‘বিষাক্ত আংটি’ দিয়ে বাদশাহ আব্দুল্লাহকে খুন করতে চেয়েছিলেন সৌদি যুবরাজ!

সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ করলেন দেশটির সাবেক শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তা সাদ আল-জাবরি। বিন সালমান ২০১৪ সালে ‘বিষাক্ত আংটি' ব্যবহার করে তৎকালীন বাদশাহ আবদুল্লাহকে খুন করতে চেয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Oct 2021, 05:29 PM
Updated : 25 Oct 2021, 05:54 PM

আমেরিকান সম্প্রচারমাধ্যম সিবিএস- এর ‘সিক্সটি মিনিটস’ প্রোগ্রামে এক সাক্ষাৎকারে সাদ আল-জাবরি বলেন, তিনি এমন একটি ভিডিও’র কথা জানেন, যেখানে বাদশাহ আবদুল্লাহকে চাইলেই খুন করতে পারেন বলে বড়াই করেছিলেন বিন সালমান।

ওই সময় সালমান বলেছিলেন, তার কাছে রাশিয়ার এমন একটি বিষাক্ত আংটি আছে, যা দিয়ে করমর্দন করেই সৌদি বাদশাহ আব্দুল্লাহকে খুন করা যায়। বাবার জন্য সৌদি আরবের সিংহাসনে আরোহণের পথ পরিষ্কার করতেই তিনি এই খুন করতে চান বলে ২০১৪ সালে চাচাতো ভাই বিন নায়েফকে (তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী) জানিয়েছিলেন বিন সালমান।

সাক্ষাৎকারে সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা সাদ আল-জাবরি বলেছেন এমন কথাই। বিবিসি জানায়, সিংহাসনের উত্তরাধিকার নিয়ে তখন সৌদি শাসক পরিবারের ভেতরে উত্তেজনা চলছিল।

জাবরির কথায়, মোহাম্মদ বিন নায়েফকে তখন বিন সালমান বলেছিলেন, “আমি বাদশাহ আব্দুল্লাহকে হত্যা করতে চাই। রাশিয়া থেকে একটি বিষাক্ত আংটি পেয়েছি। তার সঙ্গে শুধু করমর্দন করলেই যথেষ্ট। তিনি শেষ হয়ে যাবেন।”

জাবরি বলেন “তিনি (বিন সালমান) বড়াই করেও এটি বলতে পারেন। তবে তিনি এটি বলেছেন এবং আমরা এ কথাকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছিলাম।”

তিনি জানান, “বৈঠকটি রাজদরবারে গোপনীয়তার সঙ্গে হয়েছিল। তবে গোপনে বৈঠকটি ভিডিও করা হয় এবং ভিডিও রেকর্ডিংয়ের দুইটি কপি কোথায় আছে তা তিনি জানেন।”

চারবছর আগেই সৌদি আরবের শাসনক্ষমতায় আসা যুবরাজ সালমান সম্পর্কে জাবরি বলেন, দেশের ডি ফ্যাক্টো শাসক এবং বাদশাহ সালমানের ছেলে “মধ্যপ্রাচ্যে অসীম সম্পদের অধিকারী। তিনি মানসিকভাবে অসুস্থ, খুনি, নিজ দেশের জনগণ, আমেরিকা এবং সারা বিশ্বের জন্যই তিনি হুমকি।”

২০১৫ সালে ৯০ বছর বয়সে মারা যান সৌদি বাদশাহ আবদুল্লাহ।তার সৎ ভাই এবং মোহাম্মদ বিন সালমানের বাবা সালমান বিন আব্দুল আজিজ তার স্থলাভিষিক্ত হয়েছিলেন।

মোহাম্মদ বিন নায়েফকে তখন ক্রাউন প্রিন্স করেছিলেন বাদশাহ সালমান। এরপর ২০১৭ সালে বিন নায়েফের জায়গায় ক্রাউন প্রিন্স হিসাবে স্থলাভিষিক্ত হন মোহাম্মদ বিন সালমান।

বিন নায়েফ তখন তার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদও খোয়ান এবং গৃহবন্দি হন বলে শোনা যায়। এরপর গতবছর কয়েকটি অভিযোগে তিনি আটকও হন। বিবিসি জানায়, নায়েফ উৎখাত হওয়ার পর সাদ আল-জাবরি কানাডায় পালিয়ে গিয়েছিলেন।

সৌদি আরব সরকার জাবরিকে নিন্দিত এক সাবেক সরকারি কর্মকর্তা আখ্যা দিয়েছে এবং তার কথা বাড়িয়ে বলার ইতিহাস আছে বলেও জানিয়েছে।

তবে জাবরি সৌদি ‍যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের ‍বিরুদ্ধে তাকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগও করেছেন। সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যে একটি গোয়েন্দা প্রতিষ্ঠানে তার এক বন্ধু তাকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছিলেন যে, ২০১৮ সালের অক্টোবরে তাকে (জাবরি) খুন করতে মোহাম্মদ বিন সালমান একটি হিট টিম পাঠাচ্ছেন।

সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশুগজি তুরস্কে ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটে সৌদি আরবের এজেন্টদের হাতে খুন হওয়ার কয়েকদিন পর জাবরি এই সতর্কবার্তা পান।

জাবরির অভিযোগ, ছয় সদস্যের একটি দল কানাডার অটোয়া বিমানবন্দরে নেমেছিল। কিন্তু তাদের কাছে ডিএনএ বিশ্লেষণের সন্দেহজনক কিছু যন্ত্রপাতি থাকার কারণে কাস্টমস কর্মকর্তারা তাদের ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছিলেন।