন, তখন থেকেই কুমুরোকে মার্কলের মতোই গণমাধ্যমের ব্যাপক কাঁটাছেড়ার মধ্যে থাকতে হয়েছে।
মঙ্গলবার তাদের বিয়ের বিরুদ্ধে জাপানে বিক্ষোভও হয়েছে।
এদিন এক সংবাদ সম্মেলনে মাকো জানান, তার বিয়ে যদি জনগণের জন্য কোনো ধরনের সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়, তবে তিনি ‘দুঃখপ্রকাশ করছেন’।
“সমস্যা সৃষ্টির জন্য আমি খুবই দুঃখিত, আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ যারা আমাকে সবসময় সমর্থন দিয়ে গেছেন। আমার কাছে কিই হচ্ছে এমন একজন, যার জায়গায় অন্য কাউকে রাখা যায় না। বিয়ে আমাদের জন্য জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছিল,” মাকো এমনটাই বলেছেন বলে জানিয়েছে এনএইচকে।
“আমি মাকোকে ভালোবাসি। আমরা একটাই জীবন পাই, সে জীবনটা যেন আমরা ভালোবাসার কারও সঙ্গেই কাটাতে পারি, তাই চাই আমি,” বলেন কুমুরো।
কিয়োডোর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজকুমারী মাকো মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সকাল ১০টার দিকে বিয়ে নিবন্ধনের জন্য টোকিওর বাসা থেকে বের হন; এসময় বেশ কয়েকবারই তিনি তার বাবা ক্রাউন প্রিন্স ফুমিহিতো ও ক্রাউন প্রিন্সেস কিকোকে মাথা নুয়ে সম্মান জানান। বাড়ি থেকে বের হওয়ার আগে তিনি ছোটবোনকে জড়িয়ে ধরেছিলেন বলেও জানিয়েছে সংবাদমাধ্যমটি।
গত কয়েক বছর ধরেই স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো মাকো ও কুমুরোর নামে একাধিক সংবাদ প্রকাশ করে এই যুগলকে নাজেহাল করে ছেড়েছিল, যে কারণে রাজকুমারীকে তীব্র মানসিক অবসাদে ভুগতে হয়েছে বলেও আগে ইমপেরিয়াল হাউজহোল্ড এজেন্সি (আইএইচএ) জানিয়েছিল।
মঙ্গলবার জাপানের একটি পার্কে মাকো-কুমুরোর বিয়ের বিরুদ্ধে হওয়া বিক্ষোভে অনেককে কুমুরোর পরিবারে বিশেষ করে তার মা’র অর্থনৈতিক ইস্যু নিয়ে স্লোগান দিতে দেখা গেছে।
বিয়ের তিনদিন আগে ৩০তম জন্মদিন পালন করা মাকো জাপানের সম্রাট নারুহিতোর ভাইঝি।
টোকিওর ইন্টারন্যাশনাল ক্রিশ্চিয়ান ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় ২০১২ সালে কুমুরোর সঙ্গে পরিচয় হয় তার; এর ৫ বছর পর দুজন বাগদান সারেন।
এই যুগল প্রথমে ২০১৮ সালেই বিয়ে সারার পরিকল্পনা করেছিলেন, কিন্তু পরে তা পিছিয়ে যায়।
কুমুরোর মা তীব্র অর্থনৈতিক সংকটে ভুগছেন; তিনি তার একসময়ের বাগদত্তার কাছ থেকে ঋণ নিয়েও তা শোধ দিতে পারেননি-এ কারণেই মাকো ও কুমুরোর বিয়ে পিছিয়ে গেছে বলে স্থানীয় গণমাধ্যমে গুঞ্জন শুরু হয়।
পরে রাজপ্রাসাদ এক বিবৃতিতে জানায়, বিয়ে পেছানোর সঙ্গে কুমুরোর মায়ের অর্থনৈতিক সংকটের কোনো যোগসূত্র নেই।
অবশ্য মাকো’র বাবা ফুমিহিতো ‘রাজকুমারীর বিয়ের আগেই অর্থ সংক্রান্ত বিষয়টির মীমাংসা হওয়া দরকার’ বলে মন্তব্য করেছিলেন।