কূটনৈতিক সংকট: পশ্চিমা মিত্রদের ‘সুর বদল’, পিছু হটেছে তুরস্কও

তুরস্কে বিচারাধীন এক ব্যবসায়ীর মুক্তি দাবি করায় ক্ষুব্ধ আঙ্কারা যুক্তরাষ্ট্রসহ ১০টি দেশের রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কারের যে হুমকি দিয়েছিল তা এড়াতে সেসব দেশের দূতাবাসগুলো নতুন এক বিবৃতিতে বলেছে, তারা অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার কূটনৈতিক কনভেনশন মেনে চলে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Oct 2021, 08:20 AM
Updated : 26 Oct 2021, 08:20 AM

তাদের এই ‘সুর বদলের’ পর সোমবার থেকে তুরস্ক ও তাদের পশ্চিমা মিত্রদের মধ্যকার কূটনৈতিক উত্তেজনাও অনেকটাই থিতিয়ে এসেছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

গত সপ্তাহে তুরস্কে নিয়োজিত ১০ দেশের রাষ্ট্রদূত তুর্কি ব্যবসায়ী ও দাতা ওসমান কাভালার মুক্তি দাবি করে বিবৃতি দিয়েছিলেন; এর প্রতিক্রিয়ায় আঙ্কারা প্রথমে ওই রাষ্ট্রদূতদের ডেকে পাঠিয়ে বিবৃতিটিকে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ বলে উল্লেখ করে।

শনিবার তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়িপ এরদোয়ান জানান, তিনি ওই ১০ দেশের রাষ্ট্রদূতকে ‘তুরস্কে অগ্রহণযোগ্য ব্যক্তি’ (পার্সন নন গ্রাটা) ঘোষণা করতে পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে নির্দেশ দিয়েছেন।

আঙ্কারা শেষ পর্যন্ত ওই নির্দেশ বাস্তবায়ন করলে তুরস্ক ও পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যকার কূটনৈতিক উত্তেজনা কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে তীব্র হবে বলে আশঙ্কা ছিল পর্যবেক্ষকদের।

পরে সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে এরদোয়ান জানান, রাষ্ট্রদূতরা তাদের আগের বক্তব্য থেকে ‘পিছু হটেছেন’, তাদেরকে ভবিষ্যতে আরও সতর্ক হতে হবে।

“সংকট সৃষ্টি করা কখনোই আমাদের উদ্দেশ্য নয়, আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে আমাদের দেশের সার্বভৌমত্ব, মর্যাদা, আইন ও অধিকারের সুরক্ষা দেওয়া,” মন্ত্রিসভার বৈঠকে সভাপতিত্ব করার পর সংবাদ সম্মেলনে বলেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট।

টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এই ভাষণে তিনি আরও বলেন, “আজ ওই দূতাবাসগুলো নতুন একটি বিবৃতি দিয়েছে। আমাদের দেশ ও জাতির নামে অপবাদ দেওয়া থেকে তারা পিছিয়ে এসেছে। আমার বিশ্বাস এই রাষ্ট্রদূতরা তুরস্কের সার্বভৌম অধিকার সংশ্লিষ্ট কোনো কিছু নিয়ে বিবৃতি দেওয়ার ক্ষেত্রে আরও সতর্ক হবেন।”

কণ্ঠ চড়া থাকলেও সোমবার এরদোয়ানের মন্তব্যে উত্তেজনা প্রশমিত করার চেষ্টার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে, যেখানে শনিবার দেওয়া বক্তব্যে তিনি ১০ রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কারের হুমকি দিয়েছিলেন।

যুক্তরাষ্ট্রসহ ওই ১০ দেশের রাষ্ট্রদূতরা গত সপ্তাহে তুর্কি যে ব্যবসায়ী ও দাতার মুক্তি দাবি করেছিলেন,এরদোয়ানের সরকার সেই ওসমান কাভালাকে ২০১৩ সালে তুরস্কজুড়ে বিক্ষোভে অর্থায়ন ও ২০১৬ সালের ব্যর্থ অভ্যুত্থানচেষ্টায় জড়িত থাকার দায়ে চার বছর ধরে আটকে রেখেছে।

কাভালা তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি অন্য যে দেশের দূতরা তুর্কি এ ব্যবসায়ীর মুক্তি চেয়েছেন, তারা হচ্ছে- জার্মানি, ফ্রান্স, কানাডা, নেদারল্যান্ডস, নিউ জিল্যান্ড, সুইডেন, ডেনমার্ক ও ফিনল্যান্ড।

তাদের বিবৃতির পরপরই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখায় আঙ্কারা। বলে, এই ১০টি দেশ তুরস্কের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে।

সোমবার স্থানীয় সময় বিকালের দিকে এরদোয়ান মন্ত্রিসভার যে বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন, সেখানেই রাষ্ট্রদূতদের বহিষ্কারাদেশ চূড়ান্ত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল; তেমনটা ঘটলে এরদোয়ানের ক্ষমতায় থাকা ১৯ বছরের মধ্যে পশ্চিমের সঙ্গে তুরস্কের সম্পর্কের ফাটল এবারই সবচেয়ে বড় আকার নিত।

এর মধ্যেই সোমবার তুরস্কে অবস্থিত বেশ কয়েকটি দেশের দূতাবাস সংক্ষিপ্ত একটি বিবৃতি পাঠায়।

“যুক্তরাষ্ট্র উল্লেখ করতে চায় যে তারা কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভিয়েনা কনভেনশনের ধারা ৪১ মেনে চলে,” টুইটারে দেওয়া বিবৃতিতে বলে তুরস্কের মার্কিন দূতাবাস।

অন্য কয়েকটি দেশের দূতাবাসও প্রায় একই ধরনের বিবৃতি দেয়, কেউ কেউ যুক্তরাষ্ট্রের বিবৃতিটাই রি-টুইট করে।

যুক্তরাষ্ট্রের এ বিবৃতি সম্বন্ধে তুরস্কের ভাষ্য হচ্ছে, মার্কিন দূতাবাস ভিয়েনা কনভেনশন মেনে চলার ‘নিশ্চয়তা দিয়েছে’।

এ ভাষ্যকে অনেকে ‘যুক্তরাষ্ট্র সামনের দিনে কনভেনশনে দেওয়া প্রতিশ্রুতি মেনে চলবে’- এমনটা পড়তে পারেন বলে জানিয়েছেন পর্যবেক্ষকরা।